জাতীর উন্নতি এবং সমৃদ্ধির জন্যে প্রয়োজন দক্ষ জনগোষ্ঠী এবং মৌলিক গবেষনা। উন্নতবিশ্বে নতুন নতুন বিষয়ে গবেষনা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। তবে বিশ্বায়নের সুবাধে এবং উন্নত প্রযুক্তিগত জনসংযোগের কারনে এখন পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বংলাদেশেও চলছে নানাক্ষেত্রে মৌলিক গবেষনা । কিন্তু দুঃখের বিষয় মেধাবিদের এইসব গবেষনাকর্ম খুব কম সময়েই আন্তর্জাতিক মূলধারায় উঠে আসে। তারফলে গবেষকরা যেমন উৎসাহ হারান, ঠিক তেমনি সংশ্লিষ্ট দেশসহ গোটা বিশ্বের মানবতা বঞ্চিত হন এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে গবেষনালদ্ব ফলাফলকে অনুসরন করতে কিংবা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে। শুধু তাই নয় , ব্যাক্তি এবং বেসরকারি উদ্যোগে মানবতা কল্যানকর বিষয়গুলোও সমৃদ্বি পায়না অনেক সময়েই। বিভিন্ন বিষয়ে গবেষনা জাতীয় রুপরেখায় বাস্তবায়িত হওয়া উচিত। সারাবিশ্বে অর্থনীতি, সমাজনীতি, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় মৌলিক গবেষনাকে প্রসারিত করার লক্ষ্যে এবং সেই সমস্থ গবেষাগুলোকে আন্তর্জাতিক মূলধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে একটি জাতীয় উদ্যোগ সর্বাগ্র্রে প্রয়োজন। তা না হলে বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার গবেষনায় ভবিষ্যতে বড়ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিশ্ব রেঙ্কিং এ দিন দিন নিম্নমূখী হতে থাকবে। তা হবে একটি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা জাতীর জন্যে অশনীসংকেত।
একটি জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক কল্যাণের মধ্যে যে নিবির যোগসূত্র রয়েছে তা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য গবেষনায় উঠে এসেছে। একইভাবে, যেসব দেশ গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করছে সেইসব দেশগুলোর জাতীয় আয় এবং স্থানীয় চাকরির ক্ষেত্রে সেই বিনিয়োগের সফলতা দেখতে পাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক আকার বর্তমানে খুবই ভালো এবং ধীরে ধীরে উন্নয়নশীল দেশগুলির কাতারে সামিল হওয়ার পথেই এগুচ্ছে, কিন্তু যখন অর্থনীতির মূল সূচকগুলোকে ভালোভাবে পর্যালোচনা করা বা বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয় তখন ছবিটি অনেকাংশেই মৃয়মান এবং সেইক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় নীতি ও পরিকল্পনা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন জাগে।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সম্মানজনক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য মানসম্পর্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও তাদের সুনাম দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। এখন শুধু অতীতের গৌরবের স্মৃতিচারন করেই সন্তুষ্ট থাকার ব্যার্থ প্রয়াস চলছে, কোন ধরনের মৌলিক দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা কিংবা দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা কারো মধ্যে নেই বললেই চলে কিংবা যদি থেকেও থাকে তার সার্বিক বাস্তবায়নের কোন প্রচেষ্টা নেই। এই ধরনের আপাত আত্মতৃপ্তি কেবল প্রতিষ্ঠানের জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাবিদদের সম্ভাবনা সহ সমগ্র দেশের জন্যই ক্ষতিকর। যদিও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ছোট পুকুরে বড় মাছ হয়েই থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, কোন প্রতিষ্ঠান অন্যত্র যা ঘটছে তা উপেক্ষা করতে পারে না। তবুও দুঃখজনকভাবে সত্যি যে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিক্ষীণতার (myopia) লক্ষণ বিরাজমান সর্বত্র, যা অবিলম্বে সমাধান করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি লেখা আমার নজরে পড়েছে যা প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক মানবকন্ঠে। প্রথমটি ৭ই সেপ্টেম্বরের সম্পাদকীয় পাতায় “গবেষনা-অনুদান এবং আমাদের শিক্ষা” শিরোনামে। লেখক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। অপর লেখাটি শিক্ষাঙ্গনের পাতায় ছোট একটি নিউজ আকারে প্রকাশিত হয়েছে, ৪ঠা সেপ্টেম্বর –“বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়”। শিরোনামটিও আমার নজর কাড়ে। এই খবরটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম দা টাইমস হাইয়ার এডুকেশান (Time Higher Education) বিশ্ববিদ্যালয় রেঙ্কিংএ ঢাকা বিশ্বিদ্যালয় সহ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ স্থান পেয়েছে। তবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয়েছে ১ হাজার ৬৬১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০০১-১০০০ এর মধ্যে ২০২২ সালে। শিক্ষার গুনগত মানসহ গবেষনা, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গী, শিল্প আয় ও উদ্ভাবন, উদ্ধৃতি (citations)-গবেষনার প্রভাব এই ৫টি প্রধান সূচকের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যলয়ের রেঙ্কিংটি প্রস্তুত করা হয়। তবে এই সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ন হলো শিক্ষার গুনগত মান (৩০ শতাংশ), গবেষনা (৩০ শতাংশ), এবং উদ্ধৃতি (citations)-গবেষনার প্রভাব (৩২.৫ শতাংশ).অর্থাৎ গবেষনা সংশ্লিষ্ট সূচকের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশী।
দা টাইমস হাইয়ার এডুকেশান রেঙ্কিংটি গুনগত এবং পদ্বতিগত ভাবে QS (Quacquarelli Symonds) এবং সাংহাই (Shanghai) রেঙ্কিং এর চেয়ে ভিন্ন এবং সমাদৃত। তবে আমার আজকের আলোচনায় বর্তমানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব রেঙ্কিংবর্তমান অবস্থা এবং একটি মর্যাদাপূর্ন অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্যে কি করনীয় তা নিয়েই আলোকপাত করা হবে কিছুটা চর্বিত চর্বনের মতোই। কারন এই নিয়ে আগে অনেকেই লিখেছেন এবং আমিও লিখেছি, বলেছি এবং বলার চেষ্টা করেছি বিভিন্ন সময়ে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান অবস্থান কোথায় গিয়ে দাড়িয়ছে তা নিচের পর্যালোচনা থেকেই কিছুটা দৃশ্যমান হবে। নিম্নলিখিত QS world Ranking বা এই বছরের Times Higher Education world ranking -এর ডেটা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হবে, যা চিন্তার জন্য যথেষ্ট খোরাক যোগাতে পারবে নিঃসন্দেহে। নীচের পরিসংখ্যানে পার্শবর্তী কয়েকটি দেশসহ রাশিয়াকেও যুক্ত করেছি। রাশিয়াকে যুক্ত করার একটা বিশেষ কারন রয়েছে। তদানিন্তন রাশিয়ান শিক্ষামন্ত্রী ভ. ফিলিফব 1999 সালে 2000-2004 সালের (৫ বছরের পরিকলপনায়) রাশিয়ান উচ্চশিক্ষার বিকাশের যে পরিকল্পনাটি পেশ করেন তা রাশিয়ান সরকার দ্বারা গৃহীত হয়। বিদ্যমান অর্থায়নের পাশাপাশি রাশিয়ান শিক্ষার উন্নয়নের জন্য রাজ্যের বাজেট থেকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করার পরিকল্পনা করেছিলো। ফিলিপভের উদ্যোগে এবং নির্দেশনায় রাশিয়ান শিক্ষার সক্রিয় আধুনিকীকরণ শুরু হয়। জানুয়ারী 2000 সালে, মস্কো ক্রেমলিনে, রাশিয়ান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ শিক্ষার ৫০০০ কর্মীদের নিয়ে অল-রাশিয়া কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন সেই কংগ্রেসে অংশগ্রহন করেছিলেন, সেই কংগ্রেসে রাশিয়ান শিক্ষার সমস্যা, চ্যালেঞ্জ এবং এর সংস্কারের প্রধান উপায় নির্ধারণ করেছিলো। কংগ্রেস ২০০৫ সালের মধ্যে রাশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতীক রেঙ্কিংএ মর্যাদাপূর্ন অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করা হয় এবং অন্তত ৫ টি রাশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়কে QS রেঙ্কিংএ ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় আনার পরিকল্পনা করা হয়। আজ রাশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাড়া বিশ্বে জয়জয়কার। অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয় QS রেঙ্কিং সহ সব কয়টি রেঙ্কিং এ স্থান করে নিয়েছে এবং ২০১০ সালেই ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ৫০০ তে স্থান করে নিতে পেরেছে।
২০১৭ সালে QS World Ranking-এ শীর্ষ 200 এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা: বাংলাদেশ -0, ভারত -0, পাকিস্তান -0, শ্রীলঙ্কা -0, থাইল্যান্ড -0, মালয়েশিয়া -১, ইন্দোনেশিয়া -0, রাশিয়া -১; শীর্ষ ৫00 এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা: বাংলাদেশ -0, ভারত -৭, পাকিস্তান -২, শ্রীলঙ্কা -0, থাইল্যান্ড -২, মালয়েশিয়া -২, ইন্দোনেশিয়া -২, রাশিয়া -১৩; শীর্ষ ৮00 এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা: বাংলাদেশ -0, ভারত -১৯, পাকিস্তান -৪, শ্রীলঙ্কা -0, থাইল্যান্ড -৭, মালয়েশিয়া -৭, ইন্দোনেশিয়া -৮, রাশিয়া -২৪ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শীর্ষ ১000 এর মধ্যে: বাংলাদেশ -২ (নিচের ২00), ভারত -২৪, পাকিস্তান -৬, শ্রীলঙ্কা -১, থাইল্যান্ড -১০, মালয়েশিয়া -১১, ইন্দোনেশিয়া -১২, রাশিয়া -২৮। তিন বছরের ব্যবধানে আমরা যদি 2020 সালের QS-world University ranking-এর দিকে একটু চোখ বুলাই তা হলে যা দেখতে পাবো তা থেকে আমরা সকলেই অনুধাবন করতে পারবো যে আমাদের উচ্চ শিক্ষা এক কঠিন বিপর্যয়ের দিকে এগুচ্ছে। শীর্ষ ১000 বিশ্ববিদ্যালয়ের এর মধ্যে: বাংলাদেশ -২ (ঢাবি এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নিচের ২00), ভারত -২১, পাকিস্তান -৭, শ্রীলঙ্কা -৪, থাইল্যান্ড -৮, মালয়েশিয়া -২০ (মালয় বিশ্ববিদ্যালয়-৫৯), রাশিয়া -৩২ (মস্কো স্টেইট বিশ্ববিদ্যালয়-৭৪)। দা টাইমস হাইয়ার এডুকেশান রেংকিং ২০২১ এ শীর্ষ ১০০০ এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা: বাংলাদেশ -0, ভারত -7, পাকিস্তান -3, শ্রীলঙ্কা -২, থাইল্যান্ড -8, মালয়েশিয়া -9, রাশিয়া -১৪। এই পরিসংখ্যান থেকে অন্তত এটি প্রতিয়মান হয় যে বেশ কয়েকটি দেশ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য এবং টেকসই উত্তরোত্তর অগ্রগতি দেখছে ।
রাশিয়া সহ পার্শবর্তী দেশগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া জাতীয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক উভয় স্তরেই উচ্চশিক্ষার সচেতনতা বিশেষ করে গবেষনা এবং শিক্ষার মানয়োন্নয়নে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা সহ সঠিক বাস্তবায়নে সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে, যাতে দেশের বিশ্ববিদ্যলয়গুলির আন্তর্জাতিক রেঙ্কিং উন্নত করা এবং গুনগত মান বাড়ানো যায়। সেই সাথে অতিরিক্ত অর্থ এবং সম্পদ বাড়ানো হয়েছে, পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণা এবং আউটপুট আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সহ জাতীয় রিসার্স কাউন্সিল এর পক্ষ থেকে। শ্রেষ্ঠ ব্রিটিশ ও আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কিছু শ্রেষ্ঠত্ব এবং সাফল্যের অনুকরণ করার প্রচেষ্টা ছিল লক্ষনীয়। শিক্ষাবিদদের আন্তর্জাতিক একাডেমিক সম্মেলনে যোগ দিতে উৎসাহিত করার জন্য অতিরিক্ত তহবিল গ্রহন করা হয়েছে এবং গবেষণা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে অর্থপূর্ণ গবেষনায় সহযোগিতার সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর একটি বড় দায়িত্ব বর্তায়।
জাতীয় প্রগতিকে আরো বেগবান করা সহ অর্থনীতি ও সামাজিক অবকাঠামোর সার্বিক উন্নয়নে এবং উচ্চশিক্ষার গুনগতমানকে বৃদ্ধি করে বিশ্ব রেংকিএ একটি মর্যাদাপূর্ন অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্যে একটি সন্মিলিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনতিবিলম্বে গ্রহন করা অতীব জরুরী। যেসব দিকগুলিকে অর্গ্রাধিকার দিতে হবে তারমধ্যে নিন্মোক্ত কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ন:
(ক) বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা গবেষণা পরিষদ (হাইয়ার এডুকেশন রিসার্স কাউন্সিল) প্রতিষ্ঠা একটি চমৎকার প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে। এটি হবে অভিপ্রায়ের সংকেত, যা বিশ্বকে জানান দেবে যে বাংলাদেশ বৈশ্বিক গবেষণা উৎকর্ষতায় তার ভূমিকা পালনে সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্বদেশীয় প্রতিভার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে বাংলাদেশ সামনের চ্যালেঞ্জগুলির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে। এই হাইয়ার এডুকেশন রিসার্স কাউন্সিল বাংলাদেশের সব ধরনের উচ্চশিক্ষার গবেষনাক পরিচালনা এবং তদারকী করবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের কাউন্সিল উচ্চ শিক্ষা সহ জাতীয় প্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষনাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে গবেষনালদ্ধ ফলাফলগুলোকে যেন গুনগতমানের আন্তর্জাতীক indexed পিয়ার-রিভিউড একাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত হয় যা বিশ্ববিদ্যলয় রেঙ্কিংএর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক হবে। রিসার্স কাউন্সিল জাতীয় এবং আন্তর্জাতীক পিয়ার-রিভিউড একাডেমিক জার্নালের লিষ্ট তৈরী করবে এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেইভাব নির্দেশ দেবে। এই কাউন্সিল উচ্চ শিক্ষার গবেষনায় পর্যাপ্ত অনুদানের ব্যাবস্থা করতে হবে।
(খ) এটা অত্যাবশ্যক যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরো অনেক গ্রাউন্ড ব্রেকিং রিসার্চে মনোযোগ দিতে হবে এবং সেই লক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষনা এবং শিক্ষার মানয়োন্ননে সবধরনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকতে হবে যেমন নিয়মিত কর্মশালার ব্যাবস্থা, বিভিন্ন ধরনের সফটওয়ার, অনলাইন একাডেমিক জার্নাল এবং কনফারেন্স প্রসেডিংস সহ পূর্নাঙ্গ লাইব্রেরির পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা থাকতে হবে যা গবেষনা এবং শিক্ষা প্রদানে অতীব জরুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদন্নোতির ক্ষেত্রে পিয়ার-রিভিউড একাডেমিক Indexed জার্নালে (বিশেষ করে Scopus, Web of science-সহ সমমানের Indexed জার্নালে) নির্দিষ্ট সংখ্যক গবেষনালদ্ব নিবন্ধ গৃহীত বা প্রকাশিত হওয়াকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। সাথে সাথে আন্তর্জাতীক মানের একাডেমিক কনফারেন্সে অংশগ্রহন করতে এবং গুনগতমানের কনফারেন্স প্রসেডিংএ নিবন্ধ প্রকাশে উৎসাহিত করতে হবে।
(গ) বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সবধরনের আত্মতুষ্টি, জড়তা এবং সঙ্কীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে কারন এই তিনটিই সবচেয়ে বড় বিপদ ডেকে আনছে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় । যারা সবসময় সাহসী এবং বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয় তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দুঃখের বিষয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ অন্যকাজে (বেশিসময় অনুৎপাদনশীল) এতটাই ব্যস্ত থাকে যে তারা কোন অর্থপূর্ণ উপায়ে পরিকল্পনা করার কোন প্রচেষ্টা করছে না বা করার কোন প্রয়াসই নেই । তারপরে এমন কিছু শিক্ষাবিদ বা কর্মকর্তা আছেন যারা মনে করেন যে তারা যা করছেন তা যথেষ্ট ; তাদের শৃঙ্খলা, প্রতিষ্ঠান বা জাতির বাইরে বিশ্বে যা ঘটছে তাতে বড় অজ্ঞ বা উদাসীন দেখা যাচ্ছে প্রায়সময়ই। সবচেয়ে ভালো এবং গুনগতমানের উচ্চশিক্ষার জন্য যারা কৌতূহলী, দৃঢ়চেতা, সাহসী এবং দূরদর্শী পরিকল্পনার মূল্যবোধের ভিত্তিতে কাজ করতে চায় তাদেরকে সবচেয়ে বেশী অগ্রাধিকার দিতে হবে।
(ঘ) সত্যিকারের দক্ষ জনগোষ্টী তৈরি করার জন্যে শিক্ষাক্ষেত্রে আনতে হবে আমূল পরিবরতন। শিক্ষা প্রদান ও গ্রহনের সনাতনী পদ্বতীর পরিবর্তন হওয়া দরকার।উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্টানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে, বিশেষ করে শিক্ষা প্রদানের গুনগত মান, শিক্ষাত্রীদের শিক্ষাগত ফলাফল মূল্যায়নের পদ্বতি, মানসম্পর্ন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং রাজনীতি সহ যেকোন ধরনের দূর্নীতিকে সমূলে উৎপাট করতে হবে। নৈতিকতার সাথে শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রদান করার সুনির্দিষ্ট রুপরেখা প্রনয়ন সহ তার সঠিক বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে ।
যারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং সমৃদ্ধি নিয়ে ভাবছেন বিশেষ করে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আর কাল বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব মানবিকভাবে বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার নিশ্চিত করুন তা নাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মান উর্ধমূখী নয় বরং নিচের দিকে নামতে থাকবে দিন দিন। এটি করার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় খাতকে পুনরায় ফোকাস করার এবং ঢেলে সাজানোর একটি সত্যিকারের সুযোগ তেরী হবে তা নিশ্চিত করার জন্য এই মহৎ কর্মটি কেবল প্রাসঙ্গিকই নয়, দীর্ঘমেয়াদী ফলপ্রসু পরিকলপনা যা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনবে এবং জাতীয় প্রগতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলবে। বিশ্বের অন্য দেশগুলো নানা ক্ষেত্রে আমাদের পথ দেখিয়েছে, এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়ার এবং আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যোগ্যতা ও প্রতিভা প্রদর্শন করা। আমরা কেউ বলছি না যে প্রক্রিয়াটি সহজ হবে, কিন্তু এটাও ঠিক আমাদেরকে শিখতে হবে, জানতে হবে এবং শেখা বা জানার কোন রাজকীয় রাস্তা নেই। বাস্তবতা হলো যে, একটি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে উচ্চ শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের এখনই উপযুক্ত সময় এবং হলফ করে বলতে পারি জাতীয় অগ্রগতিতে তার অবদান হবে ব্যাপক এবং উচ্চ শিক্ষায় বাংলাদেশ একটি সন্মানজনক অবস্থানে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে শীঘ্রই।