এই বানপ্রস্থে এসে কষতে থাকি জীবনের সরল অংক
যোগ-বিয়োগের মাঝে খুঁজতে থাকি অতীত আর বর্তমানকে
সফলতা, প্রাপ্তি আর পাওয়া না পাওয়ার হিসাব
কোথাও কোন গরমিল নেই, সবকিছুতেই সিদ্ধিলাভ
অতীতকে বলি-একটু কাছে এসো
ভালো করে দেখি আমার বিজয় মুকুট, একান্ত সিদ্ধি
নবজাতকে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে নির্ভয়ে কেটেছে সময়
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চুসে পান করেছি মায়ের দুধ
মা-মা বলে শব্দের জলসিঁড়িতে সাঁতার কেটেছি কতোরাত
নির্ঘুম আমার মা আদরে টেনেছে কাছে
হামাগুড়ি দিতে শিখেছি, ধীরে ধীরে
তারপর বসা, উঠা -দাঁড়ানো, কারো হাত না ধরেই
এইতো আমার সফলতা, এক নবজাতকের সিদ্ধি।
যখন শিশু ছিলাম
হাঁটতে শিখেছি, দৌড়-ঝাপে মত্ত, হাতে খড়ি হয়েছে
পড়তে পাড়ি, বলতে পাড়ি বুঝতে পারি
শুনেছি ঠাকুরমা, ঠাকুরদার ঝুলি দাদা-দিদির কাছে
শুনতে শুনতে কখনো ঘুমিয়ে পড়েছি তাদের কোলে
কারো হাত ধরে চলে যাই স্কুলে প্যান্ট-শার্ট পড়ে
মনে পড়ে না কখনো, ভিজিয়েছি প্যান্ট পশ্রাবে
এইতো আমার বড় পাওনা শিশু বয়সের সিদ্ধি লাভ।
আমার শৈশব কেটেছে আনন্দের গন্ডোলায়
পাখিদের সাথে, বাতাসের সাথে আর আকাশের তারাদের সাথে
ঘুড়ি উড়ানো মজাটাই ছিল একটু অন্যরকম
বন্ধুদের সাথে ডাঙ্গগুলি খেলায় স্কুলের মাঠে
বাড়ীতে আসতাম ফিরে একা একা লাল রংএর লজেন্স মুখে পুতে
কখনো বা উদ্যাম সাঁতারে পাশের কোন পুকুরে
কাল বৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ায় আম কুড়োতে
কিংবা বর্ষায় বৃষ্টি শেষে কদম কাছে
বর্ষীতে ধ্যানমগ্ন কখন আসবে মাছ?
পৃথিবীর সব সুখ আছড়িয়ে পড়তো আমার সারা অবয়বে
এইতো আমার সফলতা, আমার শৈশবের সিদ্ধি।
কৈশোর কেটেছে মহা ধুম-ধামে, ব্যাস্ত পড়াশুনায়
বন্ধুদের সাথে গল্পের আসরে, কখনো বা উদাস আকাশের দিকে চেয়ে
পাশের বাড়ীর হরিন চোখা কিশোরীর অবয়বে
খুঁজতো কতো কি উৎপল আনন্দের আহা অস্থির অশ্বেরা!
সকলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ-এমন ভালো ছেলে কোথাও নেই
পেট পুরে খেতাম বলে মায়ের মুখে ধরা দিতো স্বর্গীয় সুখ
কৈশোরের সিদ্ধিলাভ হলো যখন কলেজ পাশ করি প্রথম গ্রেডে
এইতো জীবনের সফলতা, কৈশোরের সিদ্ধিলাভ।
তারপর আস্ত আস্তে কখন যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে বেড় হলাম
ত্রিশ এর কোঠায় এসে শুনলাম নবজাতকের মুখে `বাবা` শব্দটি
সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে চললো আমার ঘর-গেরস্থালী, স্বপ্ন-ভালোবাসা
বয়স বেড়েছে, কাজে তাই ইস্তফা, সন্তানের হলো নতুন ঘর
আমি ধীরে ধীরে হেঁটে চলি আমার ভালোবাসার হাত ধরে
তারও হয়েছে বয়স, পারে না চলতে ঠিক ঠাক
তবু ভরসা পাই, পাশা পাশি থাকি, একসাথে চায়ে চুমুক দিয়ে
চলে যেতাম অতীতের কাছে, কাটতো সময় বেশ দিব্যি
এইতো জীবনের সফলতা, নিভৃত সময়ের সিদ্ধি লাভ।
বর্তমানকে ডেকে বললাম-`একি করলে তুমি`?
তাকেও শেষ পর্যন্ত?
আমি এখন একা, বার্ধক্যে ন্যূজ, বয়স যে হয়েছে
তবে এখনও আমি চলতে পারি কারো হাত না ধরে ঠিক ঠাক তো
একা একা ফিরতে পারি ঘরে,
কোন ভাবনা নেই পথ হারানোর ভয়ে
ঘুমের ঘোরে ভিজতে দেই না কাঁথা, এখনো দিব্যজ্যোতি চোখে
ভালোই আছি এ বয়সে এইতো সিদ্ধি লাভ
এইতো আমার সফলতা, শেষ বয়সের সিদ্ধি।