আমি আবারো সংগ্রামী হবো
আমার কণ্ঠে আবারও উচ্চারিত হবে প্রতিবাদের গর্জন।
জাগ্রত বুকের গভীরে জ্বলবে আগুনের অনল,
যারা এই ঘর পুড়িয়ে ছারখার করেছে, তাদের জন্য রইলো আমার অভিশাপ।
যারা চুরি করেছে বাংলার সোনালী স্বপ্ন,
তাদের চোখে পড়বে আমার এই রক্ত-লাল ক্রোধ,
যারা শকুনের মতো আমাদের আশা ও বেঁচে থাকার নির্ভরতাকে কুরে কুরে খায়,
তাদের জন্য রেখে যাচ্ছি এক অগ্নিকুণ্ড।
পৃথিবীর সমস্ত অভিধানের শব্দ দিয়ে রচিত হলো
এক কঠোর অভিশাপের ভাষা, আমার প্রতিবাদের কাব্য,
“তোদের বিচার এই বাংলাতেই হবে - পালাবি কোথায়?”
আমি আবারো সংগ্রামী হবো,
আমি আরেকবার গর্জে উঠবো।
রক্তিম সূর্যকে আবারো গ্রহণ করবো,
এই বাংলার মাটির জন্য, স্বাধীনতার জন্য
আমি, তুমি, আমরা সবাই আবারো হবো ঐক্যবদ্ধ।
মব জাস্টিসের নামে যারা অন্যায়ভাবে জীবন কেড়েছে
তাদের জন্য রইলো আমাদের দুর্বার প্রতিজ্ঞা
আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মুক্তি,
এই বুকে বাঁচবে অনন্তকাল, কুলাঙ্গারদের জন্য এক অদম্য ঘৃণা।
আমার কণ্ঠে আবারও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে -
বাংলা আমার ভালোবাসা, মাটির প্রতিটি কণা আমার গর্ব
যতদিন প্রাণে আছে স্বাধীনতার অগ্নিশিখা,
ততদিন রুখে দাঁড়াবো প্রতিটি ষড়যন্ত্র,
আমি আবারো সংগ্রামী হবো, আরেকবার হবো মুক্তিযোদ্ধা
আমি আবারো সংগ্রামী হবো,
আমি আরেকবার গর্জে উঠবো।
যতবারই নেমে আসে অন্ধকারের ঘন ছায়া,
ততবারই এই বুক থেকে জ্বলে উঠবে আগুনের শিখা
এই মাটির বুকে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন আমার পিতা, প্র-পিতামহ
এখানেই জন্মেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, যার কলমে ফুটে উঠেছিল মানবতার গান
এখানেই ছিলেন কাজী নজরুল, তাঁর বিদ্রোহী সুরে বাজতো সাহসের কাব্য।
লালনের গানে সাধারণ মানুষ খুঁজে পেয়েছিল বাঁচার মন্ত্র
এই মাটিতেই চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন বাংলার প্রকৃতি আর মানুষের মানসকন্যা
বনলতা সেনের কবি-স্রষ্টা জীবনানন্দ দাশ,
এখানেই কালের সাক্ষী হয়ে আছেন আধ্যাত্মিক সাধক শাহজালাল,
বিজয়ের এই মাটিতে শুয়ে আছেন আমাদের স্বাধীনতার বীর সন্তানরা।
তবুও কীভাবে আজ সেই মাটিতে ভেসে বেড়ায় দুর্বৃত্তের দম্ভ?
যাদের হাতে পুড়ে যায় জাতির পিতার স্মৃতি,
মুছে ফেলার চেষ্টা চলে তাঁর ইতিহাসের প্রতিটি চিহ্ন
খাবলে খায় মানুষের নান্দনিক চেতনাকে
আমরা কীভাবে সইবো এই অপমান, এই প্রতারণা?
আমি আবারো সংগ্রামী হবো,
আমি আরেকবার গর্জে উঠবো।
মহাসংকটে এই মাটির গভীর থেকে আবার তুলে আনতে হবে রক্তাক্ত স্মৃতি,
আমাদের সংগ্রামের গৌরব,
অতীতের বাঁধভাঙা জোয়ারের উচ্ছ্বাস আর বীরত্বের চেতনাকে
তাই আমি আজ আবারও প্রতিজ্ঞা করছি—
আমি হবো সেই বিদ্রোহী, নজরুলের কবিতার বিদ্রোহের মতো,
আমি হবো ঐ রবীন্দ্রনাথের শান্তি, কিন্তু প্রয়োজন হলে হিংস্রও হতে জানি
আমি হবো সেই গুলিবিদ্ধ শহীদের অমর বাণী,
এই বুক, এই মাটি—এই বাংলার আকাশে উড়বে মুক্তির বিজয়ের নিশান,
আমরা জেগে উঠবো, আমরা এগিয়ে যাবো, আমরা হবো অজেয় ও অনন্য,
নতুন সূর্যের আলোয় এই মাটিতে রাখবো এক অনড় পদচিহ্ন।
আমি আবারো সংগ্রামী হবো,
আমি আরেকবার গর্জে উঠবো, হবো মুক্তিযোদ্ধা,
বাংলার মহত্তর ধারা, আমাদের সংগ্রামের গান এই মাটিতে অম্লান থাকবে,
কোনো অপশক্তি আর কোনোদিন এখানে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না,
কারণ আমরা আছি, আমরা থাকবো—বাংলার এই গৌরবময় প্রহরী হয়ে।
লন্ডন, ৩১শে অক্টোবর