সুরভি বিবাহিতা। মাত্র চার বছর বয়সের একটি ছেলে।
স্বামী সরকারী চাকুরি করেন। নতুন মডেলের গাড়ী চালান। রোলেক্স ঘড়িতে সময় দেখেন। বেশ কাটছে জীবন।
সুরভি শিক্ষিতা, ফিলসোফিতে এম এ করেছে। দেখতেও খুব মার্জিতা। তাঁর চুলের রঙ আর শৈলীতে পশ্চিমা ধাঁচ। বিদেশী স্টাইলের হেয়ার কাট। একেবারে আধুনিক, বব কাট বা লেয়ার কাটের মতো। মাঝে মাঝে চুলে ছোট ছোট কার্ল করে। কখনো বা স্ট্রেটেনিং করে স্টাইলিশ লুক আনে। ঘন ঘন স্টাইলিশ পার্লারে যায়।
চলনে বলনে কথা বার্তায় বেশ ঝটপট। মিষ্টি ও সাবলীল ভাষায় কথা বলে। যে কারোরই মনে ধরার মত কিন্তু অফিসে গিয়ে ৫-৯টা কাজ করতে নারাজ। মা যদি কাজ করে সন্তানের নাকি কষ্ট হয়।...
Posted On 17 Aug, 2024
ভেনু গোপাল ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠছিল।
তার মন ভারী, চোখে ক্লান্তির ছাপ। কাঁধে একটি ব্যাগ। কাপড়-চোপড় আর কাগজ পত্রে ঠাসা। এম ভি সুন্দরবন-১৬ নামের লঞ্চে করে বরিশাল থেকে সদরঘাটে পৌঁছে সোজা রিকশায় চড়ে বসে। গন্তব্য বংশালের এই বাড়িটি। তখন সকাল প্রায় আটটা বাজে।
সেপ্টেম্বরের এই শহরটা যেন প্রভাতের কোমল আলোয় ঢাকা মুগ্ধ মেঘের আঁচলে। নির্জন রাস্তায় বাদল দিনের গন্ধে ভাসছে বাতাস। বৃক্ষরাজির পাতায় ঝরে পড়া শিশিরের স্পর্শ, মৃদুমন্দ হাওয়ায় কাঁপছে পথের ধূলিকণা। ভেনু গোপালের রিক্সা এগিয়ে চলছে বুড়ি গঙ্গার পাশ দিয়ে নির্জন পথ ধরে। প্যাডেলের স্নিগ্ধ ঘূর্ণনের সাথে চেনের মৃদু কাঁচা শব্দ, চাকার হালকা গড় গড় আওয়াজ, এবং...
Posted On 17 Aug, 2024
যোগেন মিত্তির খুব কৃপন। একেবারে হাড় কিপটে।
পুরনো ঢাকার কোর্ট পাড়ায় তার নিত্য আসা-যাওয়া। কোর্ট কাচারিতে কেরানীর কাজ। অল্প বেতন। কোন রকমে সংসারটা চলে। সংসার বলতে দুজন। থাকে রামপুরায় বস্তি সংলগ্ন ঘিঞ্জি এলাকায় মাছির উৎপাত আর মিউনিসিপ্যালিটির নর্দমা ফেলার জায়গার একটু দুরে। নর্দমার পাশ দিয়ে বাসায় যেতে হয়। রুমাল দিয়ে নাকটা চেপে ধরে দম বন্ধ করে তর তর করে জায়গাটা পাড় হয় প্রতিদিন। তার পরেও গন্ধ পায়। মাঝে মধ্যে ওয়াক ওয়াক করে বমির ভাব করে। তাও জায়গাটা ছাড়বে না। স্ত্রী সুরবালা এই জায়গা ছেড়ে পুরান ঢাকায় থাকতে চায়। স্বামীর অফিসের কাছাকাছি। পরিচিত অনেকেই নদীর পারে থাকে। কিন্তু যোগেন মিত্তিরের একই...
Posted On 16 Jun, 2024
গঙ্গা খুব অসুস্থ।
গত কয়েক দিন ধরে সারাদিন কিছুই খাচ্ছে না। বড় বড় চোখে যেন দুঃখের সাগর বয়ে যাচ্ছে। গভীর বিষণ্ণতায় ভরা চোখের দুকোন বেয়ে জল পড়ছে। থক থক কালো হয়ে গেছে চোখের পাতাগুলো।
এই কয়েক দিনেই বেশ শুকিয়ে গেছে, দূর্বল হয়ে পড়ছে। হাড়গোড়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আগের মতো আর তেমন শক্তি নেই। কেবল মাটিতে চুপচাপ বসে থাকে, কখনো ঘাড়টা নেতিয়ে শুয়ে থাকে। দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও পায়ে জোর পায় না। তার নিস্তেজ চোখের চাহনিতে যেন এক অনন্ত কষ্ট লুকিয়ে আছে। একসময় যে গাভীটি সবুজ ঘাস খেয়ে খুশিতে লাফিয়ে বেড়াতো, নিজের ছোট্ট বাছুরটিকে নিজের দুধ খাওয়াত, চোখে চোখে রাখত, আজ তার মধ্যে...
Posted On 15 Jun, 2024
অতনুরা তিন ভাই। অনিরুদ্ধ, অভিরুপ এবং অতনু।
অদ্রিজা সকলের প্রিয় বোন। অনিরুদ্ধের ছোট। বিয়ে করে স্বামী সংসার নিয়ে থাকত ঢাকার এক অভিজাত এলাকায়। স্বামীর মস্ত বড় ব্যাবসা।
`অ` দিয়ে মিল করা নামগুলি দিয়েছে অতনুর দিদা। ছেলেদের নামগুলি পছন্দ হয়েছিল অতনুর মা এবং বাবার। কিন্তু অদ্রিজা নামের মানে বুঝতে পারেননি বলে বাবা প্রথমে বাঁধ সাধেন।
–“এতো কঠিন নাম কেন? এর মানেই বা কী?”
ধমকের সুরে মাথা নাড়িয়ে ফোঁকলা দাঁত কেলিয়ে অতনুর দিদা বেশ কায়দা করে ধমক দিয়ে উঠলেন-"বাংলা শব্দের মানেই মগজে যায় না ক্যা? জানবা কেনে, ধর্ম করম তো আর নাই? পার্বতীর কথা শুইনা নাই। ধর্মে পড়স নাই, রাজা হিমাবতর কন্যা আছিল পার্বতী।...
Posted On 06 Jun, 2024
মিসেস এলেনর একাই থাকেন বাড়িটিতে। কয়েক যুগ আগেই স্বামী মারা যান ভিয়েতনামের যুদ্ধে।
এখন বয়সের ভারে ন্যুজ। প্রতিটি লাইন তার মুখের উপর খোদাই করে একটি অজানা গল্প, একটি যাত্রা পথ। তার চোখ, প্রাচীন কূপের মতো, যেন এক প্রাঞ্জল গভীরতায় অতীতের মধুর স্মৃতিগুলোকে খুঁজে ফিরে। আনন্দের উচ্ছলতায় কখনো জ্বলজ্বল করে উঠে। আবার ঠিক কিয়ৎ পরেই কোন এক বিষাদের জ্বালা দুচোখের পাতায় কান্নার পরশ বুলিয়ে যায়, জেগে উঠে বুদবুদ জলের ফোটা, গাল বেয়ে পড়ে চিবুকে। বুঝতে পারে না। চোখের দুপাশের চামড়া নেতিয়ে গেছে। প্রচণ্ড ঝড়ে হেলে পড়া দূর্বা ঘাসের মতো। আগের মতো তেমন আর গায়ে শক্তি নেই। সোফায় সোজাসুজি হয়ে বসতে পারে...
Posted On 13 May, 2024
কুমিল্লার টমছম ব্রীজ থেকে পূর্ব দিকের সোজা রাস্তাটি দিয়ে মিনিট দশেক হেঁটে গেলে চোখে পড়বে ডান দিকে একটি খোলা জায়গা। নর্দমায় ভরা এক পাশ। তার ঠিক উল্টোদিকে চোখে পড়বে বেশ কয়েকটি পাঁচতলা বিশিষ্ট পুরনো ধাচের মলিন ফাঙ্গাসে ভরা ফ্লাট বাড়ি। দেয়ালে নানা ধরনের আঁকি-ঝুকি, গনতন্ত্রের বুলি আওরানো রাজনৈতিক দলের স্লোগান। এলাকাটি দেখলে কারো মনে হবেনা কোন ভদ্দরলোকের পাড়া হবে। চারিদিকে বেশ নোংরা, জরাজীর্ন পরিবেশ। বিক্ষিপ্ত ইট আর দূর্বল কংক্রিট দিয়ে নির্মিত ফ্লাটগুলি সময়ের দাগ বহন করে ন্যুজভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আশে-পাশে বিক্ষিপ্তভাবে নান ধরনের ঘর বাড়ি থাকলেও খালি জায়গাটির লাগোয়া এই পাশটিতে পর পর তিনটি ফ্লাট বাড়ি। প্রধান সড়ক থেকে যে চিকন...
Posted On 01 Apr, 2024
বিষ্ণুপুর গ্রামটি খুব ছোট। মাত্র দুইশত পরিবারের বসবাস।
পাশের গ্রামটি খন্জনাপুর। কুমিল্লার এক অজ পাড়াগ্রাম। একসময় যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিলো গরুর গাড়ী। দুর দুরান্তে যাওয়ার জন্য উত্তম ব্যাবস্থা ছিলো নৌকা। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কৃশকায় ডাকাতিয়া নদীটি। সে নদীটির সাথে যুক্ত একটি খাল চলে যায় খঞ্জনাপুর গ্রামের জমিদার বাড়ীর বড়ো পুকুরের এক পাশ দিয়ে। পুকুরটি বিশালাকার আর চারিদিকে অসংখ্য তালগাছ ছিলো বলে এলাকায় তালদিঘী নামে বেশ সুপরিচিত।
জমিদার পালবাবুর ছিলো বেশ হাঁকডাক। সজ্জন মানুষ হিসেবে আশে-পাশের গ্রামে তার বেশ সুনাম ছিলো। তিনিই গ্রাম বাসীর সুবিধার জন্য পুকুরের পাশের খাল দিয়ে নৌকায় চলাচলের জন্য বেশ সুন্দর একটা ব্যবস্থা করেছিলেন। বজরা থেকে...
Posted On 01 Apr, 2024
চক্রবর্তীদের বাড়ির কুকুরটাকে বাড়ীর ছোট মেয়ে নাতিশা পন্ডিত বলে ডাকতে শুরু করলে, বাবা নিষেধ করলেন। কারন ওদের এলাকার ভট্টাচার্যদের বাড়িটাকে সবাই পন্ডিত বাড়ি বলতো। ওই বাড়িতেই জন্মেছিলেন অত্র এলাকার কৃতী সন্তান শ্যামাপদ বিদ্যালঙ্কার। কোলকাতায় থাকলেও মাঝে মধ্যে বাড়ি আসতেন। সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেন। নাতিশাদের পরিবারের সঙ্গে তাদের পারিবারিক ভাব ছিলো খুব। পরে তার নাম রাখা হয় ভুলু। ভুলু ঠিক মানুষের মতোই সব কিছুই বুঝতো, একারনেই তাকে পন্ডিত বলা। তবে নিজের গ্রামের বাড়ীতে আসার আগ পর্যন্ত ভুলুকে পন্ডিত বলেই সবাই ডাকতো। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন আগেই অসুস্থ পন্ডিতকে নিয়েই নাতিশারা গ্রামের বাড়ীতে চলে আসে।
গ্রামের বাড়িতে আসার পর হঠাৎএকদিন দেখা...
Posted On 15 Mar, 2024