শিক্ষাই জাতীর মেরুদণ্ড। জাতীয় প্রগতি ও উন্নয়নের ধারক। আর যে কোন দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর হলো প্রাথমিক শিক্ষা যা সাক্ষরতা, সংখ্যার উপর দক্ষতা, এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বীজ রোপন করে শিশুদের মধ্যে। আর এই প্রাথমিক শিক্ষাটাই জীবনব্যাপী শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এই শিশু বয়সটাই খুব গুরুত্বপূর্ন বিশেষ করে বয়স যখন সাত থেকে এগার। কোমল-মতি শিশুদের শিক্ষাগত সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার মাধ্যমে, প্রাথমিক শিক্ষা ভবিষ্যতের শিক্ষার বৈষম্য কমাতে সাহায্য করে এবং সমতা ও অন্তর্ভুক্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলে। একটি সময়োপযোগী ও প্রায়োগিক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাই পারে শিক্ষার্থীদের মৌলিক ধারণাগুলি পড়তে, লিখতে এবং বোঝার ক্ষমতা দিয়ে সজ্জিত করতে, যা তাদের ভবিষ্যত শিক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, প্রাথমিক শিক্ষা শিশুদের মধ্যে সামাজিকীকরণকে উৎসাহিত করে, সহযোগিতা, সম্মান এবং দায়িত্বের মতো মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে, যা শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া একটি জীবনব্যাপী এবং বহুমুখী প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। আর এই প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে সৃজনশীল প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বৃহত্তর পরিসরে, প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয় উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই শিশুরাই একদিন মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষায় পা দেবে। ছোটকাল থেকেই জেনে এসেছি “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে। তাই শিশুদের শিক্ষার ভিত্তিটা টেকসই হলে ভবিষ্যৎ শিক্ষায়ও নিজেদেরকে টেকসই ভাবে তৈরি করতে সক্ষম হবে এই কোমলমতি শিশুরা। তবে সে ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতির প্রতিটি স্তরকেই মজবুত হতে হবে। দক্ষ হতে হবে শিশুদের শিক্ষাদানে যারা সংপৃক্ত থাকবেন অর্থাৎ শিক্ষকগন। উন্নত বিশ্বে শিক্ষাদানে নিয়োজিত থাকেন সবচেয়ে মেধাবী এবং সৃজনশীল শিক্ষকবৃন্দ। মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য, সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলি বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সেরা এবং সবচেয়ে সৃজনশীল শিক্ষক নিয়োগের জন্য কঠোর মানদণ্ড মেনে চলে। যেমন সুইডেনে, সম্ভাব্য শিক্ষকরা একটি সূক্ষ্ম নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। শুধু একাডেমিক প্রমাণপত্র, শিক্ষাদানের যোগ্যতা এবং শিক্ষার প্রতি আবেগের মূল্যায়নই নয় তাদের সৃজনশীলতাকেও যাচাই বাচাই করা হয়। সবচেয়ে মেধাবীরাই শিক্ষকতা পেশায় সংপৃক্ত হয়। নিয়োগের পরে রয়েছে ব্যাপক প্রশিক্ষণ যা আধুনিক শিক্ষাগত কৌশল, শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং ক্রমাগত পেশাদার বিকাশকে ঋজু করে। সুইডেন সহ ইউরোপের অনেক দেশেই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে শিক্ষকদের শিক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং মানিয়ে নিতে উত্সাহিত করা হয়। এই সামগ্রিক শিক্ষা পদ্ধতির কারনে এই সব দেশের শ্রেণীকক্ষগুলিতে থাকে প্রাণবন্ত পরিবেশ যেখানে সৃজনশীলতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার উন্মেষ ঘটে সহজে।
অথচ আমাদের দেশের দিকে একটু চোখ ফেরালেই একটা ভিন্ন এবং অস্বাভাবিক চিত্র দেখতে পাই। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং ধরে রাখার ক্ষেত্রে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অমেধাবীরাই শিক্ষাখাতে নিয়োগ পাচ্ছে। আর তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিতে জর্জরিত, যেখানে প্রায়শই যোগ্যতার পরিবর্তে ঘুষের মাধ্যমে পদগুলি সুরক্ষিত করা হয়। উপরন্তু, অনেক শিক্ষক অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে পেশায় প্রবেশ করেন, কার্যকরভাবে শ্রেণীকক্ষ পরিচালনা করতে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব রয়েছে। জবাবদিহিতা এবং কর্মক্ষমতা মূল্যায়নের এই অভাব আমাদের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে কলুষিত করছে। বেশীর ভাগ শিক্ষকরাই শিক্ষা প্রদানের অযোগ্য। যাদের ভাবনায়, চেতনায়, চিন্তায় আর মননে কোন ধরনের সৃজনশীলতা নেই সেই শিক্ষকরা শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতার বীজ রোপন করাতো দুরের কথা বরং একটি দূর্বল জনগোষ্ঠী তৈরী করছে। এদের কারনে শিক্ষা ব্যবস্থা আজ দুর্বৃত্তদের দুর্বৃত্তায়নের অভয়ারন্য। আমরা সকলেই অন্ততঃ এইটা উপলব্ধি করতে সক্ষম যে শিক্ষিত ব্যক্তিরা মূলতঃ কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে বেশী সক্ষম হয়। যে রাষ্ট্র শক্তিশালী প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করে সে রাষ্ট্রে প্রায়শই উন্নত জনস্বাস্থ্য, নিম্ন অপরাধের হার এবং উন্নত সামাজিক স্থিতিশীলতা সহ বিভিন্ন সুবিধার প্রভাব লক্ষনীয়। সুতরাং, মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা শুধুমাত্র একটি নৈতিক রাষ্ট্রীয় দায়িত্বই নয় বরং এটি জাতির ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি ও মঙ্গলের জন্য একটি কৌশলগত বিনিয়োগ। আজ যুক্তরাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই কিছুটা আলোকপাত করবো। বিশেষ করে শিশুদের সৃজনশীলতায় প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরতে যুক্তরাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতির বিশেষ দিকগুলিকে তুলে ধরবো।
যুক্তরাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাটি দেশের জাতীয় শিক্ষা অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। শিশুরা স্কুল শুরু করে চার থেকে পাঁচ বয়সের মধ্যে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে শিশুদের বয়স যখন এগার। যুক্তরাজ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশু এবং জুনিয়র স্তরে বিভক্ত। চার/পাঁচ থেকে সাত বছরের শিশুদের জন্য কী স্টেজ (শিশু স্তর)-১। জুনিয়র স্তরে (কী স্টেজ-২) বয়সের সীমা হলো সাত থেকে এগার বছর। শিশুদের চতুর্থ জন্মদিনের পর সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয় যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলিতে। শিক্ষা কার্যক্রম চলে সেপ্টেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। স্ট্যান্ডার্ডাইজড অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট (SATs) নামের প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয় ইয়ার দুই এ যখন শিশুদের বয়স ছয়-সাত। দ্বিতীয় পরীক্ষাটি হয় ইয়ার ছয় এ অর্থাৎ কী স্টেজের শেষ দিকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বয়সভিত্তিক সাতটি ইয়ার গ্রুপ রয়েছে। ইয়ার আর (রিসেপসন) থেকে ইয়ার ছয়। শিশুদের বয়স যখন তিন তখন রিসেপশন গ্রুপে ভর্তি হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম স্তরে থাকে চার থেকে সাত বছরের শিশুরা। খেলা ধুলা সহ নানা ধরনের সৃজনশীল পাঠ্যক্রমের ব্যবস্থা থাকে এই স্তরে। অক্ষর পরিচয় থেকে শুরু করে সংখ্যা শেখানো সহ নানা ধরনের গল্প, গান, ছড়া, বিজ্ঞান এবং ইতিহাসের মতো ধারণাগুলি প্রবর্তনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সৃজনশীল খেলা এবং অন্বেষণ ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শিশুদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে বোঝার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা সংগীত, শিল্প, নাটক এবং শারীরিক শিক্ষাও দেয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষার দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে জুনিয়র স্কুল যা সাত থেকে এগার বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য। এই পর্বে, ভূগোল, ইতিহাস এবং ধর্মীয় অধ্যয়নের মতো অন্যান্য মূল বিষয়গুলির পাশাপাশি ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মূল ধর্মগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় যার ফলে শিশুরা প্রধান ধর্মগুলো সম্পর্কে জানার সুযোগ পায় এবং শিশুদের ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। শ্রেণীকক্ষের পরিবেশের মধ্যে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি, শিক্ষার্থীরা তাদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীরভাবে বোঝার জন্য প্রায়শই জাদুঘর বা ঐতিহাসিক স্থানের মতো জায়গাগুলিতে ফিল্ড ট্রিপে অংশ নেয়। এগার বছর বয়সে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলে যায়।
যুক্তরাজ্যে, দুটি স্বতন্ত্র পাঠ্যক্রম রয়েছে: ন্যাশনাল কারিকুলাম এবং স্কটিশ কারিকুলাম ফর এক্সিলেন্স। তবে উভয় কারিকুলামই একটি বিস্তৃত শিক্ষা প্রদানের উপর গুরুত্ব দেয় যা সকল শিক্ষার্থীর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে, শিক্ষার্থীরা জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে যা ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল এবং ধর্মীয় শিক্ষার মতো মূল বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেয়। তাছাড়া শারীরিক শিক্ষা এবং ডিজাইন প্রযুক্তিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্কটল্যান্ডে, স্কুলগুলিকে অবশ্যই স্কটিশ কারিকুলাম অনুসরণ করতে হয় যা জ্ঞানের পরিবর্তে দক্ষতা বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করে। এটি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যে বিষয়গুলি সম্পর্কে শিখছে সেগুলি নিয়েই সমালোচনামূলক ভাবে চিন্তা করা সহ সমাজের মধ্যে তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে উত্সাহিত করে। স্কটিশ কারিকুলামে যে সকল বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেগুলি মূলত: অভিব্যক্তিমূলক শিল্পকে ঘিরে সংগঠিত হয়। যেমন স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা, ভাষা এবং সাক্ষরতা, গণিত এবং সংখ্যা, বিজ্ঞান সামাজিক শিক্ষা ও প্রযুক্তি। প্রতিটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে প্রতিটি শিশুকে দায়িত্বশীল নাগরিক, সমাজ ও রাষ্ট্রে কার্যকর অবদানকারী, আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি, নৈতিক ভোক্তা হিসেবে তৈরি করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ একজন প্রকৃত নাগরিক হিসেবে তৈরির করার এক উত্তম শিক্ষা ব্যবস্থা। অথচ পৃথিবীর বেশীর ভাগ উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে যেমন বাংলাদেশ কিংবা ভারতে যেখানে বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক নির্ভর শিক্ষাপদ্ধতীতে জোড় দেয়া হয়। কোন বাস্তব ও প্রায়োগিক ধারনা ছাড়াই শিশুদেরকে শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে যা শিশুদের মৌলিক বিকাশের অন্তরায়।
যুক্তরাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যান্য শিক্ষা পদ্ধতির থেকে অনেকটাই আলাদা। তার প্রধান কারন হলো সৃজনশীলতার অবাধ চর্চা, নমনীয় পাঠ্যক্রম এবং উদ্ভাবনী শিক্ষা পদ্ধতি যা শিশুদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে। একটি শিশুর সার্বিক শারিরীক, সামাজিক ও মানষিক বিকাশের পরিপূরক একটি শিক্ষা পদ্ধতি। যুক্তরাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। এই মূলনীতিগুলি শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক ও সৃজনশীল দক্ষতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং শিশুদের একটি সমৃদ্ধ শিক্ষাজীবন প্রদান করে। প্রথমেই বলা যেতে পারে, যুক্তরাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমটি বিস্তৃত ও ভারসাম্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম যা তাদের সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তি বিকাশে সহায়ক। পাঠ্যক্রমে বিজ্ঞান, গণিত, ভাষা, ইতিহাস, ভূগোল, শিল্প, সংগীত, নাটক এবং শরীরচর্চা সহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই বিস্তৃত বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভাণ্ডার বৃদ্ধি করে এবং তাদেরকে বিভিন্ন দিক থেকে চিন্তা করতে ও কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্মুক্ত এবং সমর্থনমূলক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হয় যেখানে তারা মুক্তভাবে চিন্তা করতে এবং নতুন ধারণা প্রকাশ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা যখন একটি উন্মুক্ত পরিবেশে শিখতে পারে, তখন তারা সহজে নতুন ধারণা ও পদ্ধতি অনুসন্ধান করতে পারে। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাদের প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করেন। এই ধরনের পরিবেশ শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা উন্মুক্ত করে। এছাড়াও, প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বতন্ত্র প্রয়োজন এবং আগ্রহ অনুসারে শিখন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যা শিশুদেরকে নিজস্ব গতিতে এবং নিজস্ব পদ্ধতিতে শিখতে সাহায্য করে। যার ফলে তারা নিজেরাই নিজেদের সৃজনশীল ক্ষমতাকে উন্মোচন করতে পারে।
যুক্তরাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা শিশুদের সৃজনশীলতায় সংপৃক্ত করতে নানা ধরনের কৌশল ও প্রায়োগীক শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং প্রতিটি শিশুকে একটি সমৃদ্ধ শিক্ষাজীবন প্রদান করে। সৃজনশীল শিশুরাই শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হতে পারে। এই জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি সহ নান্দনিক চিন্তার উন্মেষ ঘটায়, সৃজনশীলতায় উৎসাহিত করে এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করে। শিক্ষা শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ভাবে চিন্তা করতে এবং নতুন কিছু সৃষ্টি করতে উদ্বুদ্ধ করা উচিত।