অগঠনমূলক সমালোচনাকে আমি কখনোই পছন্দ করি না। গঠনমূলক সমালোচনাকে সর্বদা স্বাগত জানাই। দেখতে নারীর চলন বাঁকার মতো সব সাফল্যকে এক লহমায় উড়িয়ে দেওয়ার মতো ধৃষ্টতা কখনোই ছিলো না। না থাকাটাই সবার জন্যে মঙ্গলকর। এতেই সমৃদ্ধি আসে, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃন হয়, মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা বাড়ে। বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলেছে। দূর্বার গতিতে। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সহ অনেক ক্ষেত্রেই। তাকে অস্বীকার করা যায় না। সত্তরের দশকে যে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ছিলো পর্যুদস্ত, হেনরী কিসিন্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আজ বাংলাদেশ একটি অনেক সম্ভাবনার দেশে পরিনত হয়েছে, খাদ্যে অনেকাংশেই স্বয়ংসম্পূর্ন এবং অচিরেই বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী দেশের একটিতে পরিণত হবে। গত এক দশকের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আমাদের সকলকেই স্বীকার করতে হবে। দেশটি আমাদের জীবনের সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক অগ্রগতির ছোঁয়া এনেছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যা সারা দেশবাসী দেখছে এবং অধিকাংশই তার সুবিধা উপভোগ করছে। আমরা সবাই তার সাধুবাদ জানাই। অন্যদিকে, এটাও অনুধাবন করতে হবে যে অগ্রগতি এবং প্রবৃদ্ধি সাধারণ জনগণের কাছে পৌছাতে হবে এবং জনগণকে এই সাফল্যের সাথে সংপৃক্ত করতে হবে। কিছু লোকের সমৃদ্ধি বা অধিগম্যকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার জন্য সাফল্য হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয় বা প্রশংসার প্রত্যাশাও কাম্য নয়। বাংলাদেশের আটষট্টি হাজার গ্রাম বাঁচলেই সারা বাংলাকে বাঁচানো যাবে। এটাই সত্য। আমরা সকলেই আজ এক ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে আছি গত দুবছর ধরে। কোভিড-১৯ এর ফলে বর্তমান পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত এবং এটি সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মানবিক সংকটগুলির মধ্যে একটি অন্যতম। তবুও, আমাদের সকলকেই উপযুক্ত উপায়ে সঙ্কটে সাড়া দিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সম্মিলিত ভাবে।
কোভিড-১৯ এক সংকটময় পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিলো। তারপর এই নতুন বছরে কিছুদিনের জন্যে খোলা হলেও তা আবারো বন্ধ ঘোষনা করা হয়। ফলস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাগত যাত্রায় উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় গুলিও শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল শিক্ষার পরিবেশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধুমাত্র কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সীমিত আকারে অনলাইন শিক্ষা প্রদান করতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় স্কুল বন্ধের কারণে, বিভিন্ন দেশে সীমিত সংযোগ সহ কয়েক মিলিয়ন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষককে অনলাইন শিক্ষায় স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই পিছিয়ে ছিলো। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনলাইন শিক্ষা প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ এবং ব্যবস্থা একেবারে নাই বললেই চলে। এই নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান যেন এক দুঃসাধ্য কাজ। যার কারনে লক্ষ্য লক্ষ শিশু-কিশোর এই দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো। ডিজিটাল অগ্রগতিতে বাংলাদেশের একটা শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। আর সেই কারনেই আমাদের প্রত্যাশাটা ছিলো অন্যরকম। অন্ততপক্ষে, বাংলাদেশে আরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল শিক্ষা প্রদানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারতো। ভাবতেও অবাক লাগে যে বাংলাদেশের প্রায় সবকয়টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ই এই সংকট কালীন সময়ে শিক্ষাদানে পুরোপরি ব্যর্থ ছিলো। তার কারন, অনলাইন সঠিক শিক্ষাদানে নির্দেশনামূলক প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান নেই। সেই ক্ষেত্রে প্রথম সারির কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ দক্ষতার সাথেই এই কঠিন চ্যালেন্জকে মোকাবেলা করে শিক্ষার্থীদেরকে অনলাই প্লাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানে সক্ষম হয়েছে।
কোভিড প্রাদুর্ভাবের কারনে, সারা বিশ্ব শিক্ষা খাতগুলিতে কার্যকরী পরিবর্তন আনার অনুভব করেছে। দীর্ঘ দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে দেশগুলোতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে ইউরোপ এবং উন্নত দেশগুলিতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বর্ধিত সময়ের জন্য বন্ধ ছিলো না এই করোনা কালীন সময়ে। অনেক প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন সমস্যা বা বাধা ছাড়াই তাদের শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমরা সকলেই এই কোভিড সংকটকে মোকাবেলা করেছি কিন্তু শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকিনি। একদিনের জন্যও যুক্তরাজ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রদান বন্ধ হয়নি। অনলাইন প্লাটফর্মে শিক্ষাপ্রদানের সার্বিক ব্যাবস্থা যুক্তরাজ্যের সবকয়টি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে এবং ছিলো। তাই এই দুর্যোগের প্রথম দিন থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে শিক্ষা প্রদান করতে থাকে বাধাহীন ভাবে। তাই বলে যুক্তরাজ্যের সাথে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলির তুলনা করার প্রয়াস এই লেখায় কোন অবকাশ নেই। তবে এটা অন্ততঃ দুখঃজনক যে ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের শিক্ষার্থীরা ততটা সৌভাগ্যবান নয়, যেখানে ডিজিটাল শিক্ষাদান এবং শেখা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ক্ষেত্র। শিক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে, ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল এবং সংস্থাগুলি দ্রুত শিক্ষাদান এবং শেখার ক্ষেত্রে একটি বিরাট পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহামারীর আগে থেকেই, শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়াগুলি প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম যেমন স্মার্ট বোর্ড এবং অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালু করা শুরু হয়েছিলো। যুক্তরাজ্য সবচেয়ে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলির মধ্যে একটি। এই সংকট থেকে আমরা অন্ততঃ এইটা শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, শিক্ষা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে অবশ্যই সমসাময়িক প্রবণতা অনুসরণ করতে হবে এবং তাদের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে ডিজিটাল শিক্ষার প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরী। ইউরোপীয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন প্লাটফর্মে এমনভাবে শিক্ষার্থীদের শেখার ব্যবস্থা করেছে যা তাদের আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এই সংকট কালীন সময়ে যুক্তরাজ্যে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিতে ভর্তির সংখ্যা অভাবনীয় আকারে বেড়ে যায়।
অথচ ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিস্থিতিটা ছিলো একেবারে ভিন্ন। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা শিক্ষা সেবা দানের সাথে জড়িত তারা সকলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। শুধু ক্ষতিগ্রস্থ হলো আমাদের সন্তানেরা। দুঃশ্চিন্তা আর দূর্ভাবনায় দিন কেটেছে পিতা-মাতা এবং অবিভাবকদের। অথচ সদিচ্ছা আর সুস্থ পরিকল্পনার মাধ্যমে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকেই অনলাইন প্লাটফর্মের আওতায় আনা যেতো। প্রয়োজনে অল্প কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখলেই হতো। অন্তঃতপক্ষে সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অনলাইনে শিক্ষাপ্রদান করাটা ছিলো যুক্তিযুক্ত এবং ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু কোন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ই এই সহজ এবং ন্যায়সঙ্গত কাজটি করতে পারেনি। অথচ কথায় কথায় বলি ডিজিটাল বাংলাদেশ। স্কুল কলেজের কথা না হয় বাদই দিলাম, যেখানে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সংকট কালীন সময়ে শিক্ষা দিতে ব্যর্থ দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব করার কোন অবকাশ আছে কী? এ যেন আমাদের অস্তিত্বকে বাঁচানোর সংকট। অথচ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীরাই ভলো মোবাইল ফোন ব্যাবহার করে বলেই মনে হয়। যেখানে ১৬ কোটি ৪০ লক্ষ্য জনসংখ্যার দেশে ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। পৃথিবীর অষ্টম স্থানে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবহারে।
কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময়, দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষা প্রতি্ঠাগুলি বন্ধ থাকার কারনে শিক্ষার্থীরা শেখার ব্যাঘাত অনুভব করেছিলো তীব্রভাবে। বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে স্কুল ও কলেজ বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক ভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা আনন্দ পেলেও পরের দিকে অনেকেই মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলো। এক অস্বাভাবিক দূর্ভাবনা আর অশান্তির মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করছিলো। বিশেষ করে দুঃসহ বর্তমান আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবেই।। এটা সত্য যে শেখার কৌশলগত পরিবর্তনের ফলে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের আগ্রহে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিলো। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে শারীরিকভাবে শিক্ষাপ্রদানে অভ্যস্থ ছিলো যুগ যুগ ধরে হঠাৎ করে নতুন ভার্চুয়াল পদ্বতিতে স্থানান্তর করাটা যেন এক অসাধ্য কাজ। অথচ আমরা সব সময় দেখে এসেছি প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার চাহিদা পূরণে কি দারুন সহায়তা করে। কারন, শিক্ষকরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর নির্দিষ্ট চাহিদার সাথে মানানসই করে তাদের পাঠ পরিবর্তন করতে পারেন এই প্রযুক্তগত শিক্ষাদানের মাধ্যমে। ডিজিটাল শিক্ষার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো শিক্ষার প্রসারতাকে বাড়ানো অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহনের পথকে সকলের জন্য সহজ করা। শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা এবং অনুপ্রেরণাকে উন্নত করা এবং তাদের সময় ও অর্থ বাঁচাতে সাহায্য করা। ডিজিটাল লার্নিং পদ্বতিতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়কেই সময়, স্থান এবং বয়সের পরিপ্রেক্ষিতে শেখার এবং শেখানোর ক্ষেত্রে বিস্ময়কর পরিবর্তন এনে দিয়েছে, যা সকলের জন্যেই সুবিধাজনক
কোভিড মহামারী এবং লকডাউন পরিস্থিতির কারনে সারা বিশ্বে ডিজিটাল লার্নিং এর চাহিদা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। উন্নত প্রযুক্তির কারণে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের শিক্ষাদানের অনুশীলন চালাতে পারে খুব সহজ ভাবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এই জাতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। স্ব-অধ্যয়ন এবং দূরত্ব শিক্ষা এখন সম্ভব যা শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে শেখা এবং শিক্ষাদানের উপকরনগুলির সহজ ভাবে অ্যাক্সেস করতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্রমণ না করেই ঘরে বসেই করতে পারে। যার ফলে শিক্ষার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছ। সাথে সাথে, শিক্ষকরা সৃজনশীলতা প্রদর্শন করতে, শেখার প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে, স্বচ্ছতা প্রদান এবং শিক্ষামূলক উপাদানের পরিসরকে বিস্তার করতে বিশেষ ভুমিকা রাখছে এই অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতিতে। পাঠদান পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনায় বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এমন কি আমাদের ইউরোপীয়ান শিক্ষার্থীরা এই ভার্চুয়াল শিক্ষা পদ্বতিকেই সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় মনে করছে। যেন এটি একটি নতুন স্বাভাবিকতা। যখন শিক্ষার্থীদের শারীরিক ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষা গ্রহন করতো, তখন তাদের কেবল শোনার প্রক্রিয়া কিংবা দেখার মাধ্যমেই সবকিছুকেই ধারন করতে হতো। ডিজিটাল শেখার পদ্ধতি বাস্তবায়নের কারণে শিক্ষার্থীদের মেমরি প্রসেসিং ক্ষমতার উন্নতি হয়েছে, কারণ এই প্রক্রিয়ায় দেখা, শোনা এবং মনে রাখা সবই অন্তর্ভুক্ত। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে যে ডিজিটাল লার্নিং প্রক্রিয়া শারীরিক শিক্ষার প্রক্রিয়ার চেয়ে বেশি কার্যকর। ডিজিটাল শেখার পদ্ধতি বাস্তবায়নের পর, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কর্মক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে।
এই মহামারি আমাদের সবাইকে এক নতুন বাস্তবতার সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে। মৃত্যু এবং অর্থনৈতিক পরিণতি ছাড়াও আমাদের সার্বিক পরিস্থিতিকে করে দিয়েছে উলট-পালট। আমাদের শিক্ষাকে করেছে ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ যা সহজেই অপূরনীয়।। ২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে, সমস্ত সরকারী এবং বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের দরজা বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশের প্রায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নথিভুক্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস দিতে পারেনি। যেমনটি অন্যান্য দেশেও ঘটেছে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব ছিলো একটি বড়ো ধরনের সমস্যা। তবে সবটাই একেবারে হতাশার ছিলো না। কিছু স্কুল/প্রতিষ্ঠান লাইভ ইন্টারেক্টিভ কোর্স, পূর্ব-রেকর্ড করা বিষয়বস্তু এবং হোমওয়ার্ক-ভিত্তিক ডিজিটাল সেশন দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যদিও সারাদেশের অবস্থা এমনটা ছিলো না। সরকারের উদ্যেগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে প্রাক-রেকর্ড করা স্বল্প পরিসরে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের জন্য শেখার উপকরন দেশব্যাপী সম্প্রচার করার ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীরা যাতে একটি নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা গ্রহনে সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাস এবং জ্ঞানের অবাধ প্রবাহ অব্যাহত রাখতে সহায়তা করেছে। প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষ স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দূরশিক্ষণ শিক্ষা সম্প্রচার শুরু করে যদিও সুযোগ ছিলো সীমিত। কারন শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেকের বাড়ীতেই কোন টেলিভিশন নেই বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই। আমাদের সকলকে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের এই প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তার জন্য আমিও সাদুবাদ জানাই। তবে সাথে সাথে এও প্রত্যাশা করি সরকারের কাছে যেন দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগুলি দেশের শিক্ষানীতিতে সংপৃক্ত করা হয়, যে কোন সংকট কালীন সময়ে যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব নয় সেখানে যেন অনলাইনে তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী এবং পরিকল্পিত শিক্ষাপ্রদানে সক্ষম হয়।
ইন্টারনেট সম্পদ ব্যবহারের সাথে, একটি ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার সম্ভাবনা প্রায় সীমাহীন। প্রযুক্তির প্রবৃদ্ধি ও ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তাতে সন্দেহ নেই। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে, এবং একটি দেশ হিসাবে আমরা ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে চলেছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ অন্যান্য অনেক দেশের জন্য রোল মডেল হিসাবে কাজ করছে। এটাই উপযুক্ত সময়। সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক এবং সাধারণ জনগণের উচিত একটি কার্যকর ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতা করা এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করা। একট শক্তিশালী ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন যা দেশব্যাপী যে কোনো লকডাউনের পরিস্থিতিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করবে এবং আমাদের বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকতে সংপৃক্ত থাকবে। শিক্ষা জাতীর এক অপরিহার্য সম্পদ এবং আমাদের সন্তানদেরকে শিক্ষিত করা আমাদের সার্বিক দায়িত্ব। শেখানো এবং শেখার প্রক্রিয়া কোন ভাবেই বন্ধ করা উচিত নয়; পরিবর্তে, এটি চালিয়ে যাওয়া উচিত, এমনকি কঠিন সময়েও ।