মস্কোর বরফবিথী ও একজন সুতপা: পর্ব-৫


Author: ড. পল্টু দত্ত

Summary:

গতকাল অর্নব আর মিতার বিয়ে হয়। অর্থাৎ মার্চের ১৬ তারিখ।

খবরটা যখন তুহিন বলছিল তখন অপুর্বর মোটেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। কি করে সম্ভব? অর্নব বিয়ে করবে অথচ কেউ জানবে না? তা কি করে হয়? পরে বিশ্বাস করতে হলো। কেউ বিয়ে করলে সবাইকে জানাতে হবে এমনতো কথা নেই। যাক অর্নবের প্রতি আর রাগ করতে পারল না। শুভস্যঃ শিঘ্রম। ভালোই করেছে।

মিতা খুব শান্ত স্বভাবের। মুখটা বেশ গোলগাল। কেমন মায়াবী চোখ। খুব সুন্দর করে নরম সুরে আস্তে আস্তে কথা বলে। সুখী সুন্দর হোক ওদের দাম্পত্য জীবন।

সেদিন বিকেলে অপুর্ব আর তুহিন কনগ্রাচুলেট করার জন্য মীতার ওখানে গেল।

 

ও রুমেই ছিল। শাড়ি পড়া নব বিবাহিতা। বড্ডো ভালো লাগছিলো।

বাঙালী মেয়েদেরকে শাড়ীতে বেশ সুন্দর লাগে। শাড়ীর রংএর ভাঁজে ভাঁজে মিশে থাকে প্রেম, সমৃদ্ধি, আবেগ কখনো বা গাঁয়ের অপরুপা হরিন চোখ কিশোরীর কালো কেশে উঁকি দেওয়া গোলাপের উচ্ছ্বলতা। কখনো মনে হয় যেন শাড়ীর রং নয়, আনন্দের দোলায় দোল খাওয়া হালকা বাতাসে শর্ষের রং। শাড়ীর স্পর্শে মীতাকে খুব সুন্দর লাগছে, গলার দুপাশে এলোমেলো চুলের চাদরে যেন একদম মোনালিসার মতো লাগছিলো। আর ওরাই যখন শাড়ি ছেড়ে বিদেশীদের মতো হিপ হফ পোশাকে আচ্ছাদিত হয় তখন তাদেরকে আর চেনা যায় না। কেমন জানি লাগে। প্রানহীন!

যখন সাঁজের কথা আসে, বাঙালি মেয়েদের জন্য শাড়ির কমনীয়তা এবং সৌন্দর্য সব সৌন্দর্যকে ছাড়িয়ে যায়। মিতা একটি উজ্জ্বল লাল বেনারসি সিল্কের শাড়ির সঙ্গে মিল করে একটি সুন্দর সোনার গয়না পড়েছিল। হাতের চুড়িগুলো মাঝে মাঝে টুং টাং করে বাজছিল। খুব মিষ্টি একটি আওয়াজ।

ভারতীয় বধূর দৃষ্টি সর্বদা সৌন্দর্য এবং রহস্যময়। ঐতিহ্যবাহী শাড়িতে আবদ্ধ, করুণা এবং কমনীয়তার আভা প্রকাশে মনোরমা যা বিশ্বের অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া কঠিন। সদ্য বিবাহিত ভারতীয় মেয়েদের জন্য, শাড়ি শুধু একটি পোশাক নয়, এটি একটি স্ত্রী হিসাবে তাদের নতুন পরিচয়ের প্রতীক। মিতাকে দেখে অপুর্বর মনে হলো যেন নববধূর বেশে এই সুন্দর শাড়ীটি তার শরীরের চারপাশে একটি সুন্দর সিলুয়েট তৈরী করেছে যা তার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের তিলক। এই পোশাকটি কেবল তার নারীত্বকে তুলে ধরছে না বরং তার শরীরের সূক্ষ্ম বক্ররেখাগুলিকে আরও বেশি মার্জিত করে তুলছে। কথায় বলে, 'পোশাক পুরুষকে তৈরি করে', তেমনি পোশাকও নারীকে তৈরি করে – বিশেষ করে যখন ভারতীয় কনে তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনে একটি সুন্দর শাড়ি পরার কথা আসে। এই নিরবধি পোশাকটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে এসেছে। মিতাকে দেখে অপুর্বর মনে হলো মিতাই যেন এই সুন্দর প্রজন্মের প্রতীক।

 

খুব অপরূপা লাগছিল মিতাকে এই নতুন সাঁজে। অনেকক্ষন গল্প করলো ওর সাথে। এর মধ্যে অর্নবও এলো। ওদের বিয়ের এলবামটাও একটা একটা করে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখল।

চা, বিস্কুট আর আপেল দিলো।

সারা দিন পেটে কিছুই পড়ে নি। যদিও মীরাদের বাড়িতে ব্রেকফাস্ট করেই বেড়িয়েছিল। কিন্তু খুব হালকা কিছু খেয়েছিল। নতুন কোন জায়গায় তেমন ভালো ঘুমুতে পারে না অপুর্ব। একেতো নতুন জায়গা, তারপর রুমে একা। এক রুমে একা ঘুমুনোর অভ্যাস অপুর্বর নেই। হোষ্টেলের রুমে দুজন থাকে। অপুর্বর রুম মেট চান চকছিয়া। দেশ কাম্পুচিয়া। খুব ভালো ছেলে। দুজনের মধ্যে খুব ভাব, বনিবনা আছে। মাঝে মধ্যে এক সাথে রান্না করে। তবে ওদের রান্নায় চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু দেওয়া হয়। সব খাবারই মিষ্টি লাগে। প্রথম দিকে অপুর্বর খেতে একটু অস্বস্থি লাগতো। এখন বরং ভালোই লাগে।

 

সোভিয়েত ইউনিয়নে আসার পর থেকে অপুর্ব কখনো একা রুমে রাত কাটায়নি।

সারাটা রাত এপাশ ওপাশ করেছিলো। তারপর নরম বালিশ। মাথায় তেমন আরাম পারছিল না। কেমন ভয় ভয় লাগছিলো। কোন আওয়াজে যেন বুকটা ধর পর করে উঠে।

 

শুধুই কি তাই?

 

ঘুমটা যখন লাগবে লাগবে ভাব তখনই কেমন এক অদ্ভুত আওয়াজ কানে এলো-

ধক করে উঠলো বুকটা। এমনি অন্ধকার অপুর্বর অপছন্দ। তার মধ্যে অপরিচিত বিশ্রী আওয়াজ। বুঝার চেষ্টা করল কিছুক্ষন।

নাহ্ আর কোন শব্দ পেল না। নিস্তব্দতার গভীর রাত। রাতের অন্ধকার অপুর্বর কখনোই পছন্দের নয়। একটা ভয়ের ব্যাপার। ভুতের ভয়, কিন্তু আবার ভুত বলে কিছু আছে সেটা বিশ্বাস করতে নারাজ।

ভাবলো লাকীর কান্ড!

লাকী মীরার ছোট ভাইয়ে খুব পছন্দের বিড়াল। মাস ছয়েক আগেই এই ঘরে এসেছে। চাচাই ওর নাম দিয়েছে লাকী। এই নামটা নাকি ভাগ্যবানের মতো লাগে-মীরার ছোট ভাই লাকীর খুব প্রিয় বন্ধু। মীরার বাবাই অপুর্বকে একদিন বিড়াল আনার প্রসঙ্গে যুক্তি দিয়েছিলো অপুর্বকে-

 

-জানো, অপুর্ব, বিড়াল আমার খুব প্রিয়। দেশে থাকতেও আমার দুটি বিড়াল ছিলো। বিড়াল হলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রিয় পোষা প্রাণী। তারা সবসময় থাকে কৌতুকপূর্ণ এবং হয় স্নেহশীল কিন্তু বিড়ালদের মধ্যে বিশেষ কিছু রয়েছে যা যে কোন ঘরের বাচ্চাদের জন্য প্রিয়। একটু লক্ষ করলেই দেখবে বিড়ালরা সাহচর্য, নিঃশর্ত ভালবাসা প্রদান করে। স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক প্রাণী বলে, তারা মানুষের আশেপাশে থাকা উপভোগ করে এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের মালিকদের সাথে বন্ধন তৈরি করে, মানুষেরা মতো ওরা বিশ্বাসঘাতক নয়। আমরাই সমাজের নষ্টের কারন। সব বিড়ালদের একটি শান্ত উপস্থিতিও রয়েছে, যা বিশেষত উদ্বিগ্ন বা লাজুক বাচ্চাদের জন্য অসুধের মতো কাজ করতে পারে।

সত্যিই তাই। লাকীকে দেখলে তাই মনে হয়।

বেশিরভাগ বিড়াল তাদের মালিকদের প্রতি নিঃশর্ত ভালবাসা দেখায় বিনিময়ে কিছু আশা না করে। শিশুরা বিচার বা সমালোচনার ভয় ছাড়াই তাদের বিড়াল বন্ধুদের কাছে স্বাধীনভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে, বিড়ালরা ফিরে কথা বলে না। কোন ঝগরা করে না।

 

লাকী এখন সবারই খুব কাছের। সবাই লাকীকে ভালোবাসে। বেশ আদব-কায়দা হয়েছে ওর। কি চমৎকার করে বাংলা কথাগুলিকে আয়ত্ত করেছে। প্রায় টুকি-টাকী সব কিছুই বুঝতে পারে।

কোন ধরনের অঘটন ঘটাবে না ঘরে। প্রকৃতির ডাক এলেই মিউ মিউ করে জানান দেয় এবং কারো না কারোর গা ঘেঁসে ঘুরতে থাকে।

এ সময় বাইরে নিয়ে যেতে হয়।

বেশ মায়া মায়া লাগে। লাকীর শরীরটা ধবধবে সাদা, খুব সুন্দর দুটি চোখ, আদুরে ছোট থাবা, তবে ধারালো নখর এবং দুটি বেহাল কান রয়েছে যা যে কোন শব্দে সংবেদনশীল। মুখের রংটা কালো। যেখানে থাকুক না কেন কেউ ডাকলেই দৌড়ে চলে আসবে।

হঠাৎ ভাবনায় ছেদ পড়লো

আবারো সেই বিকট আওয়াজ

ঘর ঘর ঘর করে আওয়াজ। যেন উর্ধগতি। আবার নিমেষের মধ্যে নতুন ব্যাঞ্জনা। পুরনো গাড়ীর হঠাৎ করে ইন্জিন বন্ধ হওয়ার আওয়াজ। খ্যাচ-খ্যাচ-চ-ছ…..কি ভয়ানক!

 

মাঝে মধ্যে শ্বাসকষ্টের মতো শব্দ, এমনকি দম বন্ধ হওয়ার মতো শব্দ হচ্ছে, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় এবং আবার কয়েক সেকেন্ড পরে  শুরু হয়।

-নাকের মধ্যে ব্যাঙ ঢুকছে নি? -চাচীর কর্কশ কন্ঠ।

হঠাৎ করেই পরিবেশটা আবারো শান্ত হলো।

অপুর্ব বুঝতে পারল নাক ডাকার আওয়াজ।

তবে নাক ডাকার আওয়াজ যে এতো বিদঘুটে হতে পারে তা জানা ছিলো না।

 

কখন যে আবার ঘুম এলো টের পায়নি। তবে অনেকক্ষন ছট পট করতে হয়েছে, তা ঠাহর করতে পারছিল না।

চা টা কয়েকটা বিস্কুটের সঙ্গে শেষ করল। একটা আপেলও খেলো।

পেটের দিক থেকে কিছুটা ভালোবোধ করলেও মনটা এখনো বেশ খারাপ। সারাদিন তেমন কিছু করা হয়নি। মীরাদের বাড়ি থেকে সকাল ১১টায় হোস্টেলে ফিরে এসেই সুতপার চিঠি পেলো। মার্চের তিন তারিখের লেখা চিঠি।

ওর চিঠি পেলেই মনটা খুব ভালো লাগে অপুর্বর। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে। একবার, দুবার, তিনবার, অসংখ্য বার। অভিযোগ করেছে অনেকদিন নাকি অপুর্ব চিঠি লিখে নাই। স্মরন করার চেষ্টা করল-শেষ চিঠিটা কবে দিয়েছিল। নাহ্ বেশী দিনতো হয়নি? এইতো এক সপ্তাহ আগেও ওর বান্ধবীর কাছে একটি চিঠি দিয়েছে। তাছাড়া ক’বার টেলিফোনেও আলাপ করেছে।

 

ইদানিং ফোনে আলাপ করার একটা সুযোগ হয়েছে। ওদের হোস্টেলের রিসিপশনের নাম্বারটা সংগ্রহ করে অপুর্বকে দিয়েছে।

 

বিশেষ করে ওর কাছ থেকে চিঠি এলে তখনই দীর্ঘ চিঠি লিখতে বসে যাই। টেলিফোনেও আলাপ হয় ঘন ঘন। তাহলে অভিযোগ কেন?

পরক্ষনেই, ভেবে একটু অন্যরকম হয়। যেমন উদাসী বাতাস। বলাকাদের আকাশের নীলে হারিয়ে যাওয়া। অপুর্বও রুমান্টিক হয়। ভালো লাগার একটা হালকা বাতাস মনের দরজায় আছড়িয়ে পড়ে। হয়তো ভালোবাসার অভিমান।

তাই ওর এই না চিঠি পাওয়ার অভিযোগটাকে মেনে নিল। মনে মনে বলল-

 -রাগ করো যতো পারো। এতে যে আমার মনটা ভালো হয়। কারন এ মুহূর্তে মস্কোর বাইরে কেউ আমার জন্য রাগ করছে সেটাও বড়ো শান্তনা।

ওর প্রতিটি চিঠিতেই অনেকখানি অংশ জুড়ে থাকে ওর সাবজেক্ট পরিবর্তন করার প্রসঙ্গে। এখন পর্যন্ত ওর এই সমস্যাটার কোন সুরাহা করতে পারল না। সোভিয়েত ইউনিয়নে কতো সমস্যার সমাধান হচ্ছে অথচ এখন অব্দি ওর সমস্যাটির কোন সমাধান হলো না। বেচারি জানে না আর্ট আর্কিটেকচার নিয়ে কিভাবে পড়াশুনা করবে।

 

প্রায়ই কান্নকাটি করে। মেডিক্যালে পড়তে চায়। বড়ো ডাক্তার হতে চায়। বরাবর সুতপা পড়াশুনায় খুব ভালো ছিলো। ক্লাশ ফাইভ এবং অষ্টম শ্রেনিতে বৃত্তি পেয়েছিলো। বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম কয়েক জনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিলো তখনই।

 

ছোটবেলা থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। রাশিয়াতে মেডিক্যালে পড়ার জন্যই এপ্লাই করেছিলো। কিন্তু পায় নি। তবে দেশ থেকে বলে দিয়েছিল এ নিয়ে না ভাবতে। প্রিপারেটরি শেষ করে মস্কো বাংলাদেশী ছাত্র সংগঠনের সাহায্য নিয়ে সাবজেক্ট পরিবর্তন করা যাবে। সোভিয়েত ইউনিয়নে আসার পর থেকেই চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জুলাই মাসে ওর প্রিপারেটরী শেষ হয়ে যাবে। তাই বেশ চিন্তিত।

কয়েকদিন আগে দেশের জ্ন্য কয়েকটা চিঠি লিখেছিল অপুর্ব। কিন্তু এখন পর্যন্ত চিঠিগুলো পোস্ট করা হয়নি। সুতপার চিঠি পেয়েই ওকে একটি চিঠি লিখল। প্রথম চিঠিটা ওই অপুর্বকে লিখেছিল। খামের উপরে ওর নামটা লেখা ছিল সুতপা মুখার্জী। ‘মুখাজীর্’ পদবি দেখে অপুর্ব একটু অবাক হল। কারন মুখার্জী পরিবারের অনেকেই আছেন অপুর্বদের বাড়ির পাশের। তবে শুরুতে চৌধুরী পদবী শোনার পর ভেবেছিল এটা ওদের মামাদের পদবী। এই প্রথম চিঠির অন্তর্গত কথা ওর জীবনকে এক অন্যদিকে বাঁক বদল করে দেয়। এতোদিনে নতুন করে ভাবনারা পেখম মেলতে শুরু করছিলো। এতোদিন ভাবত সে অন্যকিছু মনে করে অপুর্বকে আর ভাবে না। মনের যোগাযোগে তাই কোন ছন্দ ছিল না। যোগাযোগের কারন ছিল সাবজেক্ট চেইঞ্জ। আজ নিজের অজান্তেই এক অন্যরকম অনুভূতির বুদ বুদ নিজের মধ্যে টের পেল। ভলোলাগার, মধুময় সেই দিন থেকেই শুরু হলো নতুন এক চলার পথ, নতুন এক গতি।

 

পোস্ট অফিসে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেরুল। রাস্তায় তুহিনের সাথে দেখা। অপুর্বকে দেখে সে অবাক হয়ে গেল। সে অপুর্বর ব্লকে একই ফ্লোরেই থাকে। অপুর্বর সব আদ্যোপান্ত তুহিনের নখদর্পনে। ওদের মধ্য খুব আত্মা আত্মীর সম্পর্ক।

তুহিন যেন আকাশ থেকে পড়লো।

-কিরে তুই এখানে?

-কেন, বিশ্বাস হচ্ছে না?

-তোর না গতকাল রুস্তভ যাওয়ার কথা ছিল।

-ছিল, কিন্তু যাওয় হয়নি। সে অনেক কথা।

ওর বিশ্বাস হচ্ছিল না। গতকাল অপুর্বকে রুমে না দেখে ভেবেছিল ও রুস্তভ চলে গেছে।

-তুই রুমে যা, আমি চিঠিগুলো পোষ্ট করে আসি।

এই বলে অপুর্ব পোস্ট অফিসের দিকে রওনা দিল। রুমে এসে ওর সাথে এ নিয়ে অনেকক্ষন গল্প গুজব হলো। সোভিয়েত সিস্টেমকে অনেকক্ষন গুষ্টিশুদ্ধ করলো। পরক্ষনেই আবার বন্ধুকে সান্তনা দিচ্ছে

-গতকাল যাসনি, তাতে কি? আগামী সপ্তাহে অবশ্যই যাবি।

তুহিনকে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না সে কতো ভালো। সব সময় হাসি খুশী থাকে। কখনো যদি মুখ ভার করে থাকে তা হলে বুঝতে হবে কোন বড়ো সমস্যায় আছে। অপুর্ব আর ওর সম্পর্ক যেন দুই সহোদর ভাই। অপুর্বকে একদিন না দেখলে যেন ওর ভালো লাগতো না, অপুর্বরও খারাপ লাগতো। অথচ তাদের ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস। সোভিয়েত সমাজ ব্যাবস্থার সবচেয়ে বড়ো গুনটি ছিলো প্রতিটি মানুষের জন্য শুধু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা আর চিকিৎসারই নিশ্চয়তা দেয়নি সাথে সাথে মানুষকে করে তুলেছিল মানবিক। একটি  নৈতিক এবং সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠায় নজীরবিহীন সমাজ ব্যবস্থা। দীর্ঘ সোভিয়েত জীবনে ওদের কখনোই মনে হতো না কে মুসলিম বা কে হিন্দু। সকলের মধ্যেই ছিলো এক পরম আত্মীয়তার সম্পর্ক।

 

তুহিন আর অপুর্ব একসাথেই সন্ধ্যায় রান্না বান্না করে খাওয়া দাওয়া করল। রাত তখন ৯টা। কাল ঘুম হয়নি বলে চোখের পাতাগুলি কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে অপুর্বর। বুঝতে পারল দেরি না করে ঘুমোনোটোই এখন উত্তম হবে।

বন্ধু তুহিন চলে গেল তার রুমে। পরের দিন ঘুম থেকে কিছুটা দেরী করেই উঠল। মস্কোর এই তিন বৎসর জীবনে কেন জানি আজকের দিনটাতে কখনোই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারেনি অপুর্ব। ব্যাপারটা যেন রীতিমত একটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। রবিবার। ছুটির দিন। তাই ক্লাশের তারা থাকে না। ফলে সাইকোলজিক্যালি ব্যাপারটা এমন দাড়িয়েছে যে রোববার দেরি করে উঠলে কোন ক্ষতি নেই।

ফলতঃ সকাল ১০/১১ আগে তন্দ্রা কিছুতেই ভাঙ্গে না।

মাঝে মাঝে একটু আধটু অনিয়ম করতে পারার মধ্যেও থাকে কিছুটা সুখ।

 

(চলবে---)



Read full book here: Click here to download the PDF file