বাংলা আমাদের সকলের। বাংলার রয়েছে একটি বলিষ্ঠ এবং দূর্দান্ত সংস্কৃতির ইতিহাস যা দূর্বার পাহারের মতো সবল এবং অটুট। এ বাংলার মানুষের শতাব্দী বছরের বিশ্বাস আর ভালোবাসার মিথস্ক্রিয়ায় বেড়ে উঠেছে বাংলার আকাশ-বাতাস-নদী-নালা আর দিগন্তব্যাপী সবুজে ঘেরা হাজারো শ্যমলী গ্রাম আর কিষানীর হাসি। এখানেই এই বাংলার শীতল মাটিতে যুগ যুগ ধরে শুয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জসীম উদ্দীন -শেখ মুজিবুর রহমান সহ হাজারো বছরের বাংলার শ্রেষ্ট সন্তানেরা। এখানেই এই বাংলায় শুয়ে আছেন আমার পিতা-প্রপিতামহগন কি নিবির শান্তিতে। এই বাংলাই আমার বিশ্বাস, এই বাংলাই আমার প্রান। সম্ভব হলে আমি বারবার জন্ম নেবো এই বাংলায়। আমি সম্ভব হবো যুগে যুগে। মৌর্য, গুপ্ত, মুঘল এবং ব্রিটিশ রাজ প্রত্যেকেই এই সাম্রাজ্যের উত্থান -পতন পর্যবেক্ষণ করেছে নিবিড়ভাবে এবং প্রত্যেকে এই উর্বর ভূমিতে অনিবার্য চিহ্ন রেখে গেছেন বারবার। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টান আর নানা ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাংস্কৃতিক রীতিনীতি গঠন করেছে এই বাংলার আসল চেহারা, মুঘল আমল থেকে ইসলামের অসাধারণ বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাষা, সঙ্গীত, কবিতা, সাহিত্য ও শিল্পের সমৃদ্ধ এসেছে, যা এই দেশের মানুষ লালন করে এবং যথাযথভাবে গর্বিত। আমরা এই বাংলারই গর্বিত মানুষেরা শতাব্দী ধরে বেঁচে আছি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত ধরে। মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনীতে আর ঘুম জাগানীয়াদের হরিনাম ধ্বনীতে ঘুম থেকে জেগে উঠেছে ধলপ্রহরের আলোতে এই বাংলার মানুষ। এই আমাদের একান্তই আপন। এখানেই আমাদের বসবাস।
বাংলাদেশ বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণবন্ত দেশগুলির মধ্যে একটি যেখানে লক্ষ মানুষ স্বাধীনতার সন্ধানে চূড়ান্ত মূল্য দিয়েছে। একটি নৃশংস ভয়াবহ যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো, যার মধ্যে একাধিক চ্যালেঞ্জ থাকার মধ্যেও আমরা ছিলাম দুর্জয় গিরির মতো অটুট এবং একতা ছিল আমাদের পথ চলার দিশারী। বাংলাদেশের মানুষ সব সময় ধর্ম, জাতি এবং গোষ্ঠি নির্বিশেষে একে অপরের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা, সহনশীলতা এবং মুক্ত চিন্তার মনোভাব দেখিয়েছে। অনেক জাতীয় সংকটের বছরগুলিতে আমরা সবাই একসাথে পথ চলেছি, একসাথে লড়াই করেছি এবং একসাথে দেশের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেছি যার যার ধর্মশালায়। আমরা সবাই মিলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মুক্ত হওয়ার দাবি করেছিলাম। সবাই একসাথে দাঁড়িয়েছি যখন পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব বাংলাকে অবিশ্বাস করতে এবং আমাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ঘৃন্য পদক্ষেপ এবং ষড়যন্ত্র করা শুরু করলো, যা একসময় পূর্ববঙ্গের মধ্যে বিরক্তি ও বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি করে। জাতীর পিতার উদার এবং বলিষ্ঠ কন্ঠের আহব্বানে সমস্থ দেশবাসী ঝাঁপিয়ে পরেছিলো স্বাধীনতার যুদ্ধে। তারও আগে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক বাংলার ওপর সাংস্কৃতিক ও ভাষাগতভাবে আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের জনগণ জোরালোভাবে প্রতিবাদ করেছিলো। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য প্রতিবাদ করে প্রান দেওয়া বাংলার দামাল ছেলেরাই প্রথম সৃষ্টি করেছিলো। আমরা সবাই একসাথে লড়াই করেছিলাম, আমাদের মাতৃভূমি, আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের প্রিয় মাকে রক্ষা করার জন্য কি এক মহান আকাঙ্ক্ষা এবং সুন্দর স্বপ্নকে ঘিরে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১), যা নয় মাস স্থায়ী হয়েছিলো, তা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। যদিও পশ্চিম পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করে, কিন্তু এই যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী প্রান হারিয়েছিলো, লক্ষ মা-বোনেরা ইজ্জত দিয়েছিলো এবং সারা দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে পঙ্গু করে দিয়েছিলো পচ্চিম পাকিস্তানের শাষকগোষ্ঠী। এই হলো বাংলা ভাষা ভাষীর এই ভূখন্ডের মানুষদের ঐক্যে এবং ভালোবাসার ইতিহাস। এক অসীম প্রত্যয়ের ইতিহাস যা কখনো ঠুনকো হতে পারে না।
এই বাংলার মানুষদের একটি অসাধারণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে যা আমাদের মূল মূল্যবোধ, বিশ্বাস, এবং রীতিনীতি বহু শতাব্দীর গভীরে প্রোথিত, যুগ যুগ ধরে যা চলে আসছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ কিছু খারাপ এবং জঘন্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাক্ষী হয়েছে। শত শত বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে এবং বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশীদের দ্বারা ধর্ষণ ও হত্যাসহ জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিছু কুচক্রী এবং ধর্মের ধ্বজাধারী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বার বার ধর্মের উষ্কানী দিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়ছে। যদিও দুঃখজনকভাবে এই ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে সংখ্যালঘু এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া হিন্দুদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিমা এবং মন্দির ভাঙ্গচুর সহ পৈশাচিক হামলার মাত্রাটি ছিলো ভয়ানক এবং উদ্বেগজনক। যা এযাবৎকালের সকল সংহিসতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ কি শুধু শান্তিপ্রিয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর আক্রমন নাকি সারা বাংলাদেশের ধর্মপ্রান মানুষদের উপর এক অমানবিক আঘাত? মানবতা আজ সত্যি বিপন্ন, দেশবাসী আজ বিপন্ন। এ লজ্জা সারা দেশ বাসীর, বিশ্ব মানবতার। একে রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা। এই ঘটনায় সরকার এবং নিরাপত্তা কর্মীদের নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার ইচছা বা ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের সকলকেই ভাবিয়ে তুলছে। সংখ্যালঘুদের মধ্য ভয় এবং অবিশ্বাসের এক ঘোর ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে যা জাতীয় সমৃদ্ধি এবং প্রগতির অন্তরায়।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নীরব ও নিয়মতান্ত্রিক নিপীড়ন আমরা প্রত্যেকেই গত কয়েক দশক ধরে প্রত্যক্ষ করছি। এর ফলে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের সংখ্যা দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। ১৯৫০ সালে যে সংখ্যা ছিলো ২৫ শতাংশের উপরে বর্তমানে তা নেমে এসে দাড়িয়েছে ৯ শতাংশেরও নীচে। এটা অবশ্যই উদ্বেগের ব্যাপার। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা এমন দেশ দেখতে চাই না যেখানে আমরা কেউ দ্বিতীয় শ্রেনীর এবং অন্যরা প্রথম শ্রেনীর নাগরিক হিসাবে দেখা হবে। দুঃখ বা কষ্ট কাকে বলে তা আমরা খুব ভালো করেই জানি। এজন্যই আমরা গোটা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, ধর্মান্ধতা ও নিপীড়নের অবসান করা হোক। যেসব কর্মকর্তারা নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক এবং প্রয়োজনে আইনের পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে তাদের বিচারের ব্যবস্থা যেন করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বারবার বলা হচ্ছে, তবুও সমাজকে সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার জন্য যে পরিবেশ তৈরী করা বাঞ্চনীয় তা করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশ্চাত্যের অনেক দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে রাষ্ট্র থেকে ধর্মের বিচ্ছিন্নতা; কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সকল ধর্মকে সমানভাবে বিবেচনা করা এবং নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার প্রতিষ্ঠা। সংবিধান সকল ধর্মকে সমানভাবে স্বীকৃতি দেয়, কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘু মর্যাদা দেয় না এবং সকল নাগরিককে সমতা এবং ধর্মের স্বাধীনতা প্রদান করে। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ এই নয় যে, জনজীবন থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা বরং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি কেমন জানি বেমানান- যদিও রাষ্ট্র হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের অনুশীলনে সমান সম্মান এবং সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও অনেকে মনে করেন যে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ইসলামের আনুষ্ঠানিক রেফারেন্স নিছক সাংবিধানিক সৌজন্য এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মের স্বীকৃতি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যে দলটির নেতৃত্বে আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিলো সে দলটি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার উচ্চ আদর্শের উপর ভিত্তি করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো। দুর্ভাগ্যবশত, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি দীর্ঘদিন ধরে দূর্বল হয়ে পড়েছে, এবং দেশ একটি অচেনা গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে যেখানে নাগরিকদের অধিকারগুলি বারবার নিষ্পেশিত হচ্ছে। অসহিষ্ণুতা এবং ধর্মান্ধতা ঝেঁকে বসেছে সর্বত্র এবং অনেক বাংলাদেশি আর নিজের দেশেই নিরাপদ বোধ করছে না। সুতরাং, আমরা শ্রদ্ধাভরে সরকারকে তার আপাত নিদ্রা থেকে জেগে ওঠে সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করার আহ্বান জানাই। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো আইনের শাসনের প্রয়োগ, এবং বাংলাদেশের সংবিধানে নির্ধারিত অধিকারগুলি অবাধে প্রয়োগ করার ক্ষমতা। আমরা আশা করছি যে সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করবে, কারণ একটি গণতান্ত্রিক এবং অগ্রগামী চিন্তার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে। ১৯৫২ এবং ১৯৭১ সালের ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় হয়েছিলো।বাংলাদেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার অপরাধ, সহিংসতা এবং অন্যায় বন্ধে একাত্মতা ও একতাবদ্ধতার জন্য এই হলো উপযুক্ত সময়।
এই প্রবন্ধে বাংলাদেশ সরকারের জন্য কিছু সুপারিশমালা উল্লেখ করা হলো যার সঠিক বাস্তবায়নে আমরা একটি সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে আশা করি সফল হবো:
(১) সংবিধানের ৪.১ অনুচ্ছেদ দ্বারা পরিচালিত সংখ্যালঘু অধিকারগুলি সঠিক বাস্তবায়ন: (ক) প্রত্যেকটি নাগরিকের ধর্ম গ্রহণ, অনুশীলন বা প্রচার করার অধিকার প্রতিষ্ঠা (খ) প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় বা সম্প্রদায়ের তার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনার অধিকার সমুন্নত রাখা; (২) বাংলাদেশ সরকারের উচিত জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সংখ্যালঘু অধিকার নীতি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা সহ ধর্মনিরপেক্ষতার সঠিক বাস্তবায়নে পুনর্বিবেচনা করা। সব ধরনের সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত সহিংসতা দূর করতে সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সংখালঘু অধিকার নীতিমালা গ্রহণ করা এবং বাস্তবায়ন করা; (৩) ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ করার সঠিক এবং জোরাল পরিকল্পনা গ্রহন এবং প্রয়োগ: আমরা জোরালোভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ করার দাবি জানাই, যার মধ্যে রয়েছে জোর করে সম্পত্তি দখল করা, বড় আকারের দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারকে পদ্ধতিগতভাবে উচ্ছেদ করা, ধর্ষণ ও যৌন লঙ্ঘন, উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত করা, জীবনের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা; (৪)ন্যায়বিচার এবং উপযুক্ত পূনর্বাসন: জঘন্য নৃশংস সাম্প্রদায়িকতার শিকার সকলকে তাদের জীবন পুনর্নির্মাণ এবং দোষীদের বিচারের আওতায় এনে সঠিক বিচারের ব্যবস্থা করে দোষিদের কঠোর শাস্তি সুনিশ্চিত করা; (৫) পার্লামেন্টের উচিত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন গ্রহণ করা এবং আস্থা সহ আইনটি বাস্তবায়ন করা। জাতির প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষার জন্য সরকারকে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে; (৬) সংখ্যালঘুদের জন্য যথাযথ বিচারিক ক্ষমতার সঙ্গে একটি মন্ত্রণালয় তৈরি করা; (৭) সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে আইন প্রয়োগের জন্য নির্বাচিত সরকারী সদস্যসহ সকল স্থানীয় প্রশাসনিক শাখার জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা; (৮) নাগরিকদের অধিকার এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ স্তরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহুসংস্কৃতিক শিক্ষা সহ নাগরিকত্ব শিক্ষা কার্যক্রমের প্রবর্তন করা; (৯) আইনপ্রণেতাদের প্রশিক্ষণের বিধান: বাংলাদেশ সরকারের উচিত মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে সাংসদ, বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকার ও দলীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
সরকারের পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা স্বকীয় অস্তিত্বকে সফলভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য এবং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের গর্বিত নাগরিক হিসাবে নিজকে মর্যাদার সাথে প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু করনীয় সুপারিশমালা যা একান্ত প্রয়োজন: (১) আসুন আমরা একসাথে দাঁড়াই: ব্যক্তিগত সামর্থ্য বাড়াতে আমাদের সাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং নৈতিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করুন। অনুভব করতে হবে আমরা সবাই এই রাষ্ট্রেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংকীর্ণ স্বার্থ ছাড়াই আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে; (২) ভুক্তভোগী পরিবারকে নৈতিক, আর্থিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই পূর্ণ সমর্থন দেওয়াসহ তাদের মনোবল বাড়াতে সাধ্যমতো কাজ করা; (৩) আন্ত-ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরি করা: সকল আন্ত--সংখ্যালঘু সংগঠনগুলিকে আমাদের মূল মূল্যবোধ রক্ষার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে এবং একত্রিত হওয়ার জন্য সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করতে হবে এবং স্থানীয় ও জাতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে; (৪) শিক্ষাগত কর্মসূচি: সংখ্যালঘু-ভিত্তিক সংগঠন এবং অন্যান্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলিকে জাতিগত সংখ্যালঘুদের সামাজিক পরিচয় এবং নাগরিকত্বের অধিকার বিকাশের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষামূলক কর্মসূচি তৈরির জন্য আমন্ত্রণ জানানো এবং তার আন্তরিক বাস্তবায়নের উদ্দোগ নিতে হবে; (৫) স্থানীয় সংখ্যালঘু-ভিত্তিক সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তি উভয় স্তরে স্থানীয় সরকার এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের সংস্থার সাথে সহযোগিতা করার প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে সামাজিক মূল্যবোধ সমুন্নত থাকে এবং আন্ত -ধর্মীয় উত্তেজনা কমিয়ে আনা যায়; (৬) আন্ত-ধর্মীয় সম্প্রীতি তৈরির জন্য একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন/সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা; (৭) বাংলাদেশে জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন তদারক করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার ব্যবস্থা; (৮) গবেষণা এবং উন্নয়ন কর্মসূচি বৃদ্ধি: সংখ্যালঘুদের মানোন্নয়ন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহন করা সহ প্রায়োগিক গবেষনায় মনোনিবেশ করা।
রাজনৈতিক ও ধর্মীয সাম্প্রদায়িক প্রচেষ্টা চিরকাল অজ্ঞতা থেকে জন্ম নেয় বা কোনকোন ক্ষেত্র্রে মৌলবাদী গোষ্টীর তত্তাবধানে কিংবা ক্ষীন রাজনৈতিক হাসিলের স্বার্থে ঘটানো হয়। তাই আমাদের নিজেদের ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষিত করতে হবে, এবং সত্যিকারের সুশিক্ষাই অজ্ঞতা এবং অসহিষ্ণুতার সীমানা অতিক্রম করতে পারে। প্রকৃত শিক্ষা ডিগ্রি এবং সার্টিফিকেট নয়, বরং একটি বোঝাপড়া এবং বিবেক বিকাশের বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা যা আমদেরকে ধর্ম এবং বর্ণ নির্বিশেষে অন্যায়ের মোকাবেলা করতে সক্ষম এবং নৈতিকভাব প্রস্তুত করে তুলবে। আমাদের সকলের অবশ্যই এই ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলি থেকে একটি গুরুত্বপূর্ন শিক্ষা নেওয়া উচিত তা হলো অন্যায় মানে অন্যায়, তা যার মাধ্যমেই হয়ে থাকুকনা কেন। সেক্ষেত্রে সরকার সহ পুরো দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে। যদি আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই বা এই সম্পর্কে চুপ থাকাটাকে বেছে নিই, তাহলে সবসময়ই আমাদের বিপদজনক ঘটনার সন্মূখীন হতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী। কিন্তু আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই মর্যাদা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার সাথে আচরণ করার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের সাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং নৈতিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করে ব্যক্তিগত সম্ভাবনা বাড়াতে আসুন আমরা একসাথে দাঁড়াই এবং ঐক্যবদ্ব হই। । আসুন আমরা বাংলাদেশের সকল নাগরিক অনুভব করতে শিখি যে আমরা সবাই এই জাতি-রাষ্ট্রের অংশ, ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে আমরা সকলেই এই বাংলায় বেড়ে উঠা ধর্মপরায়ন ও শ্রদ্ধাশীল মানুষ, আমরা গড়তে পারি শুধু, ভাঙ্গতে নয়। এখন সময় এসেছে আন্ত -সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরির। একটি স্বাপদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।