মস্কোর বরফবিথী ও একজন সুতপা: পর্ব-৮


Author: ড. পল্টু দত্ত

Summary:

অপূর্ব জীবনে এমন ঘটনার সম্মুখীন আগে কখনো হয়নি। আজ অপ্রত্যাশিত ভাবেই ঘটে গেল। অবশ্য এর আগেও হয়তো এমন

ঘটনা ঘটে ছিল কিন্তু গভীর উপলব্ধি করতে পারেনি।

অপূর্ব যাওয়ার জন্য তৈরী, রুস্তভ যাবে, সাথে তুহিনও যাবে।

তাই সকাল থেকে জিনিসপত্র গোছগাছ করে রেখেছিল। এর আগের দিন সুতপার একটি চিঠি পেয়েছিল অপূর্ব। জানিয়েছিল আজ সন্ধ্যা ছয়টায় সুতপা ফোন করবে। যেহেতু ট্রেনে যাচ্ছে তাই তুহিনকে টেলিফোনে কথা বলে যাওয়ার কথাটা জানালো। ৬টা থেকেই টেলিফোন বুথে গিয়ে সুতপার টেলিফোনের জন্য অপেক্ষা করছিল। তুহিনও ছিল অপূর্বর সাথে। এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও আর কোন টেলিফোন আসছে না। এখন প্রায় ৭টা বেজে গেল।

তুহিন এখন কাচু-মাচু করতে শুরু করলো। -দোস্ত, চল এখন যাই। ও আর ফোন করবে না। পরে আবার ট্রেনের টিকেট পেতে ঝামেলা হবে।

তুহিনের কথা অপূর্ব ফেলতে পারলো না।

শেষ পর্যন্ত আর অপেক্ষা না করে রুমে ফিরে এসেছিল। আর অপেক্ষা করতেও ভালো লাগছিল না। তাছাড়া অপূর্বর কারো জন্য বেশীক্ষন অপেক্ষা করতে কখনো ভালো লাগতো না। তার উপর রুস্তভ যাওয়ার তাড়া-

সবচেয়ে হতাশাজনক অভিজ্ঞতা হল অপেক্ষা করা। অপেক্ষা যত দীর্ঘ হবে, ততই একঘেয়েমি, হতাশা এবং রাগের মতো নেতিবাচক আবেগ অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি। এই পৃথিবীতে মানুষের অপেক্ষার শেষ নেই। বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নে। দোকানে কোনকিছু কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। স্তালোভায়ায় গিয়ে খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তবে অনেক দেশে আবার এই অপেক্ষার ক্ষেত্রটা অন্যরকম, আরো ব্যাপক, প্রায় সময়ই ধৈর্যহীন ও বিরক্তিকর।।

যেমন আমরা যানজটে অপেক্ষা করছি। বাস ধরতে অপেক্ষা করি। আমরা ট্রেন, বাস এবং বিমানবন্দরে অপেক্ষা করি। আমরা ডাক্তারের অফিসে অপেক্ষা করছি। কোন বীমা অফিসে কিংবা ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলতে অপেক্ষা করি। ছোট্ট শিশু মায়ের ঘুম পাড়ানিয়ার গান শুনার জন্য অপেক্ষায় থাকে। আমরা অপেক্ষা করি, এবং অপেক্ষা করি এবং অপেক্ষা করি। অনেকে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে, বিরক্ত, উদ্বিগ্ন ও রাগান্বিত হয়ে পড়ে।

অপেক্ষার অন্তহীন অনুভূতি তৈরি করতে পারে এমন একটি কারণ হল সময়ের সচেতনতা। এক মিনিটকে সেকেন্ডের মতো বা চব্বিশ ঘণ্টার মতো মনে হতে পারে।

তবে এই অপেক্ষা যখন কোন ভালো লাগার মানুষটির জন্য তখন বিরক্তি নয় বরং ভালোই লাগে। নানা ভাবনার বুদ বুদ মনের জলে আওয়াজ তোলে।

অপুর্বরও ইদানীং তাই লাগে। কেমন কেমন ভালো লাগার ব্যাপার স্যাপার। কারো জন্য অপেক্ষা করার মধ্যেই যেন কেমন একটা সুখ সুখ ভাব।

তবে আজ বেশ অভিমান হলো, সাথে কিছুটা রাগ। মনের ভেতর চিন্তার পাখিগুলো ওলোট-পালোট উড়তে লাগলো-

ও কেন ফোন করলো না? সুতপা ঠিক আছে তো? কোন সমস্যা-কিংবা অসুখ-বিসুখ ইত্যাদি হয়নি তো?

অপূর্ব রণে ভঙ্গ দিয়ে এখন ভাবছেই। বিশেষ করে সুতপার ব্যাপারে। ওর কথা আর কাজ এক। কখনো কথার বরখেলাপ হয় না।

হঠাৎ তুহিনের কথায় যেন ভাবনার তন্দ্রা ভাঙ্গলো-

-ও তোর উপর প্রতিশোধ নিয়েছে-রসিকতার সুর

-না না, ও এমন মেয়ে নয়, কোন দিনও এমনটি ঘটে নি। আর কিসের প্রতিশোধ?

-আরে রাগ করছিস কেন?

-রাগ নারে তুহিন, ভাবনা হচ্ছে।

-ওকে নিয়ে তোর এতো ভাবনা কিসের? এই রকমতো কতোই হয়। কোন কারনে হয়তো আটকা পড়ে গেছে। চল চল আমরা যাই এখন

তুহিনের তাড়া।

অপূর্ব আবার কি যেন মনে করার চেষ্টা করলো-

কিছুদিন আগে সুতপা একটি টেলিগ্রাম দিয়েছিল ফোন করবে বলে।

সেই সময় মস্কোতে এক শহর থেকে অন্য শহরে টেলিফোনে যোগযোগের একমাত্র উপায় ছিল ট্রাংকল করা। বিশেষ করে

হোস্টেলে বসবাসকারীদের জন্য। যাদের কোন ল্যান্ড লাইনের আ্যকসেস নাই। এখনকার মতো মোবাইল ফোনের যুগ ছিলো না সেটা। তবে প্রায় অধিকাংশ বাড়িতেই ল্যান্ড লাইনের প্রচলন ছিলো। টেলিফোন ব্যাবস্থাটা ছিলো খুবই সস্তা। মস্কো শহরে লোকাল কলে কোন চার্জ ছিলো না। সম্পূর্ন ফ্রি।

প্রথম দিকে সুতপা অপূর্বর সাথে টেলিফোনে কথা বলতে চাইলে আগেই একটা টেলিগ্রামে ম্যাসেজ পাঠাতো দিন, সময় এবং পোস্ট অফিস বা টেলিফোন বুথের নাম উল্লখ করে। সে মোতাবেক অপূর্ব ফোনের জন্য অপেক্ষা করতো।

গতবার অপূর্ব ভূলবশতঃ অন্য জায়গায় এক টেলিফোন বুথে বসে ছিল।

এক ঘন্টা, দেড়ঘন্টা বসে আছে কিন্তু ফোন আর আসছে না। অপুর্বর উৎকন্ঠা-ব্যাপার কি?

পরে অপারেটরকে টেলিগ্রাম ম্যাসজটা দেখাতেই সে অবাক হয়ে গেল-

-বাস টেলিফোন সুদানি প্রিজিয়ত, বি দ্রুগম মেস্তে (তোর টেলিফোন তো এখানে আসবেনা, অন্য জায়গায়)

লজ্জায় মুখটা একেবারে লাল হয়ে গেল। মুখ থেকে আর কোন শব্দ বেরুল না-রোদে বেল পাতার মতো হঠাৎ অপূর্ব যেন ফ্যাকাসে

হয়ে গেল।

এক ঝাপটায় ওখান থেকে বেড়িয়ে গেল-পাছে ওর নির্বুদ্ধিতায় অহেতুক কেউ ওর দিকে ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে থাকে।

তবে নিজের বুদ্ধিহীনতায় নিজকে নিজেই বকতে লাগলো

পরদিন ওর আরেকটি টেলিগ্রাম ম্যসেজ অপূর্ব পেয়েছিল।

বেশ রাগ করে বললো

-কাল কেন আসেননি? এই তিনটি শব্দের ম্যাসেজটিতে যেন চৈত্রের ভর দুপুরের তাপদাহ ছিলো।

কারণ অবশ্য আগেই ঠিক করে রেখেছিল অপূর্ব।

-আমি অনেকদিন মস্কোতে ছিলাম না। যেদিন মস্কোতে আসি সেদিনই টেলগ্রামটি পাই। কিন্তু তখন অলরেডি দেরী হয়ে গেছে।-

অপূর্ব একটি চিঠিতে লিখেছিল।

তবে ওর চিঠি পড়ে সুতপা কতোটুকু বিশ্বাস করেছে তা অপূর্বর জানা নেই।

 

সেদিনই ওর বান্ধবী এবং এক সিনিয়র ভাই রুস্তভ থেকে মস্কোতে আসে। ওদের কাছে দেওয়া ওর একটি চিঠি পায় অপুর্ব। চিঠিতে ওর রাগ আর অভিমানের বেশকিছু অক্ষর আর শব্দের গাঁথুনী ছিলো। এক জায়গায় লিখেছে-

-আপনাকে যে টেলিফোনে পাবো না তা কখনোই ভাবতে পারিনা। আপনি আজ টেলিফোনে না আসায় বেশ দুঃখ পেয়েছি।----চিঠি লেখাতো বন্ধ করেই দিয়েছেন, তারপর টেলিফোনেও এলেন না। কেনই বা আসবেন? আমি তো আপনার কেউ নই-ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

চিঠিটি পড়ে অপূর্ব মনে মনে বির বির করলো কিছুক্ষন

-মনে মনে বলতে লাগলো তোমার পরিচয় তুমি জানোনি- সেটা জানি আমি একাই। তোমার কথা ভাবলে কেন যেন আকাশের আদম সুরত এদিক ওদিক হয়ে যায়, মেঘলা আকাশ হয়ে যায় রৌদ্রকরোজ্জ্বল। সে এক ভীষন অন্যরকম লাগা। বাতাসে কারনে অকারনে বসন্তের পরশ পাই, উদাসী মন পেখম মেলে উড়তে চায়-সেটা আমিও বুঝি না। তবে তোমাকে নিয়ে ভাবি, মাঝে মাঝে বড্ডো বেশীই ভাবি। শুধু আমার ভাবনারা তোমার কাছে পৌঁছায় না।

তবে অপূর্ব বুঝতে পারলো সুতপা ইদানীং তাকে নিয়ে বেশ ভাবে। চিন্তিত হয়, উদ্ভিগ্ন হয়। এটাই বুঝি ভালোবাসা।

ভালোবাসার মানুষটির সম্পর্কে চিন্তা করা, বন্ধুদের সাথে তাদের সম্পর্কে কথা বলা কিংবা ফোনে কথা বলা বা চিঠির প্রতিক্ষায় হৃদয় পিটার-প্যাটার করা সবই প্রেমের লক্ষন। সেই ভালোবাসার লোকটিকে দেখে উত্তেজিত হওয়া এবং তাদের চারপাশে থাকতে কেমন যেন মন আনন্দিত হয়।

অপূর্ব ওর চিঠির একটি নাতি দীর্ঘ উত্তর দিয়েছিল। ইনিয়ে বিনিয়ে লিখেছে অনেক কথা।

টেলিফোনে আজ আর কথা হলো না। ভাবতে ভাবতে অপূর্ব আর তুহিন ব্লকে ফিরে এলো।

সব জিনিসপত্র গোছানো। ইউনিভার্সিটির পারমিশন পায়নি বলে ঠিক করেছে ট্রেনে যাবে। কোনভাবে টিকেটটি ম্যানেজ করবে। রাত ৯টার ট্রেন ধরবে বলে পরিকল্পনা। তুহিন চলে গেল আযম ভাইয়ের কাছে কিছু টাকার জন্য। আর অপূর্ব সোজা চার তলায় তার রুমে।

 

রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় দরজায় একটি চিরকুট দেখতে পেল অপূর্ব। তাড়াতাড়ি চিরকুটটি খুললো। লিখেছেন রুস্তভের রহমান

ভাই-

-অপূর্ব, মস্কো এসে শুনলাম তুমি আজ রুস্তভ যাচ্ছো। রুস্তভ যাওয়ার বোধহয় আর প্রয়োজন নেই। আজ সন্ধ্যা ৭টায় ও মস্কো

চলে আসছে। ভ্নুকোভা এয়ারপোর্টে আসবে। আমি যাবো ওকে আনতে। পারলে তুমিও যেও। সুতপা খুশী হবে।

চিরকুটটি পড়ে অপূর্বর সাড়া শরীরে এক ঝড়ো হাওয়া আছড়িয়ে পড়লো। মনের ভেতর ঢেউয়ের উত্তাল মিছিল টের পেল।

সেই মুহুর্তের মনের অবস্থা কাউকে ভাষায় প্রকাশ করা যেন অসম্ভব। এক দৌড়ে তর তর করে নীচে নেমে যাচ্ছিল তুহিনকে খবরটা দেওয়ার জন্য। কিন্তু সিড়িতেই তুহিনকে পেয়ে গেল, হাতে টাকা মুষ্টিবদ্ধ, উপরে উঠছিল।

তাড়াতাড়ি খবরটা দিল।

-বাপরে বাপ, মেঘ না চাইতেই জল। দাঁত বেড় করে গড় গড় করে কথাগুলি ছুড়ে দিল। ফিরে গেল টাকাটা ফেরৎ দিতে।

 

তুহিন আসতেই দুজনেই ছুটল এয়ারপোর্টের দিকে।

-দাঁড়া আমি একটু আইতাছি-এ বলে তুহিন তার রুমের দিকে দোড় দিল।

এক ফ্লোরে থাকে। একেবারে শেষপ্রান্তে।

-চল দোস্ত, আমি রেডি-আবার তুহিনের তাড়া

-চল, আমি রেডি

দুজনেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসল।

 

ব্লকের সামনে থেকেই একটা ট্যাক্সী নিল। আর বেশী সময় নাই। ৩০ মিনিটের মধ্যেই প্লেন নামবে। ডমেস্টিক ফ্লাইট। বেরুতে বেশী সময় লাগবে না। যদিও ২০ মিনিটের রাস্তা তবে রাস্তায় জ্যাম থাকলে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে অসুবিা হবে।

অপূর্বর উচ্ছ্বাস আর উৎকন্ঠা দেখে তুহিন ড্রাইভারকে তাড়াতাড়ি যেতে বললো। আবার অপূর্বকেও সান্তনা দিচ্ছে-

-দোস্ত, চিন্তা করিস না। ঠিক সময়েই চলে যাবো। আজতো মনে হয় রাস্তা ভালোই আছে। জ্যাম-ট্যাম নাই। আর রহমান ভাইতো ঐখানে থাকবেই।

 

ট্যাক্সী মিখলুখা মাখলায়া ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে গতিতে। পরিস্কার আকাশ। আবছা অন্ধকারের চাদরে প্রকৃতি যেন নতুন করে সেঁজেছে। টুকরো টুকরো মেঘের ফালি গুলো উদাস আকাশে ভেসে যাচ্ছে ধীর লয়ে। অনেক দুর থেকে চাঁদের মুখ দেখা যাচ্ছে। বরফ মাখা গাছগুলি যেন আনন্দে নাচছে। উচ্ছ্বাসে উঠানামা করছে অপুর্বর হৃদপিন্ড। বৃষ্টি ভেজা গোলাপগুচ্ছের মতো উল্লসিত মন। পৃথিবীটা যে এতো সুন্দর এর আগে অপুর্ব কখনো উপলব্ধি করে নি।

মনে হচ্ছে অনেকক্ষন গাড়ীতে বসে আছে। আর যেন মন মানছে না। প্রতিটি মিনিট যেন প্রতিটি ঘন্টা লাগছে।

দাবাই দ্রুজিয়া, মি প্রিশলি (বন্ধুগন, আমরা এসে গেছি)-ড্রাইভারের কথায় অপুর্ব নড়ে চড়ে বসলো।

-মি প্রিশলি (আমরা এসে গেছ?)-অপুর্ব জিজ্ঞেস করে

-দা দা (ইয়েস ইয়েস),

-চল,  দোস্ত, আমরা আইসা গেছি-তুহিনের গলা

 

এরাইভাল গেইটেই অপূর্বরা এলো। তাড়াতাড়ি ভাড়াটা চুকিয়ে হন হন করে হাঁটতে লাগলো। পাশে যে তুহিন আছে যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এয়ারপোর্টে অনেক মানুষ।

-দোস্ত, এতো দৌড়াচ্ছিস ক্যা? আস্তে যা।-তুহিন পেছন থেকে হাঁক ছাড়ে।

গিয়ে দেখে রহমান ভাইও অপেক্ষা করছে। কুশল বিনিময় হলো। কথা চললো অনেকক্ষন। আরো অনেকক্ষন অপেক্ষা করতে হবে।

প্লেইন লেইট। এখন ৯টায় ল্যান্ড করবে। আবার অপেক্ষার পালা।

এক সময় সুতপা এলো।

মুখে হাসি। গাঁয়ে জড়ানো লাল জ্যাকেট। পড়নে হালকা নীল জিন্স। মাথায় হলুদ একটি মাফলার পেঁচানো। বেনী বাঁধা চুলগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে। হাতে দুটি ব্যাগ। কি অপূর্ব লাগছিলো সুতপাকে। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। যেন সদ্য সকালে বয়ে চলা নরম নদী-ডেউয়ে খেলছে বাতাস যা অপূর্বর চোখে-মুখে আছড়িয়ে পড়ছে।

অপূর্ব ভাবতে লাগলো-মানুষ এতো সুন্দর হয় কি করে।

কাছে এসেই অস্ফুট হেসে বলল-

-দাদা, আপনি এতো শুকিয়ে গেছেন কেন?

সুতপার সাথে এইটা অপুর্বর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। রুস্তভ যাওয়ার পর এই প্রথম মস্কোতে এসেছে। অনেক দিন পর দেখা। তাই হয়তো

একটু অন্য রকম লাগছিল।

-তুমি কেমন আছো? -প্রত্যুত্তরে অপূর্ব

-এ হলো আমার কাছের মানুষ, তুহিন

-ভাইয়াকে আমি চিনি। ছবিতে দেখেছি। আপনি কতোবার উনার কথা চিঠিতে লিখেছেন।

-কেমন আছেন ভাইয়া?

অপুর্বর মনে যেন সমুদ্রের ঢেউ খেলা করে যাচ্ছে। কি সুন্দর মুহুর্ত।

রোমান্টিক মুহূর্তগুলি প্রায়শই জীবনের সবচেয়ে মধুর এবং সবচেয়ে লালিত স্মৃতি হয়। অপুর্ব যেন এখন এই মুহুর্তে নীল আকাশের নীচে শুয়ে আছে। তারাগুলিও হীরার মতো জ্বলে উঠল এক সাথে। কী প্রান কাড়া হিমেল উদাসী বাতাস চারপাশে ভালবাসায় ভরা। হৃদয় যেন এক তালে স্পন্দিত হচ্ছে।

-অপুর্ব চল। -রহমান ভাইয়ের তাগাদা

-আপনারা আসেন। আমি একটা ট্যাক্সী নেই-তুহিন বললো।

ধীরে ধীরে ট্যাক্সী স্ট্যান্ডে এলো। সামনে ট্যাক্সী। চারজনেই উঠলো। অপুর্ব সামনে ড্রাইভারের পাশে গিয়ে বসলো।

 

ওকে নিয়ে সোজা চলে এলো ২ নম্বর ব্লকে অপুর্বর রুমে।

রান্না-বান্না হলো। ল্যাম্ব ভূনা, ডাল আর আলুর ভর্তা।

কিন্তু খেতে বসে সুতপা ডাল আর আলুর ভর্তা দিয়েই অল্প কিছু খেল। ল্যাম্বের মাংসে এখনো অভ্যস্থ হয়নি।

তার পর চললো লম্বা গপ সপ।

ওকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। রাত ১২টার দিকে ওকে নিয়ে এক বাঙালী মেয়ের ওখানে দিয়ে এসে রুমে ফিরে এলো। অপুর্বর সাথে

তুহিনও ছিল।

আসার সময় জিজ্ঞেস করতে ভুলেনি-

-কাল কখন দেখা হবে, দাদা?

-তোমার এখন ঘুমের দরকার। কাল সকালে আসবো-অপূর্ব বলে বেড়িয়ে এলো।

চারিদিকে মোটামুটি নিস্তব্দ। রাস্তায় দু’এক জনকে হাঁটা চলা করতে দেখা গেল। হোস্টেলগুলি নিস্তব্দ নিথর। গাড়ীগুলি সাঁ সাঁ করে

মিখলুখা মাখলায়ার বুক চিরে চলে যাচ্ছে। তেমন গাড়ী নেই। আকাশটাকে কি সুন্দর লাগছে। খুব পরিস্কার। তারাগুলি যেন আকাশে গভীর মমতায় জ্বল জ্বল করছে। মৃদু বাতাসটাকে খুব ভালো লাগছে। দুজনেই এগিয়ে চলেছে। সামনেই দুম ট্যুরিষ্ট হোটেলটা। যেন

আকাশটাকে ছুঁই ছুঁই করছে। মস্কোর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং। কেমন জানি একটা ভালো লাগার আবেশ জড়িয়ে আছে অপূর্বর সারা মন-প্রান। কোন ক্লান্তি নেই। ঘুমের কোন তাড়া নেই।

 



Read full book here: Click here to download the PDF file