বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অমর অধ্যায়। এই ভাষণটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা, যা একটি জাতির স্বাধীনতার আন্দোলনকে সুসংগঠিত ও উজ্জীবিত করেছিল। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া এই ভাষণটি ছিল স্বাধীনতার সংগ্রামের অনন্য এক ঘোষণাপত্র, যা শুধু একটি রাজনৈতিক বক্তব্যই ছিল না, বরং একটি জাতির মুক্তির আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, এটি ছিল জাতির স্বাধীনতার সনদ। ভাষণের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য সেদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে বিদ্যুৎ-গতিতে প্রবাহিত হয়েছিল এবং জ্বেলে দিয়েছিল এক নতুন আশার আলো। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে সৌভাত্রের বন্ধনে একদণ্ডে আবদ্ধ হয়েছিলো পুরোজাতী। জাতীর সেই দুর্দিনে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসাধারণ বক্তৃতার মাধ্যমে জাতিকে একত্রিত করেছিলেন এবং একটি ঐতিহাসিক আন্দোলনের সূচনা করেন। আজও এই ভাষণ আমাদের আত্মপরিচয় ও জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি হিসেবে জেগে রয়েছে, এবং ভবিষ্যতেও এই ভূখণ্ডের মানুষদেরকে অনুপ্রাণিত করবে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে। ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের চেতনার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমাদের উপলব্ধিতে প্রজ্বলিত হয়ে উঠে যে ধ্রুব সত্যটি তা হলো, মুক্তির পক্ষে জনগণের সংগ্রাম কখনও থেমে থাকে না।
সম্প্রতি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আটটি দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মধ্যে ৭ই মর্চের দিবসটিকে বাতিল করায় বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ অনেক জনপ্রিয় হলেও ২০২১ সালের আগ পর্যন্ত ৭ই মার্চ জাতীয় দিবস বলে পালিত হতো না। শুধু গত কয়েক বছর ধরে দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল। বাংলাদেশের জনগণ নানা ভাবে, নানা আকারে এই দিনটিকে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে পালন করতো। এখনো এই বিশেষ দিনটিকে বাংলাদেশের মানুষ স্বরন করবে বিশেষ মর্যাদার সাথে নানা ভাবে নানা আয়োজনে শহরে, গ্রামে-গঞ্জে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। জাতীয় দিবস হিসেবে বাতিল করার সিদ্ধান্ত এই আলোচনার বিষয় বস্তু নয়। তবে এ ভাষণকে কখনোই কোটি মানুষের চিন্তা-চেতনা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না এটাই যেন ধ্রুব সত্য। এই ভাষণের গুরুত্বকে তুলে ধরাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ১৯৭১ সালের এক উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দেওয়া হয়েছিল, যখন দেশের মানুষ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি চাচ্ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ, বৈষম্য এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার ছিল। পাকিস্তানি শাসকেরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে তাদের ভোটাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এক সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিপীড়ন চরমে পৌঁছে যায়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের পরও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি দমন-পীড়ন চালায়। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ঢাকায় কয়েক দফা সামরিক অভিযান এবং দমনমূলক কার্যকলাপ চলছিল। বিশেষ করে ১ মার্চ পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন, যা পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের জন্ম দেয়। এর ফলে ঢাকায় ব্যাপক জন-বিক্ষোভ ও হরতাল শুরু হয়। দেশের প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতার জন্য অধীর হয়ে উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে, ৭ই মার্চের ভাষণ জাতিকে মুক্তির পথে একত্রিত করে। বঙ্গবন্ধু সেই দিন তার ভাষণে বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি পরিষ্কারভাবে জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেন। এটি একটি স্পষ্ট আহ্বান ছিল যে, বাঙালি জাতি আর পাকিস্তানি শাসন মেনে নেবে না এবং স্বাধীনতার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।
তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকেরা বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরও দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করছিল। কয়েক সপ্তাহ পর, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে সামরিক অভিযান চালিয়ে ঢাকার নিরীহ মানুষকে গণহত্যা শুরু করে। কিন্তু এর আগেই, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিল। এই সময়ে, বাঙালিরা নৈতিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয় এবং সংগঠিত হয়ে উঠেছিল। শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, পেশাজীবী, এমনকি সামরিক বাহিনীর মধ্যেও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ জাতিকে শুধু উজ্জীবিতই করেনি, বরং তাদের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তির জন্ম দিয়েছিল, যা স্বাধীনতার চূড়ান্ত যুদ্ধে প্রতিফলিত হয়। এই ভাষণ তাই কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল না, এটি একটি জাতির মুক্তির সনদ ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ বাঙালি জাতির হৃদয়ে গভীরভাবে স্থান করে নিয়েছে। এ ভাষণের প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি উক্তি মুক্তিকামী মানুষকে এমনভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল যে, তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করেনি। “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” এই কথাগুলো জাতির জন্য স্বাধীনতার মন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। প্রতিটি শব্দে বঙ্গবন্ধু একটি অসীম শক্তি ও সাহস ঢেলে দিয়েছিলেন। এমন সময়ে যখন শোষিত বাঙালি জাতি দিশা-হীন ছিল, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রতিটি বাক্য তাদের নতুন দিশা দেখিয়েছিল। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি যে সাহসিকতা ও দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন, তা একটি নিরস্ত্র জাতিকে অস্ত্রহীনভাবেই শত্রুর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শক্তি দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক আহ্বান ছিল না, এটি ছিল একটি জাতির মনের কথা। লাখ লাখ মানুষ এই ভাষণে নিজের আকাঙ্ক্ষা, ব্যথা এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন খুঁজে পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ আজও বাঙালি জাতির মননে এবং হৃদয়ে গভীরভাবে প্রোথিত রয়েছে। এটি কেবলমাত্র ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, এটি জীবন্ত একটি আদর্শ যা আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষের মধ্যে প্রেরণা যোগায়। বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়, যখন তিনি লক্ষ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের বলেছিলেন, "রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো, তবু এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।" এই বাক্যগুলো আজও দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে অনুরণিত হয়। এই ভাষণের প্রতিটি শব্দ বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় এবং স্বাধীনতা অর্জনের প্রতিচ্ছবি। লক্ষ লক্ষ মানুষ বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে মুক্তির আহ্বান শুনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ভিত্তি ছিল এই ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাংলাদেশের জনগণের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের অংশ।
২০১৭ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (UNESCO) এই ভাষণকে " ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ " হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে "মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড" স্বীকৃতি দিয়ে UNESCO এটিকে সর্বজনীন মানবতার জন্য এক মূল্যবান সম্পদ হিসেবে তুলে ধরেছে। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে যে, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়ে একটি প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ভাষণ স্বাধীনতার জন্য একটি জাতির সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে এবং সেই কারণেই এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। UNESCO ছাড়াও, আন্তর্জাতিক ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই ভাষণটি শুধু রাজনৈতিক এবং সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত। বিশেষত, এটি একটি নিপীড়িত জাতির জন্য স্বাধীনতার প্রেরণা এবং মুক্তির আহ্বানকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন জাতি তাদের ঐতিহাসিক ভাষণগুলোকে সযত্নে লালন করে এবং বিশেষ উদযাপনের মাধ্যমে সেগুলোর স্মৃতিকে জীবিত রাখে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গ ভাষণ যা ১৮৬৩ সালে আব্রাহাম লিংকন দিয়েছিলেন, আজও মার্কিনীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভাষণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় জাতির ঐক্য ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে পুনঃ-প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান। আজও প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে গেটিসবার্গ ভাষণের দিনটি উদযাপিত হয় এবং তা আমেরিকানদের জাতীয় অহংকার ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্রিটেনেও উইনস্টন চার্চিলের বিখ্যাত ভাষণগুলো, বিশেষ করে তার "We shall fight on the beaches" ভাষণ, আজও ব্রিটিশ জনগণের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কঠিন সময়ে এই ভাষণ ব্রিটিশদের সাহস ও মনোবল বাড়িয়েছিল। আজও ব্রিটিশ জনগণ এই ভাষণগুলো স্মরণ করে এবং সেই সময়ের দেশপ্রেম ও জাতীয় ঐক্যের উদাহরণ হিসেবে পালন করে। ভারতের মহাত্মা গান্ধীর "কুইট ইন্ডিয়া" (Quit India) ভাষণ উল্লেখযোগ্য। ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এই ভাষণ ভারতীয়দের স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন উদ্দীপনা এনে দিয়েছিল। আজও ভারত এই ভাষণকে জাতীয় গৌরবের অংশ হিসেবে উদযাপন করে এবং এটি স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন উপলক্ষে স্মরণ করা হয়। এটি ভারতীয় জাতির ঐক্য ও সংগ্রামের প্রতীক। দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার ভাষণগুলোও একইভাবে স্মরণীয়। বিশেষ করে তার ১৯৯০ সালে কারাগার থেকে মুক্তির পর দেওয়া ভাষণটি দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের জন্য এক নতুন স্বাধীনতার সূচনা হিসেবে দেখা হয়। আজও দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ ম্যান্ডেলার এই ভাষণকে তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং বর্ণবৈষম্য-বিরোধী সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে লালন করে। ফ্রান্সেও শার্ল দ্য গলের ১৯৪০ সালের "Appeal of 18 June" ভাষণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। আজও ফরাসি জাতি এই ভাষণকে তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করে এবং উদযাপন করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা নয়, এটি আমাদের জাতীয় চেতনার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এবং মুক্তিকামী বাঙালির হৃদয়ে চিরস্থায়ীভাবে স্থান করে নেওয়া এক মহান বার্তা। ভাষণটির প্রতিটি শব্দ ছিল সাহসিকতার মন্ত্র, যা কেবলমাত্র তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নয়, পুরো জাতির আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিল। যখন আমরা সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে এই ভাষণ আজও আমাদের জাতীয় সংগ্রামের, ঐক্যের এবং মুক্তির শক্তিশালী প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৭ই মার্চের সেই দিনটি বাঙালি জাতির জন্য ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যেখানে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ফুটে ওঠা প্রত্যেকটি বাক্য, প্রতিটি উচ্চারণ ছিল বাঙালির স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের আহ্বান। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে উচ্চারিত সেই ভাষণ কেবল একটি বিশেষ মুহূর্তের জন্য নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছিল আমাদের সংগ্রামী ইতিহাসের এক চিরন্তন সঙ্গীত। জাতি হিসেবে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরা আমাদের অন্যতম দায়বদ্ধতা। যদিও ৭ই মার্চকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দিবস হিসেবে বাতিল করা হয়, তবুও এই দিনটি বাঙালির হৃদয়ে জাতীয় স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে চিরকাল স্থান করে নিয়েছে। বাঙালি জাতি প্রতিনিয়ত এই ভাষণকে নানা উপায়ে লালন ও উদযাপন করে থাকে। প্রতিটি বছর, প্রতিটি প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের মাধ্যমে নতুন করে শক্তি এবং প্রেরণা পায়। এ ভাষণ শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, বরং আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য এক অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস। আমাদের জাতির জন্য এটি শুধুমাত্র একটি বক্তৃতা নয়, বরং একটি বেঁচে থাকার প্রেরণা, একটি ইতিহাস, একটি সংগ্রাম, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি অমূল্য উত্তরাধিকার হিসেবে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ চিরকাল আমাদের চিন্তা, চেতনা এবং মননের অংশ হয়ে থাকবে এবং আমাদের জাতীয় পরিচয়কে গৌরবান্বিত করে চলবে।