মস্কোর বরফবিথী ও একজন সুতপা: পর্ব-চার (৪)


Author: ড. পল্টু দত্ত

Summary:

এখন আমার অস্তিত্ব জুড়েই তার সরব পদচারনা।

ও আমাকে নিয়ে ভাবছে কি ভাবছে না এটাও মনের ভেতরে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। তবে সে সব প্রশ্নের উত্তর আমি কোথায় পাবো? এখন আমার রাত কাটে না, দিন কাটেনা। উদাস দুপুর তাকিয়ে থাকে-এমন অবস্থা। ওর কোন চিঠি পেলে আমার দিনগুলো রঙিন হয়ে ওঠে। কি এক অদ্ভুত ভালোলাগায় ডুবে থাকি। সে অনুভূতি কারো সঙ্গে শেয়ার করার মতো নয়। তার চিঠি পড়তে পড়তে বাতাস লাগা মুড়ির মতো নেতিয়ে না আসা অবধি বারবার পড়ি। লাইনের পর লাইন মিস না করে প্র্রতিটি শব্দে বা অক্ষরের ভাজে ভাজে নতুন কোন অর্থ খুঁজে বেড় করার চেষ্টা করি, কখনো সখনো পুলকিত হই, চোখে মুখে ধরা দেয় কার্তিকের ঘাস ফড়িংয়ের খেলা। ঘুমহীন পলক ক্ষীন চোখে তাকে নিয়ে কত শব্দ সাজাই। খুঁজে বের করি জীবনের নতুন মাত্রা।

 

আমার চিঠি পেয়ে সেও কি এমনভাবে পড়ে? ঠিক আমার মতো? আমার মনের গহীনে এই প্রশ্নগুলো বার বার ধাক্কা দেয়। কত শত ভাবনা এসে টোকা দেয় দরোজায় তা না দেখলে বোঝা যাবে না। ভাবনারা কি বিচিত্র! কোন বাঁধা নেই, কোন সেন্সরের বা অনুমতির প্রয়োজন নেই। যখন তখন মুক্ত বাতাসের মতো যে কোন জায়গায় হানা দিতে পারে কোন সংকেত ছাড়াই।

 

তবে আমার তাতে কী?

সে ভাবুক আর না ভাবুক এ নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। আমার ভাবনায় যে আমি শান্তি পাই, সুখ অনুভব করি এটাই যে আমার বড় পাওনা। এতে আর না হোক কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি, এটাই বড় কথা।

তাছাড়া স্বপ্ন দেখায় কোন দোষ নেই। স্বপ্ন মানুষকে আগামী দিনে আহব্বান করে। কখনো পথ ভোলা পথিক করে নিয়ে যায় দূরে বহু দূরে, কখনো বা উদভ্রান্তি আনে। ওহ্ কি শান্তি!

তবে স্বপ্ন যখন প্রেম আর ভালোবাসাকে নিয়ে তখন তা হয়ে উঠে শক্তিশালী, দূর্বার, জীবনে বেঁচে থাকার দ্বীপ্ত হাতিয়ার। স্বপ্ন হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের মিলন ঘটায়, সম্পর্কের গতিশীলতার মধ্যে বৃহত্তর অন্তর্দৃষ্টি আনতে শক্তি যোগায় এবং ভাবনায়, চেতনায়, মননে সৃজনশীলতার অংকুর ফোঁটায়। 

স্বপ্নগুলি আমাদের অন্তর্নিহিত আকাঙ্ক্ষা এবং আবেগগুলিকে অন্বেষণ করার উপায় হিসাবে আমাদেরকে প্রেরনা দিয়ে যায় প্রতিনিয়ত। স্বপ্ন আমাদেরকে ভাবনার পেখম ছেড়ে উড়তে শেখায়। স্বপ্ন আমাদের অচেতন মনের অভিব্যক্তি হিসাবে কাজ করে। স্বপ্নে আমরা খুঁজে পাই প্রিয়জনের অবয়ব, অনুভব করি কারো উপস্থিতি, শরীরের স্পর্শ কিংবা শুনতে পাই প্রিয় মানুষটির শব্দের জলসিড়ি। একদন্ডের শান্তি!

তার সঙ্গে দেখা হয় নি বটে। তবে যোগযোগ আছে। চিঠি লিখছি- সেও লিখছে। গত চার পাঁচ মাসে অনেকগুলো চিঠি পেয়েছি।

ওর চিঠিগুলো ছোট, প্রয়োজনীয় কিছু কথাবার্তা। সব চিঠিতেই একই অনুরোধ-সাবজক্টটা যেন চেন্জ হয়, মস্কোতে যেন পড়তে পারে।

 

ডাক্তারি পড়ার খুব ইচ্ছে ওর।

চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে সম্ভাবনা খুবই কম মনে হচ্ছে। অপূর্বর ইচ্ছে সুতপা মস্কোতে আসুক, একই শহরে থাকুক। তা হলে ঘন ঘন দেখাশুনা হবে। চোখা-চোখী হবে। ভালো লাগতে লাগতে ভালোবাসা হবে।

ইদানিং ওর প্রতি একটা বিশেষ দূর্বলতা বোধ করছে অপূর্ব। সব কিছুতে কেমন একটা সুখ সুখ ভাব। আকাশে মেঘ করলেও মনের দরজাগুলি খুলে যায়, ভেতরের উদাসী বলাকারা পেখম মেলে উড়তে থাকে।

এইটাই হয়তো এই বয়সের নিয়ম। মনে-প্রানে বসন্তের হাওয়া লাগে। গুন গুন করে গান করতে ইচ্ছে করে। অজানা কোন হরিন চোখা কিশোরী চোখের জলে সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করে। বার বার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে-মাথার চুলের ভাঁজে ভাঁজে চিরুনীর আচর লাগে। একটু স্মার্ট করে নেওয়ার কসরত চলে। এটা নাকি বয়সের দোষ।

 

অপূর্ব ভাবতে থাকে সুতপাকে নিয়ে।

 

কতো চিঠি না লিখেছে সুতপাকে।

রাত জেগে লিখতো চিঠিগুলো। পৃথিবীর সব রংএর তুলি দিয়ে অক্ষরে অক্ষরে সাঁজাতো মনের কথাগুলো। পাতার পর পাতা লিখে যেতো ক্লান্তিহীন ভাবে। দীর্ঘ চিঠি। কখনো সখনে ১৪-১৫ পৃষ্ঠার। সুতপা বলতো-উপন্যাস পেয়েছে।

তবে আমার দীর্ঘ চিঠি পড়তে ও পছন্দ করতো বটে কিন্ত লিখতো খুব ছোট করে।

যেমন ওর গত চিঠিটি ছিলো খুবই ছোট।

কয়েকটি শব্দের গাঁথুনি।

অপূর্বদা.

আমি ভালো আছি

             ইতি

              সুতপা

 

এতো ছোট করে কেউ কিছু লিখে কষ্ট করে পোষ্ট করে কারো কাছে পাঠায় ভাবতেও অবাক লাগে।

তবে আমি পুলকিত হয়ছি। তিনটি শব্দই যেন আমার মনের সাগরে সন্ধ্যার মৃদু বাতাসে ঢেউয়ের দোলা দিয়ে গেলো। হঠাৎ করেই যেন অন্ধকারের ফিকে আকাশটা জোৎসনায় ভরে গেলো।

আমি অনেক কিছুই লিখতাম দীর্ঘ চিঠিতে।

ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছুই বলার চেষ্টা করতাম। সেও আমাকে লিখছে। রুস্তভ যেতে বলেছে। অনেক চিঠিতেই।

 

কিন্তু ইউনিভার্সিটি থেকে পারমিশন পেলাম না। মস্কোর এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতেও পারমিশন লাগে। মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো। বন্ধু মজিদও যাওয়ার কথা ছিলো। মজিদ আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যেমন সেতু, রবিন এবং মাইদুল। আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার এক সাথেই এই দেশে এসেছিলাম। সেই সময় কেউ যদি ইউএসএসআর এর ভিতরে ভ্রমণ করতে চায় তবে তা খুবই সহজ ছিলো। যে কোন দেশের মতোই নিয়ম। সোভিয়েত নাগরিকরা যে কোন জায়গায় মুক্তভাবে ভ্রমন করতে পারতো। শুধু জাতীয় আইডি বা পাসপোর্ট থাকলেই যথেষ্ট। শুধুমাত্র বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ্রমন করার একটা ছাড়পত্র নিতে হতো। তা না হলে সোভিয়েত মিলিশিয়ার মুখোমুখি হলে বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে বিদেশে ভ্রমন

করাটাকে সোভিয়েত সমাজ ব্যবস্থা ভালো নজরে দেখতো না।

 

বিদেশী শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্মের ছুটিতে অনেকেই পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলিতে যেত। বাংলাদেশিরা বিশেষ করে ইংল্যান্ডে যেত ছুটিতে । গিয়ে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে কাজ করতো বাড়তি আয়ের জন্য। সেই সময় সরকারী কর্মকর্তা ছাড়া সাধারন সোভিয়েতবাসী সাধারনতঃ পশ্চিমা দেশগুলিতে যেত না। তবে সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলিতে ভ্রমনের হিড়িক ছিল বেশী। লক্ষ লক্ষ সোভিয়েত নাগরিক সেই সময় ঘুরে বেড়াতো বুলগেরিয়ান সোনালী সৈকতে কিংবা চেকোশ্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া,পূর্ব জার্মানি এবং পোল্যান্ডর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মনোরম সৌন্দর্য অনুভব করতে। সোশ্যালিস্ট ব্লকে যাওয়া লোকদেরকে সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা ‘কেজিবি’ ততো সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষন করতো না। যেমনটি ঘটতো পুঁজিবাদী বা আমেরিকান ব্লকের দেশগুলিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে।

 

যাইহোক আমিও রোস্তভ যাওয়ার অনুমতি না পেয়ে মজিদকে তাড়াতাড়ি খবরটা দিতে গেলাম।

মজিদ আমার কথা শুনে বিশ্বাস করতেই চাচ্ছিলোনা যে আমি অনুমতি পাইনি। ভাবছিলো হয়তো ঠাট্টা করছি। কিছুক্ষন ওর সাথে গল্প গুজব করে ওর ১০ নম্বর ব্লক থেকে কাজের অজুহাত দেখিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু কোথায় যাবো, কার কাছে যাব? স্থির করতে পারছিলাম না। মনটা বড্ডো দুরু দুরু করছিল। মিখলুখা মাখলায়ার রাস্তাার ফুটপাত দিয়েই আমার দুই নম্বর ব্লকের দিকে এগুচ্ছিলাম। মাথার উপর সূর্যটা যেন একরাশি হালকা রোদের প্রলেপ মেখে দিলো। কি সুন্দর আকাশটাকে লাগছিলো। নীল আকাশের বুক চিড়ে কয়েকটি প্রশিক্ষন জেট বিমান ঘন সাদা ধোঁয়ার আস্তর তৈরী করে এগিয়ে চলছে। চারিদিকে পাখিরা আনন্দে ঘুরাফেরা করছে। প্রকৃতি কি এক সৌন্দর্যেও মৌনতায় সেজেছে। আর তার মধ্যে আমি এগিয়ে চলেছি উদ্দেশ্যহীন ক্লান্ত পথিক।

-অপুর্ব, কই যাস?

হঠাৎ কারো শব্দে থমকে দাঁড়ালাম। বন্ধু, প্রিয় সেতু।

ওর মতো এতো নরম মানুষ আমি কখনো দেখিনি। আমাদের ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের মধ্যে সেতু অন্যতম। দেশে থাকাকালীন সময় থেকেই ওকে জানতাম। পড়াশুনায় একটু দূর্বল ছিলো বলে আমার কাছে প্রায় সময়ই আসতো। প্রিপারেটরিতে থাকাকালীন সময়ে একটি বছর আমরা এক সাথে  মেস করে খাওয়া দাওয়া করতাম। আমরা চারজন অর্থাৎ মজিদ,সেতু, মাইদুল আর আমি একসাথে ৬নম্বর ব্লকে থাকতাম। প্রিপারেটরিতে আমাদের ইউনিভার্সিটির সবাইকে এইখানেই রাখা হয়। আমাদের আরেক প্রিয় বন্ধু রবিন থাকতো মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির হোস্টেলে। ওখানে সে পড়াশুনা করে। তবে ছুটির দিনগুলিতে প্রায় সময় আমাদের এখানে চলে আসতো। আমরাও তার কাছে যেতাম মাঝে মাঝে। একসঙ্গে রান্না -বান্না করে খাওয়ার মজাটাই- মস্কো জীবনে একটা অন্যরকম বিষয় ছিলো। তারপরে চলতো ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা। রবিন খুব ভালো গান করতো বলে ওকে আমরা খুব পছন্দ করতাম। খুব লম্বা, মুখ ভর্তি ঘন কালো দাড়ি আর মাথায় আফ্রিকান স্টাইলের ঝাকড়া চুল। গা-গতরে খুব সুন্দর লাগতো ওকে। সবকিছু মিলে খুব ভালো লাগতো রবিনকে।

 

-আরে সেতু? কই গেছিলি? আমি বললাম।

 সেতু বললো-তোর না আজ রুস্তভ যাওয়ার কথা ছিল? তুই এখানে কেন?

আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোন প্রয়োজন বোধ করলো না সেতু।

সব খুলে বলতে হলো। তা না হলে ছাড়বে না। সেতু আমাদেরকে খুব ভালো বাসতো। খুব ভালো সম্পর্ক ছিল আমাদের। ওর সাথে যাওয়ার জন্য খুব পিড়াপিড়ি করলো। কিন্তু মন সায় দিলো না।

কোন রকমে ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার এগুতে লাগলাম।

 

সেতুর সাথে দেখা হওয়ার পর আর কিছুই ভালো লাগছে না। এমনিতেই মনটা খারাপ ছিলো। এখন মাত্রাটা বেড়ে গেলে।

আমার রোস্তভ যাওয়া হয়নি বলে সেতু নিশ্চয়ই মন খারাপ করবে। আমর কষ্টে সেও কষ্ট পায়। সেটা আমি ভালো করে জানি।

আমার আর সুতপার ভালো লাগার কথাগুলো সেতুই আগে জানে। আমার খুশীতে সেও খুব খুশী হয়।

তাই কিছুই ভালো লাগছিল না। চারিপাশের দৃশ্যগুলো কেমন ফ্যাকাসে লাগছিলো। এক দল পাখি জোড়ে আওয়াজ তুলে মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল। চিন চিন করে মাথার বাঁদিকটায় একটা ব্যাথা অনুভব করছিলাম। মুখের সামনে দিয়ে একটি মাছি ভন ভন করে চলে গেলো। বিচ্ছিরি একটা গন্ধ নাকে এসে লেপ্টে গেলো। কিছুই বুঝতে পারলাম না।

 

শেষ পর্যন্ত ট্যাক্সি নিয়ে চলে এলাম টিউশনিতে মীরাদের বাসায়।

যদিও আজ আসার কথা ছিলো না। ওদেরকে আগেই জানিয়েছিলাম আমার রুস্তভ যাওয়ার কথা। আমাকে দেখে তাই ওরা একটু অবাকই হলো।

-স্যার আপনি? অবাক হয়ে মীরা জিজ্ঞেস করলো।

-হ্যা, যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু যাওয়া হলো না। তাই চলে এলাম।

দুএকটি কুশল জিজ্ঞেস করে বসার রুমে হন হন করে এসে বসলাম।

-তোমরা পড়তে আসো-আদেশের সুরেই বললাম

 

কোন উত্তর শুনতে পেলাম না।

ভেতর থেকে মীরার মায়ের আওয়াজ কানে এলো-

-কেডায় আইসে অহন?

-স্যার আইছে মা

 

 বেশ কয়েক মাস হলো বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির বাংলা স্কুলে শিক্ষকতার চাকুরি নিয়েছি। সেই সুবাধেই কয়েকটি টিউশনিও পেয়েছি। সবাই অ্যাম্বাসির কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের ছেলেমেয়ে।

মীরাদের বাসায় তিনজন আমার শিক্ষার্থী।

মীরা সবার বড়ো। দশম শ্রেনিতে পড়ে। আগামি বছরে মেট্রিক পরীক্ষা দিবে। চোখে-মুখে বেশ চঞ্চলতা। তার ছোট বোন ক্লাশ সেভেনে পড়ে। তবে বুদ্ধি শুদ্ধি একটু কম। আর সবার ছোট ওদের ভাই। ক্লাশ ফোরে পড়ে। পড়াশুনায় নীচের দিকে থাকলেও দুষ্টামিতে একেবারে উপরের দিকে। বড়ো শয়তানের হাড্ডি। তবে মীরার মধ্যে বুদ্ধির মাত্রাটা একটু বেশী। সংসারের নিয়ম কানুনগুলি মনে হয় একটু ভালোই বুঝে। মেয়েরা মনে হয় প্রকৃতির নিয়মেই জীবনের অনেক কিছু ছেলেদের তুলনায় বেশী এগিয়ে থাকে। মানুষের মনকে বুঝতে পারে সহজে। স্কুলের অংকে কাঁচা থাকলেও ভালোবাসার অংকে ওরা অনেক এগিয়ে থাকে। মীরার মধ্যেই যেন কেমন একটা ভাব ভাব অনুভূতি খেলে যায়। তার চলা ফেলায়, সাঁজগোজে, কথা বার্তায় কিংবা চাহনিতে স্পষ্ট ধরা পড়ে। বাড়ন্ত মেয়েদের এই এক উদাসী স্বভাব। ভালোই লাগে।

 

বুঝতে পারছি ওরা পড়া রেডি করে নি। মন ভালো না তাই তেমন কোন ধমকও দিলাম না।

টিউশনি শেষ করে বেরুবো, তখনই মীরার বাবা পিছন থেকে ডাকলো।

-অপূর্ব, আজ না হয় থেকে যাও। অনেক রাত হয়ে গেছে। তা ছাড়া তোমার খাওয়া দাওয়াও হয়নিতো।

পাশে চোখ পড়তেই দেখি দুষ্ট মীরা চোখ অর্ধটিপে কি যেন বলার চেষ্টা করছে। ব্যাপারটা বুঝতে দেরী হলো না।

ওরাও চায় আমি আজ থেকে যাই। বিশেষ করে মীরা। ইদানীং লক্ষ করছি মীরা একটু অন্য রকম। চোখে মুখে কেমন একটা ভাব। যেদিন আমি পড়াতে আসি সেদিন বেশ সাঁজগোঁজ করে মনে হয়। নতুন নতুন পোষাক পড়ে। দামী পারফিউমের গন্ধ নাকে লাগে। আমার পাশের চেয়ারটাতেই বসে।

 

আমি বেশ বুঝতে পারি ওর মতলব।

তবে এ নিয়ে আমি খুব ভাবি না। আমার ভাবনারা এখন শুধু একজনকে নিয়েই।

মনে মনে কি যেন ভাবলাম। ফিরে যাওয়াটা হয়তো ঠিক পোষাবে না। যেতে লাগবে একঘন্টা। কিন্তু খাওয়া দাওয়ার কি হবে? রান্না করার কিছুই নেই। এর থেকে ভালো এখানে থেকে যাই।

-ঠিক আছে, চাচা। কিন্তু আপনাদের অসুবিধা হবে নাতো?

-না না তুমি থাকলে বরং ভালোই হবে। কালকের ব্রেকফাস্টটা এক লগে গপসফ করতে করতে খাওয়া যাবে। কাল তুমি না হয় আমার সঙ্গে চলো। অফিস যাওয়ার পথে তোমাকে কোন মেট্রোর পাশে নামিয়ে দেবো।

এই বলেই একটা হাসি দিলেন।

 

তবে এই অপ্রয়োজনীয় হাসিটার কারন খুঁজে পেলাম না।

মনটা এখনো অস্থির। বার বারই ওর কথা মনে হচ্ছে। খুব কষ্ট পাবে ও। রাগও করবে। এই সব ভাবতে ভাবতে চোখের পাতারা ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে পড়লো।

(চলবে---)



Read full book here: Click here to download the PDF file