মানুষ, সমাজ কিংবা যে কোন দেশের হৃদস্পন্দন হল লাইব্রেরি। মানব বুদ্ধির রক্ষক, নান্দনিকতার অভিভাবক এবং জ্ঞানের অন্তহীন রাজ্যের প্রবেশদ্বার হল একটি উন্নত মানের লাইব্রেরি। বিশ্বের প্রতিটি কোণে, এই লাইব্রেরিগুলি মানবতার সম্মিলিত জ্ঞান, আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্নকে মূর্ত করে সভ্যতার নীরব প্রহরী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। লাইব্রেরি হল জ্ঞানের ভান্ডার, যেখানে তাকে তাকে ছড়িয়ে আছে সাহিত্য, ইতিহাস, রাষ্ট্রনীতি-অর্থনীতি-সমাজনীতি, বিজ্ঞান এবং দর্শনের বিষয়গুলো। শুধুমাত্র পাঠকদের অন্বেষণ এবং জ্ঞানার্জনের বৌদ্ধিক যাত্রা শুরু করার জন্য অপেক্ষায়। লাইব্রেরিগুলি শেখার, জ্ঞানার্জনের এবং আবিষ্কারের প্রাণবন্ত কেন্দ্র। জ্ঞানের তৃষ্ণাকে লালন করার উত্তম জায়গা। বৌদ্ধিক বৃদ্ধি এবং আত্ম-আবিষ্কারের জন্য একটি অভয়ারণ্য। এই খানেই খুঁজে পাওয়া যায় পরম তৃপ্তি, ধ্রুপদীয় শিক্ষা, জীবনের স্বপ্ন আর আশাকে, অজানাকে জানার উৎসকে আর বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার নিরবধি মূল্যবোধকে। একটি লাইব্রেরি হয়ে উঠতে পারে মনের অভয়ারণ্য, যেখানে কল্পনা উড়ে যায়, কৌতূহল লালিত হয় এবং সম্ভাবনার সীমানা প্রসারিত হয়। আধুনিক বিশ্বের জটিলতাগুলিকে সত্যিকার অর্থে মোকাবেলা করার জন্য লাইব্রেরিগুলিকে লালন করার বিকল্প নেই। এই লাইব্রেরিগুলোই হয়ে উঠতে পারে আলোকিতকরণ, ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক অগ্রগতির অপরিহার্য স্তম্ভ। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ লাইব্রেরিগুলি মানুষের মানবিক উৎকর্ষ এবং কৃতিত্বের স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি লাইব্রেরির রয়েছে নিজস্ব অনন্য উত্তরাধিকার এবং সমাজে রেখেছে অবিস্বরনীয় প্রভাব। আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন ভান্ডার থেকে শুরু করে ডিজিটাল যুগের আধুনিক বিস্ময় পর্যন্ত, এই প্রতিষ্ঠানগুলি ইতিহাসের গতিপথকে রূপ দিয়েছে এবং মানব জীবনকে করেছে সমৃদ্ধ।
পৃথিবীর নানা দেশে বিখ্যাত লাইব্রেরিগুলো দাঁড়িয়ে আছে মানব সভ্যতার বিকাশের সাক্ষী হিসেবে। এরকম একটি আইকনিক প্রতিষ্ঠান হল ওয়াশিংটন, ডি.সি.-এর লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস, প্রায়শই বিশ্বের বৃহত্তম লাইব্রেরি হিসেবে পরিচিত। লক্ষ লক্ষ বই, পান্ডুলিপি, মানচিত্র এবং মাল্টিমিডিয়ায় ঠাঁসা এই বৃহৎ লাইব্রেরিটি জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি আমেরিকার অঙ্গীকারের প্রতীক হিসাবে কাজ করে আসছে। পণ্ডিত, গবেষক এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য এই এক অমূল্য সম্পদ। দেশের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ঐতিহ্যের রক্ষক। ঠিক এমন করেই লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরি, চীনের ন্যাশনাল লাইব্রেরি, জার্মান ন্যাশনাল লাইব্রেরি, প্যারিসের বিবলিওথেক ন্যাশনাল ডি ফ্রান্স, রাশিয়ার ন্যাশনাল লাইব্রেরি, মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্ররিগুলোতে বিরল পাণ্ডুলিপি, ঐতিহাসিক নথি, সাহিত্যের ভাণ্ডার, আধুনিক প্রকাশনা এবং ডিজিটাল আর্কাইভ সহ অগনিত পুস্তকের সংগ্রহ রয়েছে। পন্ডিতদের কাছে এই লাইব্ররিগুলো যেন এক মহান তীর্থ স্থান। বিশ্বের সেরা লাইব্ররিগুলি নিছক বইয়ের ভান্ডারই নয় বরং জ্ঞানের অভিভাবক, বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রানকেন্দ্র এবং সামাজিক অগ্রগতির অনুঘটক। এই লাইব্রেরিগুলি ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের জীবনকে সমৃদ্ধ করে, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করে এবং আমরা যে বিশ্বে বাস করি তাকে গভীরভাবে এবং সত্যিকার অর্থে উপলব্ধি করার পথকে উন্মোচিত করে। এইগুলি যেন আমাদের অতীতের রক্ষক, আমাদের বর্তমানের তত্ত্বাবধায়ক এবং আমাদের ভবিষ্যতের স্থপতি।
এমনি একটি বিশাল জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ লাইব্ররি রয়েছে বাংলাদেশেও। অথচ আমরা এর নামটি অনেকেই শুনিনি। এমনকি যে অঞ্চলটিতে এর অবস্থান সেই অঞ্চলের অনেক শিক্ষিত পন্ডিতজনেরাও হয়তো সেখানে গিয়ে এই অমৃত জ্ঞানভান্ডার থেকে একটু শান্তির সুধা পান করার সৌভাগ্য হয়নি। তবে গত বছর আমার সেখানে গিয়ে কিছুটা সময় কাটানোর বিশেষ সৌভাগ্য হয়েছিলো। সেই লাইব্রেরির প্রধান তত্বাবধায়ক সহ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ স্থানীয় কয়েক জনের সাথে আলাপচারিতাও হয়েছিল। আজ সেই বিখ্যাত রামমালা লাইব্রেরি সম্পর্কেই কিছুটা আলোকপাত করবো।
রামমালা লাইব্রেরি কুমিল্লা শহরে অবস্থিত একশ বছরেরও বেশী পুরনো একটি লাইব্রেরি। মহাপ্রান মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯১২ সালে তার বাড়ীর বৈঠকখানা ঘরে ক্ষুদ্র পরিসরে ঈশ্বর পাঠশালা টোল এবং একটি সংস্কৃত শাস্ত্রের গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এই গ্রন্থাগারটিই রামমালা গ্রন্থাগার হিসেবে পরিচিতি পায়। প্রথম দিকে মহেশচন্দ্রের ইচ্ছানুসারেই কলকাতা থেকে নিয়মিত প্রয়োজনীয় শাস্ত্র গ্রন্থের সরবরাহ করতেন পন্ডিত গুরুচরন তর্কদর্শনতীর্থ আর কাশীধাম থেকে পন্ডিত অন্নদাচরন তর্কচূড়ামনি। বর্তমানে রামমালা গ্রন্থাগারটি কুমিল্লা শহরের প্রানকেন্দ্রে, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের সন্নিকটে বিস্তৃত জায়গা নিয়ে এক শান্ত মনোরম পরিবেশে সগৌরবে অবস্থান করছে। এই গ্রন্থাগারটি সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, ধর্ম এবং জ্ঞানের অন্যান্য শাখার উপর বারো হাজারেরও বেশী মুদ্রিত বই এবং নয় হাজারের মতো হাতে লেখা বই দ্বারা সমৃদ্ধ। হাতে লেখা পান্ডুলিপিগুলি বেশিরভাগই মধ্যযুগের সাহিত্য। উপরন্তু, এই লাইব্রেরিতে বাংলা ভাষার দুর্লভ পত্রিকাও সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাংলা সাপ্তাহিক-বঙ্গবাসী, হিতবাদী, সঞ্জীবনী, মাসিক-সাহিত্য পরিষদ, প্রবাসী, সহ শনিবারের চিঠি, মৌচাক, পূর্বাশার বিষয়গুলোও এখানে খুঁজে পাওয়া যায় যা বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রন্থাগারে পাওয়া যায় না। এখনো সংস্কৃত আর্যপ্রভা-র পুরনো কপিগুলো এখানে সংরক্ষিত আছে।
রামমালা গ্রন্থাগারে তুলনামূলক ধর্মীয় তত্ত্বের বইয়ের একটি অতুলনীয় সংগ্রহ রয়েছে। এই বিভাগে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, শীখ, জৈন, ইহুদি, পার্শী, মিশরীয়, ব্যাবিলনীয়, আসিরিয় সহ পৃথিবীর প্রাচীন ও আধুনিক ধর্ম সম্পর্কীত বইগুলো সংরক্ষিত আছে। তবে বিপুল বইয়ের ভান্ডার রয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতির উপর। বেদান্ত শাস্ত্রের পান্ডুলিপি থেকে শুরু করে পুরান, স্মৃতি, কাব্য, নাটক, ব্যাকরন, দর্শন-ইতিহাস, জোতিষ, বৈদ্যিক শাস্ত্র, অর্থ শাস্ত্র, নানা ধর্মীয় গ্রন্থের অনুবাদ, প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের পন্ডিতদের গবেষনালদ্ধ পুস্তকসমূহ সংরক্ষিত আছে। লাইব্রেরির নানা বিভাগে সর্ব সাধারনের উপযোগী ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, জীবন-চরিত, নীতি শাস্ত্র সহ স্কুল কলেজের পাঠ্য পুস্তক, হস্তলিখিত দুস্প্রাপ্য প্রাচীন সংস্কৃত ও বাংলা পুঁথী এবং ভারতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাহক শ্রেষ্ঠ ভারতীয়দের অসংখ্য চিত্র সংগৃহীত আছে। এই রামমালা গ্রন্থাগারটি যেন জ্ঞানার্জনের অভয়ারন্য। লাইব্রেরিটি দুর্লভ সংগ্রহের কারণে দেশ-বিদেশের গবেষকদের কাছে বিখ্যাত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং জাপানের গবেষকরা এই গ্রন্থাগারে নানা সময়ে এসেছেন, কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছেন।
এই বিখ্যাত লাইব্রেরিটির প্রতিষ্ঠাতা কুমিল্লা জেলার নবীনগর উপজেলার বিটঘর গ্রামের দানবীর জ্ঞান পিপাশু মহেশ ভট্টাচার্য। তাঁর জন্ম স্থান বিটঘর প্রাচীনকাল থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বদা অগ্রসর ছিল। দরিদ্র ঘরের সন্তান ছিলেন বলে মহেশ ভট্টাচার্য লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি এবং অল্প বয়সেই জীবিকার সন্ধানে কুমিল্লায় চলে আসেন। ঝাঁপিয়ে পড়েন জীবন সংগ্রামে। টাকা রোজগারের বাসনায় কাজে মনোযোগ দেন। সমস্ত দুঃখ-কষ্ট, বাধা -বিপত্তিকে সাদরে হাসি-মুখে বরন করে সময়ের সাথে এগুতে থাকেন। যখন পর্যাপ্ত পরিমান সঞ্চয় করার সৌভাগ্য হয় ঠিক তখুনি `'ভট্টাচার্য অ্যান্ড কো' নামে একটি কোম্পানি খুলে হোমিওপ্যাথ ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন। তারপর থেকে তিঁনি আর পেছনে ফিরে তাকাননি। এগুতে থাকেন সামনের দিকে। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের কারনে একদিন ঐশ্বর্যশালী হয়ে উঠেন, বিত্তশালী হয়ে একজন সত্যিকারের দানবীর হয়ে উঠেন।
ধীরে ধীরে সমাজকল্যান মূলক কাজে নিজকে নিয়োজিত রাখেন। পরবর্তীকালে নিজ অর্থ ব্যায়ে তিনি গড়ে তুলেন নিবেদিতা স্কুল ও ছাত্রী নিবাস, বিটঘর শিক্ষা সংসদ, ঈশ্বর পাঠশালা, রামমালা গ্রন্থাগার ও মিউজিয়াম এবং ছাত্রদের জন্য একটি হোস্টেল রামমালা ছাত্রাবাস। মহেশচন্দ্রের মাতামহ প্রানকৃষ্ণ শিরোমনি ছিলেন একজন বিখ্যাত পন্ডিত। পিতা ঈশ্বরদাস তর্কসিদ্ধান্ত ছিলেন প্রতিভাসম্পন্ন পন্ডিত। দারিদ্রতা থাকা সত্বেও বাড়ীতে ১০/১৫ জন বিদ্যার্থী রাখিয়া তাদের ভরন পোষনের দায়িত্ব নিয়েছেন, শিক্ষাকতা করেছেন। জননী রামমালা দেবী স্বহস্তে রান্না করে সকলকে খাওয়াতেন। মায়ের ছিল শিক্ষার প্রতি বেশ অনুরাগ। নিজে লেখা পড়া করতে পারেন নি, কিন্তু অন্যের আগ্রহে তিঁনি হতেন আনন্দিত। তাই তাঁর মায়ের নামেই এই গ্রন্থাগারটির নামকরন করা হয়। মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং বর্তমানে মহেশ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত, এই গ্রন্থাগারের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার প্রচার এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করা। রামমালা লাইব্রেরির দেখাশোনার জন্য তিনি মিঃ রাশমোহন চ্যাটার্জিকে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লায় নিয়ে আসেন। রাশমোহন চ্যাটার্জি নিজের সন্তানের মতো রামমালা লাইব্রেরির দেখাশোনা করতেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য পাঠের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। মহেশ ভট্টাচার্যের অর্থায়নে এবং রাশমোহনের আন্তরিকতায়, রামমালা একটি গবেষণা কেন্দ্রে রুপান্তরিত হয়।
রামমালা লাইব্রেরিটি বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় পর পর দুইবার। প্রথম বার ১৯৪৭ সালে যখন ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হয়, এবং তারপর আবার ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। যার ফলে রামমালা লাইব্রেরি থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। জরাজীর্ন লাইব্রেরির চারিপাশ, ভেতর-বাহির। প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো যত্ন ও সঠিক পরিচর্যার অভাবে বিচ্ছিন্নভাবে ধুলো-বালি আবৃত হয়ে তাকে তাকে স্তুপাকারে আছে। কাচবিহীন জানালা এবং ফুটো ছাদ সহ কক্ষগুলিতে রাখা হয়েছে এই সমস্ত দূর্লব পাণ্ডুলিপিগুলো। এই মূল্যবান সংগ্রহটি সংরক্ষণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে আমাদের সবাইকে। এটিকে সার্বিকভাবে রক্ষা করতে সহায়তা করার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ শুরু করা খুব জরুরি। যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে আশির দশকে কিছু মাইক্রোফিল্মিং এবং পাণ্ডুলিপির সাধারণ শ্রেণীবিভাগ সহ পাণ্ডুলিপিগুলোকে সংরক্ষন করার জন্য সীমিত প্রচেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রাথমিক প্রচেষ্টার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সংগ্রহের সম্পূর্ণ সুযোগ অজানা থেকে যায়। ড. বেঞ্জামিন ফ্লেমিং, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, রামমালা লাইব্রেরি মেনুস্ক্রিপট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ছয় হাজারেরও বেশী সংস্কৃত, বাংলা এবং প্রাকৃত পাম-পাতা এবং কাগজের পাণ্ডুলিপির একটি তালিকা তৈরি করতে পণ্ডিতদের একটি আন্তর্জাতিক দলকে একত্রিত করেন। অনন্য উপকরণের এই সংগ্রহ থেকে, প্রায় ১০০টি বিরল এবং দুর্বল পাণ্ডুলিপি পুনঃস্থাপন এবং ডিজিটাইজ করা হয়। ভবিষ্যতের একটি বড় সংরক্ষণ ও ডিজিটাইজেশন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্বাচিত আইটেমগুলির ডিজিটাল ছবিগুলি অনলাইনে আনার ব্যাবস্থা করার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
রামমালা লাইব্রেরিটি বাংলার গৌরব, অত্র অঞ্চলের মানুষদের জ্ঞানান্বষনের এক স্বর্গীয় অভয়ারন্য। কুমিল্লা শহরের প্রানকেন্দ্রে এক ছায়া ঢাকা শান্ত সুনিবিড় অপূর্ব মনোরম পরিবেশে জ্ঞানভান্ডারের অমৃত সুধাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গেইট দিয়ে ঢুকতেই এর সামনের অঙ্গনের বিশালতায় মন ভরে যায়। একই চৌহদ্দীর মধ্যে রয়েছে ঈশ্বর পাঠশলা, রামমালা ছাত্রাবাস, রামমালা গ্রন্থাগার, নিবেদিতা স্কুল ও ছাত্রীবাস। রয়েছে একটি নাট মন্দির যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা মানব জাতির কল্যানে প্রার্থনায় বসে। সামনেই একটি মাঠ। মাঠ সংলগ্ন একটি পুকুর। মাঠের পাশেই সরকারী সহায়তায় নতুন ছাত্রাবাস নির্মিত হয়েছে। রামমালা লাইব্রেরিটি এই অঞ্চলের মানুষের হৃদস্পন্দন, আত্ম পরিচয়ের গর্বিত তিলক, জ্ঞানার্জনের এক দূস্প্রাপ্য অভয়ারন্য। একে বাঁচিয়ে রাখা এবং এর দর্শনকে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের সামাজিক, নৈতিক ও জাতীয় দ্বায়িত্ব। সরকার এই লাইব্রেরিটি সহ তৎসংলগ্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির রক্ষনাবেক্ষনে যত্নশীল হয়ে মহাপ্রান মহেশচন্দ্রের শিক্ষার আদর্শকে ধারন, লালন ও পালন করে বাংলার মানুষের জ্ঞানান্বেষনের পথকে উন্মোচিত করবে এই প্রত্যাশা।