অতুলনীয় রবীন্দ্রনাথ যেন এক বিশাল গ্রন্থাগার


পৃথিবীর অনেক দেশের নানা গ্রন্থাগারে যাওয়ার সুযোগ হয়। বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম বৃটিশ লাইব্রেরীতে। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, আমেরিকান লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস হল "বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার"। তবে ব্রিটিশ লাইব্রেরি তার সংগ্রহে থাকা বইয়ের সংখ্যার দিক থেকে "বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার"। রাশিয়ান স্টেট লাইব্রেরি যাকে আগে লেনিন লাইব্ররি বলা হত সেখানেও অনেক বার গিয়েছি। সাড়া দিন থেকেছি। তাকের ভাঁজে ভাঁজে ক্যাটালগ দেখে নির্দিষ্ট বইটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। এই লাইব্রেরিটি রাশিয়ার বৃহত্তম লাইব্রেরি, ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম লাইব্রেরি এবং বিশ্বের শ্রেষ্ট লাইব্ররিগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৬২। যে কোন বড় বড় লাইব্রেরিতে গেলেই একটু অন্য রকম লাগে। আকাশের মতো সীমাহীন জ্ঞানের ভান্ডার লুকিয়ে আছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, প্রকৃতি, নদী, কতো কিছুরই না প্রাঞ্জল প্রকাশ। পৃথিবীর গুনী-জ্ঞানী ব্যাক্তিদের চিন্তা, ভাবনা, দর্শনকে পাওয়া যায় এখানে। আমার রবীন্দ্রনাথ ঠিক তেমনি একটি গ্রন্থাগার যেখানে রয়েছে সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় সাবলীল ভাবে জ্ঞানের সমুদ্রে ডুবে থাকার বিশেষ ব্যবস্থা। প্রকৃতি-বিজ্ঞান-ধর্ম অন্বষনের অমলিন অভয়ারন্য, সমাজ-শিক্ষা-দর্শন আর আন্তর্জাতীকতাবাদে নিজকে ঋদ্ধ করার সুযোগ সহ আরো বহু কিছুর হদিস মেলে এই বিশেষ গ্রন্থাকারে। রবীন্দ্রনাথের বিশালতাকে আমি মনে করি গ্রন্থাগারের সাথেই তুলনা করা চলে। অন্য কারো সাথে নয়। অন্য কোন মানুষের সাথে নয়।

এই লেখাটা লিখতে গিয়ে আজ অনেক দিন পর আমার গ্রামের স্কুলের পন্ডিত স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। এমন পন্ডিত স্যার হয়তো এখন আর খুঁজে পাবো না। খুব যত্ন করে আমাদেরকে পড়াতেন। বাংলা এবং ইংরেজীতে দুটিতেই ছিলেন পারদর্শী। আমাদের বাংলা এবং সংস্কৃতের  ক্লাশ নিতেন। মাঝে মধ্যে ইংরেজীরও ক্লাশ নিতেন। একদিন ইংরেজীর ক্লাশ নিতে এসে কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের একটি কবিতা পড়াচ্ছিলেন খুব সুন্দর করে। বাচন ভঙ্গি এতই চমৎকার ছিল আমরা সকলেই তন্ময় হয়ে শুনতাম। সেদিন ক্লাশের একজন সহপাঠি জিজ্ঞেস করেছিল কে বড় স্যার? কবি-রীন্দ্রনাথ না ওয়ার্ডসওয়ার্থ। সেদিন তিনি উপনিষদের একটি শ্লোক পড়ে আমাদেরকে ধীরে ধীরে ভেঙ্গে ভেঙ্গে প্রতিটি শব্দের মানে বুঝিয়ে বলেছিলেন। তার পর থেকে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে উনি সব সময় এই শ্লোকটি বলতেন: “গগনং গগনাকারং, সাগরং সাগরোপমঃ।“ আমরাও এই দুটি লাইন মুখস্থ করে মগজে ঠিক পাকাপোক্ত করেই ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম।

এই শ্লোকটির অর্থ: “একটা আকাশকে আরেকটা আকাশের সাথে তুলনা করা যায়। একটা সাগরের সাথে আরেকটা সাগরের তুলনা চলে।“ কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে কার সাথে তুলনা করা যায়? কারো সাথেই নয়। রবীন্দ্রনাথের তুলনা শুধু রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ সত্যিই অতুলনীয়। উপমেয়কে শুধু উপমেয়র সাথেই তুলনা করা চলে। তাই যদি বলতে হয় রবীন্দ্রনাথ কার মতো তা হলে বলতে হবে রবীন্দ্রনাথ শুধুই রবীন্দ্রনাথের মতো। বাংলা সাহিত্যের জন্য রবীন্দ্রনাথ প্রথম এশিয়ান, প্রথম নন-ইউরোপীয়ান  যিনি নোবেল বিজয়ী। কিন্তু নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথের তুলনা আরেক নোবেল বিজয়ীর সাথে হয় না। রুডিয়ার্ট কিপলিং (ইংল্যান্ড, ১৯০৭), রোমাঁ রোলাঁ (১৯১৫, ফ্রান্স), উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস (১৯২৩, ইংল্যান্ড), বরিস পাস্তরনাক (১৯৫৮, রাশিয়া) কিংবা পাবলো নেরুদা (১৯৭১, স্পেন), গুন্টার গ্রাস (১৯৯৯, জার্মানী) এরা সবাই নোবেল বিজয়ী। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে এদের কারো সাথেই তুলনা করা যায় না। তার বেশ কিছু কারনও আছে। রবীন্দ্রনাথ শুধু কবিই ছিলেন না, বাংলা ছোট গল্পের স্রষ্টাই ছিলেন না, বলিষ্ঠ প্রবন্ধকারই ছিলেন না, গীতিকার এবং সুরকারই ছিলেন না, শুধু স্থিরপ্রাজ্ঞ চিন্তাবিদই ছিলেন না তিনি ছিলেন এক অখন্ড মানুষ, গায়ক, অভিনেতা, চিত্রকর, শিক্ষাবিদ, ছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, অংশ নিয়েছিলেন ভারতের রাজনীতিতেও।। সব এক সঙ্গে একত্রে এই রকম একটি পরিচয় কোথাও পাওয়া যাবে বলে আমার জানা নেই। শুধুই কি তাই? সেই সময় কালে তিনি ৩০টির বেশী দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। প্রাচ্য থেকে প্রাচাত্যে। মিশেছেন অসংখ্য কিংবদন্তীর সাথে। ইয়েটস থেকে শুরু করে, এজরা পাউন্ড, টি.এস. এলিয়ট, আলবার্ট আইনস্টাইন, উইলিয়াম রোথেনস্টাইন, হেলেন কিলার, রোমেন রোল্যান্ড আরো অসংখ্য জনের সাথে ভাবের আদান প্রদান হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।

বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিল্প ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মবিদ রোমাঁ রোলাঁ লিখেছিলেন ১০ খন্ডের সেই বিখ্যাত বই জাঁ-ক্রিস্তফ যার জন্য তিনি ১৯১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র, জাঁ-ক্রিস্তফ ছিলেন একজন ফরাসি সঙ্গীতজ্ঞ, প্রতিভাধর সুরকার। নানা দুঃখ কষ্ট আর গভীর অন্ধকারের পথ পরিক্রমা এবং আধ্যাত্মিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে তার জীবন। সেই মহান নায়ক জাঁ-ক্রিস্তফ বিধ্বস্ত ফ্রান্সের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মাটিতে হাঁটু গেড়ে শির উঁচু করে আকাশে হাত তুলে পরম বেদনায় সৃষ্টি কর্তার কাছে এক নতুন জীবন প্রত্যাশা করেছিলেন। অথচ বাঙালীর জীবনে সেই আলো আর সে প্রত্যাশা আমাদের রবীন্দ্রনাথ। তিনি ভালোবেসেছিলেন মানুষকে। আর তাইতো ১৪০০ সাল কবিতায়“আজি হতে শতবর্ষ পরে, কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতূহলভরে-” মাধ্যমে কি আকুতি ব্যাক্ত করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তার আকুতি ছিল মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকার। মানুষ ছিল তার কাছে দেবতুল্য।

 

শুরুতেই লিখেছিলাম রবীন্দ্রনাথ যেন এক বিশাল এবং প্রাণবন্ত গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারই বটে যেখানে হাজারো-লাখো নানা বিষয়ের নানা বিচিত্র লেখকের বই, চিত্রকলা একের পর এক তাকে তাকে সাঁজানো থাকে। তবে গ্রন্থাগার

একে কোন সাধারণ গ্রন্থাগার বললে ভুল হবে, বরং একটি বিশাল মেধার ভান্ডার, যেখানে সঞ্চিত আছে জ্ঞান, সংস্কৃতি এবং সৃষ্টিশীলতার অসীম সমাহার। এবার যদি আমরা একটু কল্পনা করি সেই গ্রন্থাগারটি একক ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর সেই ব্যক্তিই হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—একজন সাহিত্যিক বহুমুখী প্রতিভা, যার সাহিত্য, সংগীত এবং চিত্রকলা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এবং প্রশংসিত। রবীন্দ্রনাথ সত্যিই একটি বিশাল গ্রন্থাগার, সৃষ্টিশীলতার প্রতি এক নিবেদিত জীবন। ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে। তার জীবন পরিধি উনিশ শতকের শেষার্ধ থেকে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত। বাঙালি রেনেসাঁর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তাঁর পরিবার ছিল সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের পুনর্জাগরণের কেন্দ্রবিন্দু। এমন একটি পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে তাঁর মধ্যে ছোট বয়স থেকেই কবিতা এবং সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আগ্রহ জন্মায়। রবীন্দ্রনাথ মাত্র আট বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন এবং ষোল বছর বয়সে "ভানুসিংহ" ছদ্মনামে প্রথম উল্লেখযোগ্য কাব্যসংগ্রহ প্রকাশ করেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাহিত্যকর্মের পরিমাণও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, যা কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ এবং গান সহ বিভিন্ন শাখায় বিস্তৃত। তাঁর বহুমুখী প্রতিভা এবং গভীরতা তাঁকে সাহিত্যের জগতে একটি অনন্য স্থান দিয়েছে, যিনি অতি সহজেই বিভিন্ন শাখা ও বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারতেন।

 

রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থাগারের হৃদয় হলো অসাধারন ও অবিস্বরনীয় কবিতা যা তাঁর সাহিত্যিক উত্তরাধিকারের মূল ভিত্তি। তাঁর কবিতাগুলো অনুভূতি, প্রকৃতি, আধ্যাত্মিকতা এবং মানবতাবাদের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। "গীতাঞ্জলি" (গান অঞ্জলি) সংগ্রহের জন্য ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা একটি চিরন্তন শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে গণ্য হয়। "গীতাঞ্জলি" তে রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলো আধ্যাত্মিকতার গভীর অনুভূতি প্রকাশ করে এবং মানুষের ঐক্যের প্রতি তাঁর বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়। রবীন্দ্রনাথের কবিতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল এর নান্দনিকতাকে সহজভাবে প্রকাশ। জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করলেও তাঁর ভাষা সরল এবং কাব্যিক, যা একটি বিস্তৃত পাঠকবৃন্দের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম। তাঁর কবিতাগুলো প্রায়ই প্রকৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং রহস্যকে এমনভাবে চিত্রিত করে যা পাঠকদের অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম।

রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা শুধু কবিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর ছোটগল্প এবং উপন্যাসগুলো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা তাঁর সময়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির একটি জীবন্ত চিত্র প্রদান করে। "গোরা", "ঘরে-বাইরে" এবং "চোখের বালি" এর মতো রচনাগুলো ভারতীয় সমাজের জটিলতা, জাতীয়তাবাদ, পরিচয় এবং নারীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে। শুধুই কি তাই? তিনি একজন সফল সঙ্গীতকার এবং চিত্রকরও ছিলেন। তিনি ২০০০ এর বেশি গান রচনা করেছেন। এই গানগুলো ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং বাংলার লোকজ সঙ্গীতের মেলবন্ধনে গঠিত। রবীন্দ্র সঙ্গীতের কাব্যিক সৌন্দর্য এবং সুরের বৈচিত্র্য বাংলা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। চিত্রকলায়, রবীন্দ্রনাথের ছবি তাঁর সৃষ্টিশীলতার আরেকটি দিক প্রকাশ করে। জীবনের শেষের দিকে তিনি চিত্রাঙ্কন শুরু করেন এবং তাঁর চিত্রগুলো উজ্জ্বল রং এবং বিমূর্ততার অনন্য শৈলীর জন্য পরিচিত। তাঁর চিত্রগুলো প্রায়ই তাঁর কবিতার অনুভূতিগুলো প্রতিফলিত করে, মানব আবেগ এবং প্রকৃতির সারাংশ একটি অনন্য চিত্রভাষায় প্রকাশ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল একজন সাহিত্যিক এবং শিল্পীই ছিলেন না, বরং একজন বিশ্বজনীন চিন্তাবিদও ছিলেন। তিনি এমন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পারস্পরিক সম্মান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি হবে। শিক্ষার প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা প্রণোদিত করেছিল, যা এমন একটি স্থান যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত।

রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকার একটি এমন গ্রন্থাগারের মতো যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রজন্মের পর প্রজন্মের পাঠক, শিল্পী এবং চিন্তাবিদদের অনুপ্রাণিত করছে। তাঁর রচনাগুলো ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক বাধা অতিক্রম করে, মানব অবস্থা সম্পর্কে এমন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে যা আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর কবিতা, গল্প, সঙ্গীত এবং চিত্রকলার মাধ্যমে, রবীন্দ্রনাথ আমাদের নিজেদের মানবতার গভীরতা অন্বেষণ করতে আহ্বান জানান, আমাদের সৃষ্টিশীলতা, সহানুভূতি এবং বৈশ্বিক ঐক্যের বোধকে গ্রহণ করতে উত্সাহিত করেন। বিশ্ব সাহিত্যের বিশাল বিস্তৃতিতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি বিশাল ব্যক্তিত্ব হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। নিজেই একটি গ্রন্থাগার যার শেলফগুলি সজ্জিত রয়েছে জ্ঞান, সৌন্দর্য এবং মানবিকতার গভীর প্রতিফলনের সঙ্গে। তাঁর অবদান আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সংস্কৃতির প্রকৃত সারমর্ম তার সময়কে অতিক্রম করার ক্ষমতায় নিহিত, অনুপ্রাণিত এবং উদ্দীপ্ত করার। এমন একটি পৃথিবী গড়ার যেখানে মানব অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধি সমস্ত রূপে উদযাপিত হয়।

পরিশেষে বলতে চাই, গত শতাব্দিটা আমাদের সকলের জন্য ছিল সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক। এ শতাব্দি দেখেছে-দু দুইটি বিশ্বযুদ্ধ, ২৯শের অর্থনৈতিক মন্দা, বাংলার মানুষ দেখেছে মন্বন্তর, দুর্ভিক্ষ, ক্ষুদা-মহামারি, ভারত বিভাগ, দাঙ্গার ভয়াবহতা, ৭১এর মুক্ত যুদ্ধ, বিধ্বস্ত বাংলা। এই অর্থে পৃথিবীতে হয়তো বাঙালীর মত এতো দূর্ভাগা জাতী আর একটিও নেই। এতোকিছুর পরেও, শতো হতাশা, দুঃখ বঞ্চনার উর্ধে উঠে বলতে পারেন-“নিবিড় ঘন আঁধারে   জ্বলিছে ধ্রুবতারা। মন রে মোর, পাথারে   হসনে দিশেহারা।“ আমরা এতো কিছু হারিয়েছি যা বর্ননাতীত। কিন্তু তারপরেও  বলিষ্ঠ কন্ঠে বলছি, গত শতাব্দী এই বিশ্বকে তা দিতে পারেনি যা রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছে। শরৎচন্দ্র এক মানপত্রে রবীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন “জগতের কাছ থেকে আমরা নিয়েছি অনেক, কিন্তু তোমার ঐ দুটি হাত দিয়ে আমরা ফিরিয়েও দিয়েছি অনেক।“ বাঙালীর জীবনে রবীন্দ্রনাথের এ এক অসামান্য, অসাধারন প্রতিবিম্বন। তিনিই যেন আমাদের নিত্য দিনের অমলীন সুখ। বাঙালীর আত্ম পরিচয়ের তীলক রবীন্দ্রনাথ।

Leave your review