ইউক্রেন সংকটে ইউরোপ কি নিজের কবর খুঁড়ছে?


বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে চলছে এক তুলকালাম কান্ড। রাজনৈতিক বলয়ে নেমেছে ভাঙ্গনের আলামত। দীর্ঘদিনের সম্পর্কে চলছে টানাপোড়ন। ইউক্রেইনের সংকট নিয়ে চলছে বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ। আর এই নতুন সমীকরণে রাশিয়ার পুতিন সগৌরবে হাজির হয়েছেন বিজয়র মুকুটে। ইউরোপে চলছে বিপর্যস্তের ঝড়ো বাতাস। কে জিতবে আর কে হারবে এ মহা যুদ্ধে তা শুধু সময়ের ব্যাপার। তবে এই লেখায় কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করবো যে বিশ্ব রাজনীতি-অর্থনীতি এবং সমরনীতিতে সবচেয়ে বেশী অস্থিতিশীলতা ও বিপর্যয় নিয়ে এসেছে ইউরোপিয়ান দেশগুলি। কথায় বলে যেমন কর্ম তেমন ফল। তাই ইউক্রেইন সংকটের সমস্ত দায়ভার ইউরোপিয়ান দেশগুলিকেই নিতে হবে। বিশ্ববাসীর কাছে ইউরোপীয় দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও বাস্তবতা হলো, গত ৫০০ বছর ধরে বিশ্বের বড় বড় সংঘাতের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইউরোপ। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু করে দুই বিশ্বযুদ্ধ, ঠাণ্ডা যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত— প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ইউরোপ নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বৈদেশিক কূটনীতিকে এমনভাবে পরিচালিত করেছে, যা গোটা বিশ্বকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

১৫-১৮ শতকের মধ্যে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো আফ্রিকা, এশিয়া ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করে, যার ফলে উপনিবেশিক যুদ্ধ, দাসব্যবসা, সম্পদ লুট এবং জাতিগত সংঘাতের সূত্রপাত হয়। ব্রিটিশ, ফরাসি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ও ডাচ সাম্রাজ্য নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে একের পর এক যুদ্ধ বাধায়, যার ফলে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় এবং বহু জাতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর ১৯১৪ সালে ইউরোপের অভ্যন্তরীণ শক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, যেখানে বিশ্বব্যাপী অন্তত ২ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। যুদ্ধশেষে স্বাক্ষরিত ভার্সাই চুক্তি (Treaty of Versailles) ইউরোপের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়, বরং এটি জার্মানির ওপর অসম চাপ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দেয়। ১৯৩৯ সালে হিটলারের নাৎসি জার্মানি ইউরোপ জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, এবং বিশ্ব আবারও ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৭ কোটি মানুষ নিহত হয়, যার মধ্যে শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নেই প্রায় ২.৭ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। তারপরেও কি সাধারণ সুস্থ মানুষ ধরে নিবেন যে ইউরোপ হলো গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা, জাতীয় অখণ্ডতা, সার্বভৌম রাষ্ট্র, ন্যায্যতা এবং সমতা রক্ষার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। উত্তরটি খুব সহজ-না, মোটেও না। বরং আরোও সহজ করে বলতে গেলে বলতে চাই, ইউরোপের পররাষ্ট্র নীতি হলো “ঘোমটার নিচে খেমটা নাচের” মতো এক অসুস্থতা।

একটু ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলানো যাক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-তো এক সময় শেষ হলো। তবে ইউরোপের সংকটে কোন প্রভাব পড়েনি বরং ইউরোপের রাজনৈতিক বিভক্তি বেশ  প্রকট হয়ে ওঠে, যার ফলস্বরূপ ঠাণ্ডা যুদ্ধের সৃষ্টি হয় যা চলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, যার প্রধান মঞ্চ ছিল ইউরোপ। বার্লিন প্রাচীর, কিউবান মিসাইল সংকট এবং ন্যাটো ও ওয়ারশ চুক্তির সামরিক প্রতিযোগিতার কারণে ইউরোপ হয়ে উঠে সংঘাতের প্রধান ক্ষেত্র। এই সময় আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, কোরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে যে সংঘাতগুলো ঘটে, সেগুলোর পেছনে ইউরোপীয় এবং পশ্চিমা শক্তির ভূমিকা ছিল স্পষ্ট। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ইউরোপ তাদের পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে। যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধ, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় পশ্চিমা হস্তক্ষেপ, এবং এখন ইউক্রেন যুদ্ধ— প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপ কূটনৈতিক সমাধানের বদলে সংঘাত উসকে দেওয়ার পথেই হাঁটছে। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে ইউরোপীয় নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, "আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি যতদিন প্রয়োজন," কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাদের সেই প্রতিশ্রুতি এখন শুধুই কথার কথা। ইউরোপের অর্থনীতি চাপে রয়েছে, তাদের অস্ত্রভাণ্ডার প্রায় শূন্য, এবং সামরিক শক্তি রাশিয়ার তুলনায় দুর্বল। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর পরই ইউক্রেইন এবং ইউরোপ থেকে সামরিক সহযোগিতা কমানোর কথা বলছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী ওভাল অফিস থেকে অপমানিত হয়ে বেড়িয়ে আসার পর যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রীর আয়োজনে বিশেষ ইউরোপিয়ান সন্মেলনে ইউক্রেইনের পাশে থাকার ইউরোপিয়ান অঙ্গীকার-এসব কিছু দেখে মনে হচ্ছে ইউরোপিয়নদের এখনো টনক নড়েনি। বরং তারা কূটনৈতিক সমাধানের বদলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার নীতি অবলম্বন করছে, যা খুব শীঘ্রই তাদের নিজেদেরকে এক মহা সংকটের আস্ত-কুড়ে ছুড়ে দিবে। জ্বালানি সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা, এবং সামরিক দুর্বলতা তাদের জন্য এক দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করবে। অথচ তারা এখনও রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা না করে, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে অটল রয়েছে। ইতিহাস বলে, ইউরোপ যখনই সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে, তখনই তা পুরো বিশ্বকে এক গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতেও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি, এবং ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়ন দেখা দিয়েছে। তবে যদি সত্যি সত্যি ডোনাল্ড ট্রাম্প একটু নড়ে চড়ে বসে ইউরোপ এবং ইউক্রেইন থকে দৃষ্টিটা সরিয়ে নেয় তখনই বুঝা যাবে কতো ধানে কতো চাল। ইউরোপের কোন শক্তি নেই আমেরিকা ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক সংকটে মোকাবেলা করবে।

যুদ্ধের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ন্যাটো দেশগুলো ইউক্রেনকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সেই মোতাবেক প্রচুর অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানো হয় গত তিন বছরে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে আসছিলো। শুধু একটাই লক্ষ রাশিয়াকে পরাস্ত করতেই হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদী সমর্থন দেওয়া ইইউর পক্ষে ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প যুদ্ধকালীন সরবরাহের চাহিদা মেটাতে পারছে না, এবং অর্থনৈতিক টানাপোড়নের কারণে জনগণের মধ্যেও সমর্থনের মাত্রা কমে আসছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করলেও এটি যথেষ্ট দ্রুতগতিতে সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে গোলাবারুদ উৎপাদন, ট্যাংক মেরামত, এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউরোপীয় দেশগুলো জ্বালানি সংকটের মুখে পড়ে। রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে শিল্পখাতের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, এবং সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। জার্মানির মতো দেশ, যেটি ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি, সেখানে প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে এবং মন্দার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেনের মতো দেশগুলোতেও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং কর্মসংস্থান সংকটের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। এদিকে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো— বিশেষ করে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া— খোলাখুলি ভাবে ইউক্রেনকে অব্যাহত সমর্থন দেওয়ার বিরোধিতা করছে, এবং তারা রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে কথা বলছে।

অন্যদিকে, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাও বদলেছে। যুদ্ধের শুরুতে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক জোট গঠনের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই সংঘাতে নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং মেক্সিকো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি এবং তারা অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। আফ্রিকাতেও রাশিয়ার প্রভাব বাড়ছে, বিশেষ করে ওয়াগনর গ্রুপের সামরিক উপস্থিতি এবং খাদ্যশস্য সরবরাহ চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া আফ্রিকান দেশগুলোর সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো— বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত— পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে তেল এবং বাণিজ্যিক চুক্তি বজায় রেখেছে। চীন-রাশিয়া সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও দৃঢ় হয়েছে, এবং তারা পশ্চিমা প্রভাব মোকাবিলার জন্য নতুন অর্থনৈতিক এবং সামরিক কৌশল নিয়ে কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতিও নতুনভাবে বিন্যস্ত হচ্ছে, এবং এটি ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। বর্তমান বিশ্ব-পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বদলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের উচিত বাস্তবতা মেনে নেওয়া এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করা। রাশিয়া তাদের প্রতিবেশী, এবং চিরস্থায়ী শত্রুতা কোনও স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। ইতিহাস বলে, ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা যতটা গভীর হয়েছে, ততটাই লাভবান হয়েছে উভয় পক্ষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন পশ্চিম ইউরোপ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ঠাণ্ডা যুদ্ধের মাধ্যমে বিভক্ত ছিল, তখন পুরো বিশ্ব নিরাপত্তা-হীনতায় ভুগেছে। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে যখন পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তখন ইউরোপের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। বর্তমানে, রাশিয়ার সঙ্গে শত্রুতা অব্যাহত রেখে ইউরোপ কৌশলগত-ভাবে কোনও সুবিধা পাবে না, বরং এটি তাদের অর্থনৈতিক ও সাময়িকভাবে আরও দুর্বল করে দেবে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত কখনো কোনও পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই এর নেতিবাচক প্রভাব ইউক্রেন ছাড়িয়ে ইউরোপের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার ওপর পড়বে। অর্থনৈতিক মন্দা, শক্তি সংকট, এবং সামরিক ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান চাপ ইউরোপীয় দেশগুলোর ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে। শুধু তাই নয়, সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক বিভাজন বাড়তে থাকলে ইউরোপ নিজেই অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়বে। বিশ্ব ইতোমধ্যে বহু-মেরুকরণের পথে এগোচ্ছে, যেখানে শক্তিশালী জোট গঠন ও কৌশলগত সহযোগিতাই হবে টিকে থাকার মূল ভিত্তি।

রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতামূলক সমাধান খোঁজার পরিবর্তে ইউরোপ যদি অন্ধভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নীতি অনুসরণ করে, তাহলে এটি তাদের নিজেদের জন্যই ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি নেই, এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন যদি ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন কমিয়ে দেয়, তাহলে ইউরোপ এক ভয়াবহ সংকটে পড়বে। তাই সংঘাতের পথ পরিহার করে ইউরোপের উচিত কূটনৈতিক সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়া। ইউক্রেন সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করতে হলে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে হবে। একদিকে অর্থনৈতিক চাপ, অন্যদিকে সামরিক সীমাবদ্ধতা— এ দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে কূটনৈতিক সংলাপই একমাত্র কার্যকর উপায়। যুদ্ধের দীর্ঘায়িত প্রক্রিয়া শুধু ইউক্রেন নয়, ইউরোপের সার্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকিস্বরূপ। তাই সময় এসেছে শত্রুতা ভুলে বাস্তবসম্মত নীতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার, যেখানে যুদ্ধ নয়, বরং সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা সম্ভব।

Leave your review