শৈশব আর কৈশরের শেষ লগ্নে এসে
যৌবনের অনিকেত সময়ের বুকে মাথা রেখে
শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পন করলাম কবিতার কাছে।
নিজকে শব্দায়িত করবো বলে
শব্দের ভিতরে লুকিয়ে থাকা শব্দের কাছে গেলাম
নিজকে সুরাশ্রীত করবো বলে
শব্দের ভিতরে লুকিয়ে থাকা
সুরকে জাগিয় তোলার অদম্য ইচছায়
সমুদ্রের ঢেউয়ের কাছে গেলাম
আমার অন্তর্চেতনায় ভাসতে লাগলো আকাশের খন্ড মেঘমালা
কি গভীর নিবিরতা ভর করতো চোখের পাতায়।
আমাকে জাগাবো বলে
সমাজকে শৃংখলমুক্ত করবো বলে
বিশ্বকে বিশ্বায়নের কালো থাবা থেকে মুক্ত করবো বলে
সুরাশ্রীত শব্দের কথামালা দিয়ে সাঁজালাম
এক নতুন পৃথিবীর কবিতা।
একটি কবিতাই পারে পৃথিবীকে সার্থকভাবে মানবায়িত করতে
কবিতাই পারে মানুষেরা মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা আর দ্রোহের
প্রকৃত বাহন হতে
কবিতাই পারে মানুষের ভিতরের সত্যকে
প্রকৃতির সত্যের মধ্যে বন্ধন ঘটাতে
কারন কবিতার শব্দ হয় অলকানন্দার জলে ভাসা
রাজহংসীর মতো চঞ্চল
হেমন্তের শিশির ধোয়া দূর্বা ঘাসের মতো সতেজ
সমুদ্রের গর্জনের মতো দূর্বার
অনাদিক্রান্তি গিরিশৃঙ্গের মতো বলিষ্ঠ
কিশোরির চোখে আঁকা কাজলের মতো প্রাঞ্জল।
অতঃপর একদিন যৌবনের শেষ প্রান্তে এসে
ডাক শুনলাম সর্বনাশা এক ঝড়ের
সমুদ্রের ওপার থেকে ভেসে আসা এক রাক্ষুসী ঝড়
আমার সাঁজানো পৃথিবী থেমে গেলো
চোখের সামনে মাড়িয়ে দিয়ে গেলো
আমার শৈশব আর কৈশরের স্বপ্নগুলো
কোথায় হারিয়ে গেলো আমার
পৌষসংক্রান্তির দিনে মেলায় যাওয়ার উৎশ্বাস?
বৈশাখের প্রথমদিনে ইলিশের পান্তাভাতে মুখ ডুবানো,
মায়ের সাথে বাঁশঝাড়ে পাতা কুড়ানোর দিনগুলো,
আমার চেনা ঘর, গ্রাম, শহর, আমার একান্ত পৃথিবী,
কোথায় হাড়িয়ে গেলো শুকনো পাতার মতো।
আমি ভেসে বেড়ালাম শূন্য থেকে মহাশূন্যে
হারিয়ে গেলো আমার প্রথম যৌবনের সুরগুলো।
আমার মা, ভাই, বোন, ঘর গেরস্থালী
সব যেন কেমন করে ওলোট পালোট হয়ে গেলো।
আমি যেন ভেসে চললাম এক অজানার দিকে
কুল কিনারাহীন সমুদ্রের লোনাজলে জোয়ারের ডাকে
এইভাবেই ভেসে চললাম অনেক কাল
সুরহীন, শব্দহীন আমি অকুলের পথে
ভূলে গেলাম আমার অতীত, স্বপ্ন, সাঁজানো ভবিষৎ
সে যে আমার শব্দের ভিতরে শব্দের জলসিড়ি আঁকার কথা
গ্রামের পুকুরে উদ্যাম সাঁতারের দিনগুলো
এই সমাজকে-বিশ্বকে মানবায়িত করার স্বপ্নগুলো
একে একে ঝরে গেলে শীতের বাতাসে
আমাকে আজ কোন কিছুই উদ্বেল করে না।
তবে কেন বার বার শুনতে পাচ্ছি
কোন অজানা থেকে ভেসে আসা শব্দের সুরালয়
আকাশের কোন থেকে নেমে আসছে পূর্নিমার চাঁদ
হাত বাড়িয়ে ডাকছে পৃথিবী
আমাদেরকে নিয়ে যাও তোমার পৃথিবীতে
শব্দের গাঁথুনিতে আমাদেরকে মানবায়িত করো।