লিও টলস্টয়, একজন মহান বিশ্বনন্দিত রাশিয়ান লেখক, চিত্রকর, দার্শনিক যিনি অসংখ্য প্রশান্তবাদী বিশ্বনন্দিত জনপ্রিয় এবং অমূল্য ছোট গল্পের রচয়িতা। তার মধ্যে একটি নৈতিক ছোটগল্প তিনটি প্রশ্ন (three questions) নামে লিখেছেন যা তিন পৃষ্ঠার কম এবং ১৬০০ শব্দের চেয়ে কম শব্দের, এবং যা ১৫-১৬ মিনিটের মধ্যেই পড়ে শেষ করা যায় এমন কি ধীর পাঠক হলেও। সব বয়সের এবং সর্বকালের জন্য লেখা একটি অনবদ্য উপমামূলক ছোটগল্প যা ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো। টলস্টয় যুদ্ধ ও শান্তির (war & peace) মতো তাঁর বিস্ময়কর রচনার জন্য বিশ্বখ্যাত হিসাবে পরিচিত এবং বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে; তার লেখা আনা কারেনিনা (Ana kerenina), দা ডেথ অব ইভান ইলিচ (The Death of Ivan Ilyich) এবং শৈশব (Childhood) এর পাশাপাশি ছোট গল্পগুলিও পাঠকের কাছে বিশেষ স্থান করে নিতে পেড়েছে। তিনি আমার একজন অন্যতম প্রিয় লেখক। আমি এই গল্পটি আমার শৈশবকালীন শিক্ষার সময় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি পাঠ্যক্রমের অংশ হিসাবে পড়েছিলাম। গল্পটি আমার সমগ্র জীবনে গভীর এবং ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিলো। অনেক সময়, আমি এই গল্পটি আমার সন্তানদের এবং শিক্ষার্থীদের শুনিয়েছি। আমি নান্দনিক চর্চার এবং নৈতিক শিক্ষার পথ হিসাবে এই গল্পটি দিয়ে যেকোনো নতুন ক্লাস শুরু করি। টলস্টয়ের তিনটি প্রশ্ন একজন সম্রাটের এক শক্তিশালী নীতিগর্ভ রূপক কাহিনী। সম্রাট তিনটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিলেন এবং তাঁর রাজ্য থেকে কারও কাছ থেকে তার সন্তোষজনক উত্তর পান নি। তিনি মন্ত্রিপরিষদ সহ রাজ্যের শীর্ষ বেসামরিক কর্মচারী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং অন্যান্যদের সহ বিভিন্ন গ্রুপকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবুও, তিনি তিনটি প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর কারো কাছ থেকে পান নি। তিনটি প্রশ্ন হলো: (১) আপনার কাছে সেরা ব্যক্তি কে? (২) কোন কাজটি কারও পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ? (৩) কখন কিছু শুরু করার সেরা সময়? সম্রাটের ধারনা তিনি যদি এই তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর পান তা হলে তিনি রাজ্য পরিচালনায় বেশী সাফল্য হবেন এবং রাজ্যের জনগনকে আরো ভালোভাবে সেবা করার সুযোগ পাবেন।
সঠিক উত্তর না পেয়ে সম্রাট কিছুটা নিরাশ হলেন। সম্রাট অবশেষে উত্তরের জন্য একটি গভীর পাহাড়ে বাস করেন এমন এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে নিজকে সবচেয়ে সুখী এবং মহান শাসক হিসাবে পরিণত করতে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর অতীব জরুরী এবং এই বৃদ্ধ সন্নাসীই তাকে সঠিক উত্তর দিয়ে সহায়তা করবেন। সম্রাট বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে পৌঁছানোর জন্য তার যাত্রা শুরু করলেন এবং. অবশেষে, তিনি সেই সন্ন্যাসীকে খুঁজে পেলেন যিনি সেই সময়ে একটি বাগান খননে ব্যস্ত ছিলেন। সম্রাট অতি বিনয়ের সাথে সন্নাসীকে তিনটি প্রশ্ন করলেন এবং উত্তর প্রাপ্তির আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিন্তু বৃদ্ধ সন্ন্যাসী সম্রাটকে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দেননি।কিছুক্ষনের নিরবতা উভয়ের মধ্যেই। কিছুক্ষণ পরেই একটা বিকট শব্দে তাদের একাগ্রতা ভেঙে গেলো। কিছু দুরেই একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। বৃদ্ধ সন্ন্যাসী এবং সম্রাট উভয়েই তার সাহায্যে ছুটে আসেন এবং তাকে স্থিতিশীল হতে সাহায্য করেন। একাগ্রচিত্তে তার সেবাদান করে। তারা তার জীবন বাঁচিয়েছে সঠিক সময়ে সঠিক সেবা দিয়ে। অবশেষে সম্রাট জানতে পারলো যে আহত ব্যক্তিটি সম্রাটের শত্রুদের একজন, যে যুদ্ধক্ষেত্রে তার ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সম্রাটকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছিলো। তিনি ধৈর্য সহকারে সম্রাটকে হত্যা করার অপেক্ষায় ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি সম্রাটের রক্ষীদের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং ভুমিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘাতক বুঝতে পেরেছিলো যে তার জীবন রক্ষাকারী সম্রাটকে তার হত্যা করা উচিত নয়, পরম ভালোবাসা আর সম্রাটের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় নিজকে আপ্লুত করে তুলেন এবং তাদের মধ্যে পুনর্মিলন ঘটে। সম্রাট এখন আবারো সন্নাসীকে তার তিনটি প্রশ্ন করেন। এবার বৃদ্ধ সন্ন্যাসী সম্রাটকে লক্ষ্য করে বললেন যে জ্ঞানকে সবসময়েই অভ্যন্তরীণ না করে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে, সবাইকে ভালোবাসতে হবে কাছের মানুষ হিসাবে- হউক সে শত্রু কিংবা মিত্র এবং কর্তব্য কর্ম করতে হবে মনোযোগ দিয়ে। সম্রাটের বুঝতে কোন অসুবিধা হলো না। সন্নাসীর উত্তরের মধ্যে দিয়েই সম্রাট তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন।
বৃদ্ধ সন্ন্যাসী সম্রাটকে বলেছিলেন "এখনই সেরা সময়", সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন এমন কেউ যার সাথে আপনি সেই মুহুর্তে আছেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো "সেই ব্যক্তিকে" ভালভাবে দেখা বা সেই ব্যক্তিটির সাথে গুনগতমানের সময় কাটানো। শত্রু হয়েও পরম যত্নে সম্রাট তার শত্রুকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেন। তাই সেই ব্যক্তিটিই সেই সময়ের জন্যে সম্রাটের কাছে সবচেয়ে প্রিয়জন, এবং সেবা করাটাই ছিলো সেই সময়ের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ, আর সেই সময়টিই ছিলো সবচেয়ে সেরা সময়। আমাদের সবার উচিত বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করা এবং যত্নবান হওয়া উচিত তখনকার সেই সময় বা ক্রিয়াকলাপের উপর, ক্রিয়াটির ফলের উপর নয়। আমাদের প্রত্যেকের উচিত বর্তমানের আনন্দকে উপলব্ধি করা এবং লালন করা। একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপন করা অপরিহার্য, যার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। সেই "এখন" এর সাথে যুক্ত কাজ এবং ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার, ফোকাস এবং সম্মান দেওয়া উচিত। এটি তখনই যখন সর্বোত্তম সুখ অর্জন করা যায়। একজন হাঙ্গেরিয়ান মনোবিজ্ঞানী মিহালি সিক্সজেন্টমিহালি (Mihaly Csikszentmihalyi) যিনি ১৯৯০ সালে “ফ্লো: দ্য সাইকোলজি অফ অপ্টিমাল এক্সপেরিয়েন্স”( Flow: The Psychology of Optimal Experience) নামে একটি বই লিখেছিলেন, তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন, তা হলো-জীবনকে সাফল্যমন্ডিত এবং আনন্দদায়ক করে তোলার জন্যে সবচেয়ে কি প্রয়োজন। তিনি প্রকৃতির প্রবাহ (nature of flow) নিয়ে আলোচনা করেছেন - এমন একটি শারীরিক ও মানসিক অবস্থা যা কোন ব্যক্তিকে সুখের দিকে পরিচালিত করে যখন একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ উদ্যম, আনন্দ, উত্তেজনার সাথে হাতের কাজগুলোর সাথে সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত এবং নিবর ভাবে জড়িত থাকেন এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে একেবারেই উদাসীন হয়ে পড়েন।
তিনটি প্রশ্নের নৈতিক বার্তা গভীর। আমরা সকলেই সুখের সন্ধান করছি বা সাফল্যের পেছনে দৌড়াচ্ছি কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে কেউই এটি অর্জন করতে পাড়ছিনা। আমার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর কালে, আমি কিছু অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছি যেগুলি মানবিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার অবক্ষয় হিসাবে দেখা যেতে পারে। সমাজ হিসেবে আমরা আরও বেশি আত্মমগ্ন, স্বার্থপর, লোভী, অহংকারী হয়ে উঠছি দিন দিন। আমাদের সার্বিক মানষিকতার বিরাট পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, প্রায়শই আমরা অস্থিরতা এবং হতাশার মধ্যে দিয়েই দিনাতিপাত করছি এবং এই অসহনীয় পরিস্থিতিকেই বিকল্প বলে মনে করছি বা মেনে নিচ্ছি। বিষয়গুলিকে আরও খারাপ করার জন্য দুর্নীতিকে শুধুমাত্র জীবনযাপনের উপায় হিসাবে গ্রহণ করা হয়নি বরং কেউ কেউ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে বলে মনে হয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই বস্তুগতভাবে আরামদায়কভাবেই জীবন কাটাচ্ছে অন্ততঃ অর্থনৈতিকভাবেতো বটেই, তবুও আমরা আমাদের জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট বলে মনে হয়। আমরা আমাদের আত্নপরিচয় এবং উদ্দেশ্য অনুসন্ধানের পিছনে ঘুরছি, যা দেখে আমার প্রায়শই মনে হয় যেন আমাদের সভ্যতায় কোনো সংকট রয়েছে।
আমার বাংলাদেশ সফরকালে, আমাদের সামাজিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা এবং সম্পর্ক, বন্ধন, আস্থা, শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সমস্যাগুলির বিভিন্ন পর্বে আমি বিশেষভাবে চিন্তাগ্রস্থ এমনকি কখনো কখনো আতঙ্কিত হয়েছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে দিনের পর দিন আমরা অজান্তেই একটি মেগা-ক্রাইসেস জোনে প্রবেশ করছি। আমার সফরকালে আমি মিডিয়ার মাধ্যমে এবং নানাজনের সাথে কথা বলে জীবনের বিভিন্ন হতাশাজনক এবং অস্থিশীলতার পর্ব প্রত্যক্ষ করেছি। নানাবিধ সামাজিক এবং পারিবরিক সমস্যার যাঁতাকলের মধ্যে দিয়ে অতিবাহীত হচ্ছে আমাদের এককালের দ্রুপদীয় নান্দনিক জীবনযাত্রা। যেখানে আত্নকেন্দ্রিকতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই জীবনের সার্বিক দর্শনে পরিনত হয়েছে। একটি দুঃখজনক অসহ্য সামাজিক দর্শন। এটিই এখন একটি সাধারণ থিম এবং জীবনযাত্রার উপায়। এর ব্যর্তয়ই যেন অস্বাভাবিক এবং অপ্রাসঙ্গিক। শ্রদ্ধা, ভালবাসা, স্নেহ, মর্যাদা, সততা এবং নীতি, বাস্তব এবং অর্থবোধক আবেগ সবই একটি অজানা এবং জীবনের জন্যে অর্থহীন। এমনকি একটি অপরিচিত অঞ্চল বলে মনে হয়েছিলো।
এই সমস্যার মূল কারন কী? লোভ এবং নৈতিকতার অবক্ষয়। নৈতিক শিক্ষার অভাব। সমাজ লোভ এবং হিংসার উপর স্থির হয়ে আছে যেখানে অর্থনৈতিক উন্নতিই মূখ্য তা যে ভাবেই অর্জিত হউক না কেন। বস্তুগত এবং পেশাগত সাফল্য অর্জন করতে, বা সফল হতে কোন ধরনের শর্টকাট কিংবা দূর্নীতি আর কোন সামাজিক সীমাবদ্ধতা নয়। মিথ্যা, প্রতারণা, ঘুষ, অপরাধ প্রবণতা এবং নানা ধরনের এবং নানা মাত্রীক অসাধু ও অনৈতিক সম্পর্ক, মিথ্যা ও বানোয়াট অপরাধ হরহামেশাই সংঘটিত হচ্ছে এবং যা খারাপ তা স্বাভাবিক বলেই যেন মনে হচ্ছে সকলের কাছে। যা অনৈতিক তাই সকলের কাছে আদর্শ বলে মনে হয়। আমরা আজ সকলেই কৌশলী হয়ে গেছি এই বিশৃঙ্খল সমাজে আমাদের অজান্তেই। সম্পদ বা অবস্থান কীভাবে অর্জিত হয়েছিলো বা হচ্ছে তা আমরা জানতে চাই না, আমরা কেবল মর্যাদা, গৌরব এবং অন্যের মনোযোগ উপভোগ করতে চাই এবং সদা ব্যস্ত। এর জন্যে দায়ী কে? শুধু কি যে অপরাধের সাথে সরা সরি সংপৃক্ত নাকি পরিবারের সবাই যারা সকলেই এর অর্থৈনতিক সুবিধা গ্রহন করছে?
দূষিত বা কলুষিত আনন্দ এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি একসাথে থাকতে পারে না, তারা একেবারেই বেমানান। টলস্টয়ের তিনটি প্রশ্ন আমাদের একটি নৈতিক বার্তার জানান দেয় যা জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে, তা হউক আমাদের পেশাগত আচরণ, সামাজিক সম্পর্ক, উপযুক্ত অভিভাবকত্ব বা মননশীলতার সাথে কোন কিছুকে মোকাবিলা করা। আমি বাংলাদেশে লক্ষ্য করেছি যে অনেক পিতামাতাই তাদের বাচ্চাদের বা স্কুল বয়সী সন্তানদের সাথে সত্যিকারের গুনগত মানের সময় কাটাতে আগ্রহী বলে মনে হয় না। সব পিতা-মাতাই দেখেছি নিজেদের কাজ কিংবা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আডডা নিয়েই ব্যস্ত।
এটি একটি ট্র্যাজেডি, কারণ বাবা-মাই একজন মহান শিক্ষক হতে পারেন, এবং সন্তানদের সাথে একসাথে কাটানো সময় স্মৃতি তৈরি করে, যার অনেকগুলি সারাজীবন স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্যি যে, কিছু বাবা-মা তাদের দায়িত্ব পালনে কোন ভূমিকা রাখছেনা এবং তাদের সন্তানেরা টিউশনে যায় বলে গর্ব করে কিছু ধরণের সামাজিক সুবিধা লাভের চেষ্টা করে। এমনকি আমরা এমন ঘটনাও শুনেছি যে অভিভাবকরা একটি সন্তানের ভবিষ্যত পথকে মসৃণ করার জন্য শিক্ষক বা পরীক্ষকদের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিটি শিশুই একটি আশীর্বাদ, তাই প্রতিটি পিতামাতাকে তাদের বাচ্চা বা শিশুদের সাথে সময় কাটাতে, তাদের পড়তে, গল্প বলতে, প্রাকৃতিক বিশ্বের গৌরব সম্পর্কে তাদের বোঝানোর জন্য সময় করা উচিত। দিনের কিছুটা অংশ আমাদের বাচ্চাদের বা সন্তানদের জন্য বিচক্ষণতার সাথে ব্যয় করে আমরা জীবনের কিছু চাপ এবং স্ট্রেন ভুলে যেতে পারি, আমরা তাদেরকে উত্সাহিত করতে কিংবা অনুপ্রেরণা দিতে পারি এবং যেখানে সম্ভব তরুণদের প্রশংসা করতে পারি, তাদের আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতার বিকাশে সহায়তা করতে পারি। পিতামাতারা দুর্দান্ত শিক্ষক হতে পারেন এবং শিশুরা প্রায়শই তাদের পিতামাতার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে।
প্রতিদিন আমাদের সন্তানদের সাথে কিছুটা সময় ব্যয় করা শিশু এবং বাবা-মা উভয়ের জন্যই সবচেয়ে সন্তুোষজনক এবং সুখকর হতে পারে। যদি পিতামাতারা বুঝতে পারেন যে তাদের সন্তানরাই সেই মুহুর্তের জন্যে তাদের কাছে সবচেয়ে ‘সেরা ব্যক্তি’ বা প্রিয়জন এবং তারা যে শিক্ষাগত সহায়তা বা গুনগতমানের সময় সেই মুহুর্তে প্রদান করছে সেই কাজটিই মহৎ বা 'সেরা কাজ', আর যে সময়টি তাদের সাথে কাটিয়েছে বা কাটাচ্ছে সেই সময়টিই হলো 'সেরা সময়' তা হলেই জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে আমরা করতে পারি আনন্দময় এবং ফলপ্রসু। গল্পের সম্রাটের মতো করে আমরা সকলেই যদি এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর আবিষ্কার করে আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তা হলে আমাদের জীবন হতে পারে অশান্তিহীন, না পাওয়ার বেদনা কিংবা অপ্রাপ্তির দুঃখে আমরা বিচলিত হবো না। প্রতিটি কাজই করা যাবে ভালোভাবে এবং সাফল্যের সাথে। প্রতিটি মুহুর্ত হয়ে উঠবে আনন্দদায়ক এবং প্রতিটি মানুষই যাদের সংস্পর্শেই আমরা আসিনা কেন হয়ে উঠবে আমাদের অতি আপনজন অতি কাছের মানুষ। জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে সাফল্যময় করে তোলার এই এক পরম শিক্ষা টলষ্টয় আমাদেরকে দিয়ে গেছেন তার ‘তিনটি প্রশ্ন` ছোটগল্পের মাধ্যমে।