প্রকৃত সুখ কি এবং কি আমাদের এই পৃথিবীতে আনন্দময় ভাবে বাস করতে পরিচালিত করে? ইদানীং এই প্রশ্নটি আমার মনে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কোন ভাবেই যেন একে মাথা থেকে নামাতে পারছিলাম না। এ নিয়ে বেশ কিছু পড়াশুনাও হয়ে গেলো। ভারতীয় দর্শন থেকে গ্রীক ফিলোসফি সহ টলষ্টয় পর্যন্ত। মাছি মারতে কামান দাগানোই বটে। সম্প্রতি একজন হাঙ্গেরিয়ান মনোবিজ্ঞানী মিহালি সিক্সজেন্টমিহালি ১৯৯০ সালে লেখা “ফ্লো: দ্য সাইকোলজি অফ অপ্টিমাল এক্সপেরিয়েন্স” নামের বইটিও পড়লাম খুব মনোযোগ দিয়ে। বইটির লেখক আমার মতোই একটি সহজ প্রশ্নের অবতারনা করেছিলেন। আমাদের জীবনকে আনন্দময় করে তোলার জন্যে এবং সুখকরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে সবচেয়ে কিসের প্রয়োজন। আনন্দ আর সুখের কোডটি যেন আমাদের সকলেরই অচেনা। অথচ এই দুটিকে পাওয়ার আশায় আমরা কি না করছি। তবে এইটা অন্ততঃ হলফ করে বলা যায় যে আমরা প্রায় সকলেই কোন না কোন ভাবে আনন্দকে কিছুটা হলেও হাতের মুঠোয় আনতে পেরেছি । অনেকে আবার একেবারে বগলচাপায় আগলে রেখে স্বপ্নবিলাশে মশগুল। পৃথিবিটা যেন এক স্বপ্নময়। কিন্তু স্বপ্নের লহমার রেশ কাটতেই শুরু হয় অসহনীয় বিঁশদাতে চেপে ধরা ক্ষত জীবনের এক অসহ্য যন্ত্রনা। তখন মনে হয় কেউ যেন সুখী নয়। হাঙ্গেরিয়ান লেখক সুখ প্রবাহের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সুখ একটি শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি মহাবিশ্বের বিষয়ে বিস্মৃত হয়ে পড়ে। সেই সময়ে সেই ব্যক্তিটি সম্পূর্ণরূপে অর্পিত কাজের উপর সম্পূর্নরুপে মনোযোগী হন। সেই কাজটি ছাড়া অন্য কোন কিছুই সেই ব্যক্তিটির ধৈর্যচুৎ ঘটাতে পারেনা। সেই কাজটিই যেন সেই সময়ের জন্য সেই ব্যক্তিটির পরম প্রাপ্তি এবং শান্তি। কাজটিকে সঠিকভাবে শেষ করাই যেন ব্যক্তিটির পরম ধ্যান এবং কর্তব্য। সিক্সজেন্টমিহালি (Csikszentmihalyi )এর মতে, এমন একটি সময় আছে যখন কোন ব্যক্তির মনে শান্তি, উচ্ছ্বাস বা আনন্দের অনুভূতি তীব্রভাবে অনুভুত হয় এবং সেই ব্যক্তিটি সমগ্র মহাবিশ্ব সম্পর্কে অসচেতন হয়ে ওঠে যা একটি সর্বোত্তম সুখকর অভিজ্ঞতার মুহুর্ত। যখন আমরা সুখ বোধ করি, তখন আমরা সকলেই এটিকে দীর্ঘকাল ধরে লালন এবং ধারন করি—এটিই একটি আনন্দ এবং সুখের প্রবাহ বা মুহূর্ত, একেই সুখ হিসাবে লেখক দেখেছেন।
অথচ কি আশ্চর্যের ব্যাপার এই সহজ কিন্তু চরম সত্যটিকে কি সুন্দরভাবে এবং সাবলীল ভংগিতে আমাকে বুঝিয়ে দিলো আমার একক্ষুদে দাদুভাই যার অবয়বে এখনো শিশুত্বের অমলীন নির্দোষ এবং স্বর্গীয় ভাবটি প্রজ্বলিত। আনন্দ এবং সুখ নিয়ে আমার গুরুগম্ভীর পড়াশুনা এবং গবেষনা এক লহমায় যেন উবে গেলো। আমি সত্যিই খুশী হলাম এই ক্ষুদে বালকের শিশুশুলভ প্রজ্ঞায়। যেন সরলতা সর্বোত্তম। এই ছোট কিশোর বালক যার বয়েস মাত্র বার ছুঁই ছুঁই করছে এবং ক্লাশ সেভেনে পড়াশুনা করছে ঢাকার একটি উচ্চ মানসম্পর্ন বিদ্যালয়ে, পড়াশুনার পাশাপাশি শিল্পকলায় বেশ মনোযোগী। আমার বাংলাদেশ সফর কালের অতি সংক্ষিপ্ত সময়ে কখনো সুযোগ পেলেই আমার কাছে ছুটে আসতো তার কোমল হাতের নানা রং তুলিতে আঁকা বৈচিত্রময় শিল্পের কারুকাজ এবং নান্দনিক শৈল্পকে প্রদর্শন করার জন্যে। মাঝে মাঝে আমার দিকে অতি সন্তর্পনে তাকাতোও বটে যদি না প্রশংসার কোন আভাস পাওয়া যায়। তবে এইটা হলফ করে বলতে পারি সেইদিন এই শান্ত, সৌম্য এবং প্রতিভাবান বালকের শিল্পকলায় আমি সত্যি বিমুগ্ধ হয়েছিলাম, আমার আশির্বাদের করস্পর্শ আমার অজান্তেই এই বালকের শরীর-মন ছুঁয়ে গেলো। অনুচ্চারিত শব্দে বলে উঠলাম অনেক বড়ো হও দাদুভাই, অনেক বড়ো মানুষ। আমার সেই দাদুভাইই সেইদিন আমাকে সুখের দুর্বোদ্ধ এবং জটিল কোডটি বলে দিলো। আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম কখন সে সবচেয়ে বেশী আনন্দ এবং সুখে থাকে। কোন কাজটাই তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ এবং কোন সময়টা সবচেয়ে সুন্দর এবং সুখের সময়। এর উত্তরে খুব ধীর স্থির ভাবে শিশুশুলভ ভংগিতে যা বললো তা হলো-আমি পড়াশুনার পাশাপাশী অঙ্কনশৈলী খুব ভালোবাসী। আমার কাছে আনন্দটা হলো পছন্দের জিনিষটা হাতের কাছে পাওয়া যেমন বাবা-মা যখন আমাকে আর্ট শিখতে উৎসাহিত করে কিংবা আর্টে ব্যবহার হয় এমন জিনিষ আমাকে এনে দেয় আমি খুব আনন্দ পাই তখন। আর সুখটা হলো আমার ভিতরের অনুভুতি। যেমন আমি যখন কোন কিছু আঁকতে বসি কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি আমার আঁকার কাজটিতে এমনভাবে আত্মনিমগ্ন হয়ে পড়ি যে আমি তখন আমার আশে-পাশে কি ঘটছে তা কিছুই বুঝতে পাড়ি না। যখন কাজটি শেষ হয় তখন দেখি চমৎকার একটি চিত্রশৈলি আমি সৃষ্টি করেছি। সে মুহুর্তের সেই স্বর্গীয় অনুভুতিটাই আমার কাছে পরম সুখ। আর যেই কাজটি আমি করলাম সেই কাজটিই সেই সময়ের জন্যে আমার সবচেয়ে প্রিয়কাজ। দাদুভাইয়ের এই কৈশোরিক প্রজ্ঞায় আমি অভিভূত।
আনন্দ এবং সুখ এক নয় – একটি (আনন্দ) বাহ্যিক অবস্থার উপর নির্ভর করে এবং অন্যটি (সুখ) মনের অভ্যন্তরীণ অবস্থা থেকে উদ্ভুত। যে কোনো চরম আকাঙ্ক্ষা এবং বাহ্যিক বস্তুবাদী শক্তি থেকে মুক্ত শুধুমাত্র একটি শান্তিপূর্ণ, শান্ত এবং শুদ্ধ মনই প্রকৃত সুখের উৎস। আমরা সকলেই আজ এক অস্থির এবং অশান্তিময় পৃথিবীতে বসবাস করছি যা প্রাপ্তি আর বস্তুবাদের। বিশৃঙ্খল এবং জাগতিক কামনায় পরিপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে শান্তি ও সম্প্রীতি অর্জন করা অসম্ভব যদি না একজন ব্যক্তি সমস্ত আকাঙ্ক্ষাকে শক্তভাবে দমন করতে না পারে। সুখী হওয়ার জন্য একটি মহাসাগরীয় চেতনা এবং উপলব্ধির অপরিহার্য। তবে সুখের একটা মাত্রা আছে। পৃথিবীর অনেকেই আছেন যারা কখনোই অন্যায়ভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে চায় না; কেউ কেউ সত্যিকারের সুখী, আবার অনেকে অন্যায়ভাবে সুখী।
আমরা কি সত্যিই সুখী? পৃথিবীর সবাই সুখী হতে চায় এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে জীবনযাপন করতে চায়। এটাই স্বভাবিক। যখন আমি আমার শৈশবের কথা চিন্তা করি, তখন আমি ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ি। আমার শৈশব জীবন আনন্দ, শান্তি, উত্তেজনা এবং সুখে পরিপূর্ণ ছিলো। দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও আমি প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। এখন এবং তখনকার মধ্যে বিশাল ব্যবধান। এখন, আমরা সমস্ত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে একটি ডিজিটাল যুগে বাস করছি। বর্ধিত মধ্যবিত্ত পরিবার এবং বিশ্বায়নের গতির সাথে, আমরা প্রচুর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন অনুভব করেছি, দ্রুত আমাদের জীবনধারা এবং জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তন হচ্ছে। ১৯৬০ বা ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে জীবন কঠিন হলেও গ্রামীণ জীবন আমরা শহুরে বা উপ-শহুরে জীবনে যা অনুভব করছি তার থেকে খুব আলাদা ছিলো। মানুষ বেশির ভাগই নির্ভরশীল ছিলো কৃষি ও সংশ্লিষ্ট কাজের ওপর। ধীরে ধীরে উন্নত শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা এবং ভালো সম্ভাবনার সন্ধানে, গ্রাম থেকে বড় শহর এবং উপ-শহরে মানুষ যাওয়া শুরু করলো। মানুষের সার্বিক উন্নয়নের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এমনকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং অন্যান্য প্রধান শহরগুলির মতো উপ-শহরগুলিও উন্নয়নের জোয়ারে দ্রুত গ্রাস করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশ, এবং খুব শীঘ্রই, এটি বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি প্রধান অর্থনীতির একটি হবে। যদিও আমরা সকলেই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কোননা কোন ভাবে কিছুটা হলেও এখনো ধারন এবং লালন করছি কিন্তু আমাদেরকে এই বিশ্বায়ন আর প্রযুক্তির যুগে বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে নতু নতুন সুযোগ তেরী করার জন্যে। আমরা আমাদের আবেগ, অনুভূতি, শান্তি এবং সম্প্রীতির মূল্যে একটি প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যতের সাথে জীবনযাপন করতে শিখছি। আমরা দিনে দিনে আরও আনন্দমুখী হয়ে উঠি যা বাহ্যিক উদ্দীপনার উপর নির্ভর করছে। দুর্ভাগ্যবশত, এটি সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রে বলে মনে হচ্ছে, যেখানে লাভ, ভোগ এবং প্রাপ্তি সর্বাধিকীকরণ সমাজের আদর্শ এবং নীতি।
ইউডাইমোনিয়া (Eudaimonia) একটি গ্রীক শব্দ। প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের মতো গ্রীক দার্শনিকরা সুখের প্রকৃত অর্থের উপর জোর দেওয়ার জন্য ইউডাইমোনিয়া শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এরিস্টটল-এর মতে ইউডাইমোনিয়া একটি প্রক্রিয়া, এবং সুখ হলো আমাদের সবচেয়ে পছন্দের ক্রিয়াকলাপগুলির মধ্যে একটি, এবং যাকে কর্মের ফলাফল হিসাবে দেখা উচিত। একজন মানুষের জন্য সর্বোত্তম সুখকর অবস্থা অর্জন করা গ্রীক দর্শনে ইউডাইমোনিয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য। সুখ এবং অর্থপূর্ণ জীবন যাতে নৈতিকতা, গুণাবলী, নীতি, মর্যাদা এবং নীতিশাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকে তাই ইউডাইমোনিয়া । আমরা কিভাবে ভালো মানুষ হতে পারি? কিভাবে আমরা আমাদের অনন্য সম্ভাবনা পূরণ করতে পারি? তাই ইউডাইমোনিয়ার মৌলিক অন্তর্নিহিত নীতি বা মূল বার্তা। এই ধরনের ইউডেমনিক সুখ অর্জনের জন্য, আমাদের সকলকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, আমাদের সদগুণ গড়ে তুলতে হবে, বর্তমান পরিস্থিতিতেকে গ্রহণ করতে হবে এবং সঠিক প্রজ্ঞার সাথে আমাদের কর্মের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ইউডেমনিক পরিভাষায়, সমাজে একজন প্রকৃত ব্যক্তি এবং নৈতিক নাগরিক হিসাবে, আমাদের সকলকে অবশ্যই আমাদের নৈতিক শক্তির উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে, যেমন ডাক্তারদের উচিত রোগীদের নিরাময় করার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করা, সরকারের উচিত জনগণের সেবা করার ক্ষেত্রে পারদর্শী হওয়া, সরকারী কর্মচারীদেরকে আরও ভাল পরিষেবা প্রদানে দক্ষতা অর্জন করা উচিত। ইউডাইমোনিয়াতে, সুখ আমাদের মালিকানাধীনে ন্যাস্ত কোন বস্তু নয়। এটা কোন ক্ষীন আনন্দ, কিংবা আমাদের সামাজিক বা অর্থনৈতিক অবস্থান নয়, এই সুখ আমাদের সা্বিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে আমরা কীভাবে আমাদের জীবনযাপন করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট থাকা এবং এখনও যা অর্জন করা সম্ভব হয়নি তাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ না করা। আনন্দ বা ভোগবাদী দর্শন সবই অদ্বৈত ধারণা; ইউডাইমোনিয়া এর বিপরীত।
প্রাচীন গ্রীক দর্শন এবং দার্শনিক যেমন অ্যারিস্টটল, প্লেটো এবং অন্যান্যরা দেখেছেন সুখ (ইউডেমোনিয়া) হলো মানুষের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য, এবং নৈতিকতা হলো প্রজ্ঞার সঠিক প্রয়োগ। অতএব, এটি সুখের জন্য একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত যে মানুষের একটি নৈতিক এবং দায়িত্বশীল জীবনধারা রয়েছে। গ্রীক দার্শনিক এপিকিউরাস সুখকে আনন্দের সাথে আন্তঃসম্পর্কিত হিসাবে দেখেছিলেন।ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে, এপিকিউরাস উপসংহারে পৌঁছেছেন যে একটি আনন্দ-সন্ধানী মনোভাব মানবজাতির আদর্শ এবং এটি আমাদের শিশু বয়স থেকে শুরু হয় যখন আমরা জন্মগ্রহণ করি। আমরা সকলেই আন্নদ প্রত্যাশী, বেদনা কিংবা দুংখ অপ্রত্যাশীত। সবচেয়ে উপভোগ্য ক্রিয়াকলাপগুলি মহান আনন্দ প্রদান করে এবং আমাদেরকে ব্যথা ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত করে। তাই এই আনন্দগুলি আমাদের মনের শান্তির জন্য সবচেয়ে সহায়ক। অতএব, এপিকিউরিয়ান সুখ হল ব্যথা এবং চাপ থেকে মুক্তি যা পরম আনন্দ বা শান্তির দিকে আমাদেরকে নিয়ে যায়। এপিকিউরাস বিশ্বাস করতেন যে বাহ্যিক উদ্দীপনা সুখের উপর সামান্য বা কোন প্রভাব ফেলে না। ব্যক্তিগত সুখ সম্পদ, বিয়ে বা লটারি জেতার দ্বারা শর্তযুক্ত নয়; বা দেখতে সুন্দর কিংবা অনবদ্য। এগুলো চিরস্থায়ী নয়। তার জন্য, সুখের সবচেয়ে বড় রহস্য হলো বাহ্যিক জিনিসগুলি থেকে স্বাধীন হওয়া এবং সর্বদা হতাশাকে দূর করে এমন সহজ জিনিসগুলিতে সন্তুষ্ট থাকা। চরম আনন্দ যন্ত্রণা বাড়াবে শুধু। যখন সেই আনন্দটুকু কেউ হারায়; তা পরিনিত হয় উদ্বেগে বা আরও বেশি অবিশ্বাস্য ব্যথা, চাপ এবং হতাশার কারনে আরও আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে পারে।
বর্তমান বস্তুবাদী এবং বিশ্বায়নের বিশ্বে, সুখের ধারণাটির একটি ঘনিষ্ঠ বিষয়গত এবং আপেক্ষিক অর্থ রয়েছে। এইটি ব্যক্তিগত সুস্থতার একটি মানষিক অবস্থা যা ইতিবাচক মানসিক অনুভূতি দ্বারা শর্তযুক্ত, যা কোন ব্যক্তিকে আনন্দের দিকে পরিচালিত করে। এই পৃথিবীতে আমরা সবাই যেভাবে বসবাস করছি, তাতে বিশুদ্ধ সুখ লাভ করা সম্ভব নয়। আমাদের জীবন,আকাঙ্ক্ষা, মিথ্যাচার, পার্থিব জিনিসের প্রাপ্তিতা আর ভোগের লক্ষ্যে পরিপূর্ণ যা অসীম উত্তেজনা, উদ্বেগ এবং অনৈতিক কার্যকলাপের সৃষ্টি করে। তা দিয়ে সাময়িক আনন্দ অর্জন সম্ভব বটে কিন্তু সত্যিকারের সুখ নয়। বিশুদ্ধ সুখ যা সত্যবাদী, সহানুভূতিশীল এবং জটিল আকাঙ্ক্ষার জন্য কোন অপ্রয়োজনীয় লোভ-লালসায় পরিপূর্ন নয়, যা নৈতিকতায় ভরা এবং সাধারণ কাজের মধ্যই সংপৃক্ত। এটি অর্জনের জন্য, ব্যক্তিকে অনুশীলন করতে হবে এবং আনন্দ অর্জনের জন্য সাধারণ জিনিসগুলিতে মনোনিবেষ করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
প্রকৃত সুখ যা দীর্ঘস্থায়ী এবং অকৃত্রিম তা সর্বদা প্রথম দিকে বিষাক্ত দেখায় বা তিক্ত মনে হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত অমৃতের মতোই প্রাপ্ত । সত্যিকারের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং প্রকৃত অভ্যন্তরীণ সুখ ধ্বংস, ব্যথা এবং সমস্যার মাধ্যমেই আসে। প্রকৃত সুখ অর্জনের জন্য আমাদের সকলকেই নানা ধরনের যন্ত্রণা, বেদনা,সমস্যা এবং অসুখের মুখোমুখি হওয়ার সাহস থাকতে হবে। কিন্তু আমরা কি সেই যন্ত্রণা ও সমস্যার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত? আমরা কি আরও নৈতিক হতে পারি? আমরা কি সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল কাজ, নৈতিকতা, নীতির উপর ভিত্তি করে এবং কোন ধরনের মিথ্যা প্রত্যাশা, কিংবা অপ্রত্যাশিত আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি না করে একটি সহজ কিন্তু আনন্দদায়ক সুখী জীবনযাপন করতে পারি? আমাদের সকলের শেষ লক্ষ্য হোক সহজ আনন্দের সাথে সুখ। আমার ক্ষুদে দাদুভাইয়ের মতো সব কাজেই যেন আমরা এক অনিন্দ সুন্দর স্বর্গীয় সুখে হারিয়ে যাই সময়ের অতল গহব্বরে।