মস্কোর বরফবিথী ও একজন সুতপা: পর্ব-৬


Author: ড. পল্টু দত্ত

Summary:

আজও ঠিক ১১টায় ঘুম ভাঙলো অপূর্বর।

আকাশটা বেশ মেঘলা। শীতের মেজাজ এখনো অশান্ত। রাস্তাগুলো যেন শক্ত বরফে শান বাঁধানো। টিপ টিপ করে হাঁটতে হয়। পাখিদের টুক টাক উড়ে যাওয়ার শব্দ কানে আসে। রুম থেকে জানালা দিয়ে গাছগুলোকে দেখতে পাচ্ছে বরফের চাদরে মুড়ি দিয়ে যেন ধ্যান মগ্নতায় ব্যাস্ত। এটাই হয়তো উত্তম সময় কবিতার শব্দে আর অক্ষরের নদীতে সাঁতার কাটার। ভাবতে ভাবতে অপূর্বর মনে হলো- শরীরটা কেমন চটচটে লাগছে, গ্রামে থাকতে শীতে এক নাগারে ১০/১২ দিন স্নান না করার মতো এক শীত অসারতা যেন তাকে ছুঁয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনেক দিন স্নান করা হয়নি। আজ স্নান করাটা খুব দরকার। কিন্তু মনটা কেমন যেন সায় দিচ্ছিলো না। স্নান করতে হলে যেতে হবে সেই নীচতলায়। একেবারে আন্ডারগ্রাউন্ডের কমন বাথ  রুমে। এই খানে যাওয়ার কথা ভাবতেই কেমন একটা অস্বস্তি জুড়ে বসে।  সে এক বিচিত্র স্নানঘর। প্রায় বিশটার মতো খোপ খোপ করা রুম। কোনটারই দরজা নেই। সব খোলা। প্রথম প্রথম স্নান করতে খুব লজ্জা পেত। বিশেষ করে সিনিয়রদের কেউ থাকলে তো কথাই নেই। সিনিয়রদের উপস্থিতিতে স্নান না করে বরং চুপ চাপ বেরিয়ে যেতে হতো এক ঝাক পোষ না মানা লজ্জাকে গোপন করতে। পরে এলাকাটা প্রায় নির্জন হলে এসে কাজটা সেরে নিত। তবে একদিন ঘটলো এক ঘটনা, এক সিনিয়র ভাই বিষয়টা বুঝতে পেরে অপূর্বর লজ্জার আবরনটা খুলে দিলো-

-অপূর্ব, কেমন আছো?

অপূর্ব স্তম্ভিতই শুধু না। যেন আকাশ থেকে পড়ল। কারন সে এটা আশাই করে নি। তাও আবার খাঁটি বাংলায় কথা বলছে। কোন উত্তর দেওয়ার আগেই আবার বলে উঠলো-

-আমার পাশেরটা খালি আছে। চলে এসো।

-আসছি-মুখ ফসকে বেড়িয়ে এলো।

পা টিপে টিপে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো অপূর্ব

কাছে আসতেই একেবারে হতচকিত। কেউ যেন মাথার উপর ধপ করে বজ্রাঘাত করলো।

একি কান্ড-অপূর্ব ভাবতে লাগলো-

লজ্জার যেন কোন বালাই না। উদোম শরীরে একনাগারে জল পড়ছে মাথার উপরের ঝর্নার পাইপ দিয়ে। সাবানের ফেনাগুলো বুদবুদ করছে সারা শরীরে। তিনি কি আনন্দ নিয়ে দুহাতের শক্ত আঙ্গুলে রগরিয়ে যাচ্ছে সারা শরীর ।

ছিঃ ছিঃ একি কান্ড লজ্জা শরম বলতেও কিছু নেই।

জীবনে কখনো উদোম গায়ে দাঁড়িয়ে স্নান করতে অপূর্ব এর আগে কখনো দেখে নাই।

গ্রামের বাড়ীতে যখন থাকতো তখন কতোবার পুকুরে ঘন্টাঅব্দি পড়ে থাকতো গ্রামের পুকুরে। বর্ষায় পুকুরটা জলে থৈ থৈ করতো। পুকুরের পাশটাতেই লাগোয়া স্কুলের একটা বিল্ডিং।দুপাশে দুটো শান বাধানো ঘাঁট। স্কুলের দিকের ঘাঁটের পাশেই ছিলো স্কুলের পন্ডিত স্যারের কোয়ার্টার। একাই সেখানে থাকতেন। অপূর্ব ভালো ভাবেই জানতো স্যার কখন পুকুরে আসে। তাই এই সময়ে কখনো পুকুরে স্নান করতে আসতো না।

অপুর্বর বাড়ীর পাশেও একটা বড় পুকুর ছিলো। কিন্তু কাঠ দেয়া ঘাঁটটা ছিলো একেবারে নড়বড়ে। আর পুকুরের একপাশে কচুরি পানায় ভর্তি ছিলো। এখানে কদাচিৎ আসলেও অপূর্বর কেমন ভয় ভয় লাগতো। আর পুকুরের দক্ষিন পাড়ে ছিলো স্মশান। চারিদিকে জঙ্গল। কেমন যেন ভুতুরে ভুতুরে। ভয়ে গা ছম ছম করে উঠতো। গায়ের পশমগুলি পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যেত। তাই এই পুকুরে অপুর্ব স্নান করতে আসতো না।

স্কুলের পাশের পুকুরটা বেশ বড়ো। লোকজনের আনাগোনা ছিলো সবসময়। পাশের রাস্তা দিয়ে রিক্সা আর সাইকেলের টুংটাং আওয়াজ অপুর্বর খুব ভালো লাগতো। এখানে কোন ভয় নেই।

এখানেই সাঁতার কাটতো। জলকেচি করতো নানা ভাবে। পুকুরে ডুব দিয়ে এ মাথা থেকে অন্য মাথায় দু’পা নাড়িয়ে চলে যেত। অনেকক্ষন দম বন্ধ করার অভ্যাস করতো। কোমরে শক্ত করে গামছাটা বাঁধা থাকতো।

ঘরেও উদোম গায়ে থাকতে কেমন লজ্জা লাগতো অপুর্বর। গায়ে সব সময়ই কিছু না কিছু জড়িয়ে রাখতো। এ নিয়ে তার বৌদি প্রায় সময়ই বলতো-

-ঘরে জামা পইরা থাকেন কা? আপনি মেয়ে মানুষ নি?

অপূর্ব চুপ করে থাকতো-শরমে গাল দুটি লাল হয়ে উঠতো, কোন উত্তর দিত না।

এসব ভাবতে ভাবতেই বড় ভাইয়ের তাড়া

-আরে তুমি দঁড়িয়ে আছো কেন? এখানে লজ্জা টজ্জা পেলে চলবে না। তা হলে তোমার স্নান করা লাটে উঠবে। এটা সোভিয়েত

ইউনিয়ন। এভাবেই স্নান করতে হয়।

অপূর্বর ভাবনায় ছেদ পড়লো।

সত্যিই তাই। যস্মিন দেশে যদাচার। যে দেশে যে নিয়ম।

তবে এই সত্যটা দেশে থাকতে তার এক আত্মীয় ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছিলো। সোভিয়েত ইউনিয়নে আসার সময়

-মনে রেখ, ঐ দেশটা একটা অন্যরকম দেশ। যাকে বলে ফ্রী কান্ট্রি। মানুষজনের লজ্জা শরম কম। আমাদের দেশের মতো না। ঐখানে যাচ্ছো সব কিছু মানিয়ে চলার চেষ্টা করবে। তা না হলে কিন্তু বিপদ।

ঐদিন সেই আত্মীয়ের কথাগুলি অপুর্বর মনে ধরে নাই। তবে আজ নিজের চোখেই দেখছে। হায়রে সমাজ! ভাবতে ভাবতে কেমন অস্বস্থিকর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

শেষ পর্যন্ত মনের বিরুদ্ধে গিয়েই তাড়াতাড়ি স্নানটা সেরে ফেলল। ঠিকমতো সাবান দিয়ে ঘষা-মাজার যেন ফুরসত পেল না। সারা শরীর ও মন জুড়ে কঠিন এক আড়ষ্ঠতা। অদ্ভুত এক দেশ আর এ দেশের মানুষগুলো।

ঝড়ের বেগে স্নানটা সেরে এক দৌড়ে চার তলার রুমে এসে ঢুকলো।

স্নানের পর অপূর্ব পেটে আগুন জ্বালা অনুভব করল।

ইদানিং খাওয়া দাওয়ায় বেশ অযত্ন হচ্ছে। প্রতিদিন ঠিকমতো দুবেলাও খাওয়া হচ্ছে না। তবে গতকাল রাতে তো বেশ ভালো করেই খাওয়া দাওয়া হলো। তুহিনের রান্নার খবর সবাই জানে। বিশেষ করে ওর বানানো ল্যাম্বের ভুনা মাংস।

-দোস্ত, সাংঘাতিক ঝাল দেওয়া অইছে। একেবারে গুড়ামড়িচের ভূনা-রান্না করতে করতে তুহিন বক বক করে যাচ্ছিল।

-ঝাল আমার প্রিয়-অপূর্বর সোজা-সাপ্টা উত্তর।

-চোখ দিয়ে জল না আসলে এই ঝাল ভূনায় কোন মজা নাই, তুই যতো পারিস দিয়ে যা, পারলে কষা করে বানাইস

সত্যিই খুব খেয়েছিল অপূর্ব।

 হাত চেটে-পুটে। প্লেট একেবারে পরিস্কার

টের পাচ্ছিল মাথা ভিজে যাওয়ার। বেশী ঝালে অপূর্বর এ অবস্থা হয়। মাথা দিয়ে ঘাম বেরুতে থাকে-

অনেকক্ষন বসে ছিল খাওয়ার পরে। নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার গতি। একেবারে গলা অব্দি। তুহিনও খেয়েছিল প্রচুর।

অপূর্বর ভাবনায় দুঃশ্চিন্তা।

এখন আর কোথাও খাওয়া পাবো না। ১ নম্বর ব্লকের বুফে ১০টায় বন্ধ করে দেয়। বুঝতে পারলো এখন আর খাওয়া হবে না।

এমন একটা আজব দেশ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে বড়ই বিপদ। নিজের দেশ হলে কোন এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খেয়ে আসা যেতো। অগ্যতা রুমে কিছু বিস্কুট আর ফ্রিজে কিছু কেক ছিলো তা দিয়েই সকালের খাবারটা কোন রকমে শেষ করল অপূর্ব। ক্ষুধাটাকে আপাততঃ নিবৃত করা গেলেও প্রাণ ভরেনি। তাই দুপুরে আলোকিত প্রহরের অপেক্ষায় থাকলো। অপেক্ষায় থাকলো স্তালোভায়া থেকে ভালো করে পেটপূজা করা যাবে।

ব্রেকফাস্টটা শেষ করে মহাদেব সাহার একটা কবিতার বই নিয়ে খাটে শুয়ে শুয়ে পরেছিল অপূর্ব।

-বইয়ের কবিতা পড়তে পড়তে অপূর্ব হারিয়ে গেল তার ভাবনার রাজ্যে-

অনেকদিন যাবত কোন কবিতা লিখা হয়ে উঠছে না। বসার সময়ও হচ্ছে না। বসলে তখন আবার কোন শব্দ আসছে না, বড় সংকট তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে অপূর্বকে।

 

ইদানিং কেন জানি ভাবনার পাখিগুলো আর আগের মতো পেখম মেলে উড়তে পারে না। তাছাড়া কবিতাও তেমন পড়া হয়ে ওঠেনা। পড়তেও তেমন আগ্রহ পায় না সে। আজ সকালের এই অলস সময়টা কবিতায় হাবুডুবু খাবে এই ভাবনায় মহাদেব সাহার কবিতার বইটি হাতে নিলো অপুর্ব। মনোযোগ দিয়ে পড়লেও মন আসে না। পড়তে এবং লেখার মধ্যে ঢুকে শান্তি পাওয়া যেত। কিন্তু ইদানীং একাকীত্ব ভরা চারদিক।

এই সময় অপূর্বর মনে পরে গেল প্রখ্যাত জার্মান কবি ও ঔপন্যাসিক, রাইনে মরিয়া রিলকের কথা।

দ্য লেটারস টু এ ইয়াং পোয়েট। মারিয়া রিলকের একজন উনিশ বছর বয়সী কলেজ ছাত্র এবং সম্ভাব্য কবিকে লেখা দশটি চিঠির সংকলন। ১৯০২ থেকে ১৯০৮-এর মধ্যে লেখা, চিঠিগুলি জীবন, প্রেম, শৈল্পিকতা এবং সৃজনশীলতার বিষয়ে পরামর্শ দেয়। দ্য লেটারস টু এ ইয়াং পোয়েটে, রিলকে আমাদের সত্যিকারের মানুষ হওয়ার জন্য আমাদের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা এবং আবেগকে আলিঙ্গন করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি যুবককে জীবনের প্রতিকূলতার দ্বারা নিরুৎসাহিত না হয়ে, বরং তাদের বৃদ্ধির সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করার আহ্বান জানান। তিনি চিঠির যুবকটিকে উপদেশ দেন যে তিনি যদি মহান লেখক হতে চান তা হলে তাকে অবশ্যই নিজেকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে হবে। নিজের নৈপুণ্য বিকাশে রিলকে একাকীত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন, আত্নানুসন্ধানর পথ ধরে চলতে বলেন...। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে একা থাকা অপরিহার্য যদি আমরা নতুন কিছু খুঁজে পেতে চাই। নান্দনিক এবং শৈল্পিকতার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে হলে একাকীত্বের সৌন্দর্যকে গ্রহন করতে হবে।

 

রাইনে মরিয়া রিলকে ঠিকই বলেছিলেন। বড়ো হতে হলে আগে নিজকে বুঝতে হবে। একাকীত্বকে সৃজনশীলতার হাতিয়ার ভাবতে হবে। এতে মঙ্গল। অপুর্বও তার আত্ম শ্লাঘা থেকে বেড় হতে চায়-

এমন সময় রুমে এসে ঢুকলেন অপূর্বর প্রিয় আযম ভাই। তিনি আসলে সকল বাঙালী ছাত্র-ছাত্রীদর খুব প্রিয়। যেন পাশের বাড়ীর সহজ সরল ছেলে। সকলের জীবনে দুঃখের পাত্র উপচানো থাকলেও আযম ভাই যেন তার থেকে আলাদা। কিংবা থাকলেও অবয়বে ধরা দেয় না। হাসি তামাশায় যেন সব দুঃখ-বেদনা একাকার হয়ে যায়। কোন কিছুতেই ফরমালিটিজ নেই।

 

দরজায় ঠক ঠক করে অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করলেন না।

এসে উচ্চ গলায় বললেন রান্না করবেন। অপূর্বকে আদেশের সুরে তাগাদা দিলেন-

-এ সব বই টই রাখো এখন। পেট চু চু করছে। চলো রান্না করি।

-আরে আযম ভাই? কি ব্যাপার, মেজাজ এতো খড়খড়া কেন? সকালে পেটে কিছু পড়ে নাই?

-বুফেততো সব বন্ধ হয়ে গছে। পেটে পড়বে কি করে? তোমার পেটে কি কিছু পড়েছে?

-তো রান্না যে করবেন কিছু আছে কি?

-আমি চিকেন নিয়ে আইছি। আলু ভর্তা আর চিকেন। এখন তাড়াতাড়ি চল। এখনপর্যন্ত পেটে কিছু পড়েনি।

আর কী করা। অগত্যা যেতে হলো। এতে অপূর্বরও বরং কিছুটা সুবিধা হলো। দুপুরে আর স্তালোভায়ায় যেতে হবে না। দুজনে রান্নার জিনিস পত্র নিয়ে সোজা রান্না ঘরে চলে গেল। এখানে প্রতিটি ফ্লোরে একটি করে রান্না ঘর। ফ্লোরের শেষ প্রান্তে। অনেকেই রান্না করে। দেশে থাকতে অপুর্ব কখনো একটি চা বানিয়েও দেখেনি। রান্না করাতো দুরের কথা। দেশে ছেলে মেয়েরা কখনো এ কাজটি করতে হতো না। মায়েরা বা ঘরের কাজের লোকেরাই ঘর-গেরস্থালী সামলাতো। অথচ রান্না শিখা বা জানা জীবনের জন্য কতো যে প্রয়োজন অপুর্ব আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

 

প্রথম দিকে বেশ কষ্ট হতো। ভাত রান্না করতেও পারতো না। পুড়ে যেত বলে ভাতের পাত্রসহ ফেলে দিতো। ভাগ্যিস এ দেশটাতে সব কিছুই সস্তা। মাত্র ষাট কোপেকে সকালে বেশ ভালো করে খাওয়া যেত। এক রুবলে স্তালোভায়ায় দুপুরের খাবার। তাও যেন রাজকীয়। তবে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই রান্না করতো। এত শুধু অর্থেরই সাশ্রয় হতো তা নয় বরং রান্নার আনন্দটাই যেন একটু অন্যরকম।

আজ রান্নাঘরে কেউ ছিলো না। বেশ ভালোই হলো।

রান্না বান্না এবং খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে প্রায় দু ঘন্টা লেগে গেল।

একসাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুজনেই রওনা দিল বাংলাদেশ থেকে সদ্য আগত পার্টির ডেলিগেটদের সাথে দেখা করতে হোটেল অক্টোবরে।

অনকক্ষন গল্প গুজব হলো। পার্টির বিশিষ্ট নেতা টুনু ভাইয়ের সাথে অনেকদিন পর দেখা হল। কথা হল অনেকক্ষণ। ঘন্টাখানক থাকার পর ১৪৪ নম্বর বাস ধরে ফিরে এল ক্যাম্পাসে। রুমে না গিয়ে দুজনেই সোজা চলে এল কলাভবনের তিন নম্বর হলে।

আজ বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭০তম জন্মবার্ষিকী। এখানে এসে যেন পড়ল বিপদে। অনেকেই অপূর্বকে দেখে যেন অবাক হয়ে গেল।

অনেকের মুখে একই প্রশ্ন,

- কি ব্যাপার অপূর্ব রুস্তভ যাওয়া হয়নি?

কতোবার কতোজনকে যে এর উত্তর দিয়েছে তার হিসেব নেই। মাঝে মধ্যে একটু বিরক্তি বোধ করছিল-কিন্তু এরিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। দু সিনিয়র ভাইতো বলেই ফেললো-কি অপূর্ব প্রেম প্রেম খেলা চলছে নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে? আমাদেরকে জানালে না কেন? মতলবটা কী তোমার?

-যদি শুনে থাকেন তাহলে আমার আর কি বলার আছে। এখানে লুকানোর কি আছে? -মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে সোজা সাপ্টা জবাব অপূর্বর

আরেকজন আবার হাসতে হাসতে বকতে লাগলো-

-শুনেছি ঐ মেয়ে নাকি অন্য ছেলের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে। আর এই খবর শুনে নাকি তুমি যাওনি? ব্যাপারটা কী ঠিক?

সবাই হা হা করে হেঁসে উঠলো।

এবার অপূর্বর কেন জানি একটু রাগ হলো। ভেতরটা আগুন জ্বালা অনুভব করল।

-সবাই পেলটা কি? তবে আমি বুঝতে পারছি স্রেফ রসিকতা মাত্র।

-কিন্তু এই কথা যদি ওর কানে যায় তাহলে সে কি ভাববে।

সে আমাকে এখনো অপূর্ব দা বলেই সম্বোধন করে। বড় ভাইয়ের মতোই শ্রদ্ধা করে। আসলে কী তাই? আমাকে বড় ভাই ভাবে নাতো? নাকি সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোন চিন্তা করে। যাক এটা ওর কর্ম। আমিতো অন্ততঃ অন্যভাবে ভাবি ওকে নিয়ে। চিন্তা করি সবসময় এবং ভেসে বেড়াই উদাসী বকেদের মতো। আমার মগজে একটা বড় অংশ জুড়ে যেন সে সারাক্ষণ বিচরণ করছে। হাতড়িয়ে বেড়ায় আমার চেতনার ভেতর- বাহির -অন্তর-।

না ওকে নিয়ে আর ভাবতে পারছিনা। কিছু ভালো লাগছে না।

অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্ব শুরু হয় বঙ্গবন্ধু নির্মিত ডকুমেন্টারি ফিল্ম দিয়ে। অপূর্ব ভেতরে যেন বালুকাময় সমুদ্র সৈকতের ঘূর্নিঝড় বয়ে পাচ্ছে। মন বসছে না।

বেশ চমৎকার হয়েছে আজকের অনুষ্ঠান। হল ভর্তি সকলেই উপভোগ করছিল।

অপূর্ব ব্লকের দিকে রওনা দিল।

প্রদোষ আলোয় ভরা এই শেষ লগ্নটা অপূর্বর খুব ভালো লাগে।

দিবসের সব ক্লান্তি আর অবসাদ শেষে পৃথিবীটা যেন হাত-মুখ ধূয়ে শান্তির ধ্যানে বসে। সব কিছু কেমন ছিম-ছাম, শান্ত-সুন্দর।

অপূর্ব হাঁটতে হাঁটতে কখন যে রুমের সামনে এসে দাঁড়লো তা টেরও পেলনা।

 

(চলবে---)



Read full book here: Click here to download the PDF file