সময়ের হাত ধরে জীবন এগিয়ে চলে সামনের দিকে। এ চলার পথে নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, কখনো বা কেউ সে লড়াইয়ে পরাজিত সৈনিকের মতো লুটিয়ে পড়ে, কেউবা আবার অমীয় শক্তি আর উদ্দীপনায় সেই সব বাঁধাকে অতিক্রম করে বিজয়ের মুকুটে আসীন হয়। দুঃখ-বেদনা, হাসি-কান্নার পথ চলায় টেমস তীরের নগর কাব্যের বাংলাদেশীরা সেই কাব্যেরই চরিত্র। একটা সময় ছিলো যখন সহিংসতা এবং বর্নবাদে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলো লন্ডন। ফ্যাসিস্ট এবং স্কিনহেডসদের ছিলো তান্ডবতা। পূর্ব লন্ডনের বাঙালি সম্প্রদায়ের ওপর এক দশকের সহিংসতা চালিয়েছে উগ্র-বর্নবাদী শয়তানেরা। কখনো বা হাতুরীর আক্রমনে ভেঙ্গে দিতো শরীরের হাড়-পাঁজর, ধারালো ছুড়িতে রক্তাক্ত করে দিতো সারা শরীর, কেটে দিতো গলা কিংবা মুখমন্ডল। বর্নবাদী আক্রমনের শিকার হয়ে অনেকেই প্রান দিয়েছে বিলেতের মাটিতে। আলতাব আলীও সেই সহিংসতার শিকার হয়ে চলে গেলেন পরপারে। তার স্বপ্ন আর পূর্ন হলো না। বিবাহিত স্ত্রীকে বংলাদেশ থেকে আর বিলেতে আনা হলো না। নরপিশাচদের হিংস্র বর্নবাদী থাবায় এক লহমায় থেমে গেলো আলতাব আলীর এই সুন্দর চির চেনা পৃথিবী। বন্ধু শামসকে বলেছিলো কাজ থেকে ফিরে এসে প্রথমবারের মতো লন্ডনের স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে। কিন্তু তার সে আশা আর পূর্ন হলো না। অনেক দিন পর কবি শেলীর একটি কথা মনে পড়ে গেলো-“জীবনে দুঃখের পাত্র এতো উপচানো থাকে যে প্রত্যেকটি মানুষকে কিছু না কিছু দুঃখ বহন করতে হয় (Life cannot be conceived of without being of tragedy)”। ১৯৭০ যে জাতীগত সহিংস বর্নবাদী তান্ডবতা শুরু হয় লন্ডনে তার ছোবলে প্রান দিতে হলো তোসির আলি নামে আরেক প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশীকেও ১৯৭০ এর মাঝামাঝি কোন এক সময়ে। গলা কেটে নিশংসভাবে হত্যা করা হয় তাকে। সেই বছরের মে মাসের শেষের দিকে ৫০এর অধিক ডানপন্থী দলের স্কিনহেড বর্নবাদীরা ব্রিক লেনে তাণ্ডব চালায়। অতীতকে বাদ দিয়ে যে বর্তমানকে ধারন করা যায় না এবং বর্তমানের জঠরেই রোপীত হয় ভবিষ্যতের বীজ। তাই আজকের নগর কাব্যে তুলে ধরবো বাংলাদেশীদের বিলেতে বসবাসের প্রথম প্রজন্মের আলতাব আলীকে নিয়ে।
ব্রিক লেনের ঠিক মাথায় যেখানে হোয়াইটচ্যাপেল হাই স্ট্রিটে এসে মিশেছে, একটি ছোট আকারের শোভাময় প্রবেশদ্বার সহ সুন্দর সবুজে ঘেরা পার্ক রয়েছে। এই পার্কটি টাওয়ার হ্যামলেটস-এর বারোতে অবস্থিত এবং লন্ডনের একমাত্র পার্ক যা একজন বাঙালির নামে নামকরণ করা হয়েছে। অতীতে এই পার্কটি সেন্ট মেরি'স গার্ডেন নামে সর্বজন পরিচিত ছিলো। মেরি ছিলেন নাজারেথের প্রথম শতাব্দীর একজন ইহুদি মহিলা, যোসেফের স্ত্রী এবং যীশুর মা। তিনি খ্রিস্টধর্মের একজন মহিয়সী রমনী। তাঁর নামে বেশ কয়েকটি পার্ক রয়েছে লন্ডনে। কিন্তু আলতাব আলী ছিলেন বিলেতে পাড়ি দেওয়া প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশীদের একজন। অতি সাধারন পরিবারের ছেলে, একজন অভিবাসী পোশাক কর্মী যিনি ১৯৬৯ সালে তার চাচার সাথে লন্ডনে এসেছিলেন। সেই সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ১৮। এক তরুন তাজা টগবগে স্বপ্নময়ী কিশোর। ইংল্যান্ডে একটি উন্নত জীবন গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। আলতাব শীঘ্রই লন্ডনের ইস্ট এন্ডের অ্যালডগেট ইস্ট স্টেশনের কাছে হ্যানবেরি স্ট্রিটের একটি কারখানায় চাকরির সন্ধান পান। ২০১১ সালে প্রকাশিত ডেভিড রোজেনবার্গের “বেটল ফর দি ইষ্ট লন্ডন থেকে জানা যায় যে স্থানীয় মসজিদের সেক্রেটারি, গোলাম মোস্তফা ছিলেন আলতাব আলীর নিয়োগকর্তা। কারখানাটি ব্রিকলেনের সাথেই এবং তার থাকার জায়গা থেকে হাঁটার দুরুত্বে। এই এলাকাটি ১৯৮০ এর দশকে বৃহৎ বাঙালি জনসংখ্যার কারণে 'বাংলাদেশ টাউন' নামে পরিচিতি লাভ করে। সেই সময় এবং তার পূর্ববর্তী সময়ে এই এলাকাটিতে ইহুদী অভিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিলো এবং নানা ধরনের কারখানা গড়ে উঠেছিলো। ধীরে ধীরে ইহুদী জনসংখ্য হ্রাস পেতে শুরু করলো এবং সাথে সাথে বাঙালি সম্প্রদায়ের প্রসার ঘটেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পূর্ব লন্ডনের নানা এলাকা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বেশ কয়েক বছর কাজ করার পর কয়েক মাসের জন্য আলতাব আলী বাংলাদেশে ফিরে যান ১৯৭৫ সালে এবং বিয়ে করেন। নব বধুকে দেশে বাবা-মার কাছে রেখে ফিরে আসেন লন্ডনে আবার এক নতুন স্বপ্নকে বুকে ধারন করে। খুবই সুখের স্বপ্ন। সংসার গড়ার স্বপ্ন। লন্ডনের সাঁজানো ঘরে বিবাহিত বধুকে বরন করার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন আলতাব আলী। কিন্তু তার স্বপ্ন আর পূরন হলো না।
১৯ শতকের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আগমন শুরু হয়। সে সময় পূর্ব লন্ডনে খুব অল্প সংখ্যক বাঙালির বসতী ছিলো। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলদেশীদের বিলেতে আগমনের সময়টা ছিলো ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে যখন ব্রিটেনের যুদ্ধ-পরবর্তী শ্রমের ঘাটতি বিদেশী শ্রমিকদের জন্য জরুরি প্রয়োজন তৈরি করেছিল। যেহেতু এই প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীরা ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড জুড়ে তাদের নতুন বাড়িতে বসতি স্থাপন করেছিল, তারা ব্রিটিশ সমাজে আত্তীকরণ করার চেষ্টা করার সময় অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। কারখানার কাজ বা বিল্ডিং সাইটের মতো স্বল্প বেতনের চাকরিতে দীর্ঘ সময় কাজ করা সত্ত্বেও, অনেকে স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষার সীমিত অ্যাক্সেস সহ অনেক লোকের সাথেই ছোট্ট কামরায় বসবাস করতেন। তারপরেও বাংলাদেশীরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলো এক স্বপ্নের আবাসস্থল এই পূর্বলন্ডনে। চেয়েছিলো বিলেতের মাটিতে ভালোভাবে বাস করতে যা দূর্ভিক্ষতারিত পূর্ব পাকিস্থান বা সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশে পারেনি। কিন্তু সব চাওয়া যে সব সময় পাওয়া যায় না তাই যেন সত্যে পরিনত হল আলতাব আলীর জীবনে। কী ঘটেছিলো সেই দিনটাতে, যে দিন একটি মৃত্যুকে ঘিরে বংলাদেশী সম্প্রদায় বিলেতের মাটিতে নতুন করে ভাবনার তাগিদ অনুভব করেছিলো, সৌভাত্রের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো একে অপরের সাথে, জেগে উঠেছিলো এক নতুন দ্রোহ আর ভালোবাসায়। এই দিনেই তাজা এক বংলাদেশী যুবক হোয়াইট চ্যাপল ষ্ট্রীটে খুন হন।
দিনটা ছিলো ১৯৭৮ সালের ৪ঠা মে। বৃহস্প্রতিবার। আকাশাসটা মেঘলা ছিলো, দক্ষিনে নিম্নচাপ সহ পূর্বের ঠান্ডা বাতাস। সেই দিনটাও ঠিক অন্যদিনের মতোই ছিলো। তখনকার সেন্ট মেরি'স গার্ডেনের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া অ্যাডলার স্ট্রিট ধরে কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন সেইদিনের তরুন যুবক আলতাব আলী। “তার দুহাতে দুটি ব্যাগ ছিল। একটিতে তার সন্ধ্যার খাবারের জন্য একটি টিফিন বক্স ছিল এবং আরেক হাতে ছিল সবজির ব্যাগ”। আলতাব আলীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সামসুদ্দীন সামস এক সাক্ষাতকারে এই কথাগুলো বলেছিলেন। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনজন শ্বেতাঙ্গ যুবক ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর। আক্রমণ ও ছুরিকাঘাতের শিকার হন তিনি। বর্নবাদের এক উলঙ্গ ছোবল তছনছ করে দিল আলতাব আলীর জীবন, স্বপ্ন, ভালোবাসা। চরম শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ডান পন্থীদের দ্বারা জাতীগত বৈষম্যের বলী হয়ে প্রান দিতে হলো আলতাব আলীকে। তিন কিশোর - রয় আর্নল্ড, কার্ল লুডলো যাদের বয়স ছিলো ১৭ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় কিশোরের বয়স ছিল ১৬। সেটা এমন একটা সময় ছিলো যখন ইংল্যন্ডে নিয়মতান্ত্রিক সহিংসতার উগ্রবাদী শ্লোগানে যেমন “ব্ল্যাকস আউট”, “হোয়াইট ইজ রাট”, কিংবা “কিল দা ব্ল্যাকস” আতংকিত সাধারন মানুষ সহ অভিবাসীগন। সেই সময় “পাকি”-দের উপর বর্নবাদের রোষানল ছিল অতিমাত্রায়। পাকি ভেবেই আক্রমন করেছিল আলতাব আলীকে যা খুনীদের স্বীকারোক্তিতে বেড়িয়ে আসে কোর্টের কাঠগড়ায়। পূর্ব লন্ডনের হাসপাতাল পর্যন্ত পোঁছানোর আগেই মার যান। সে দিনের আরকটি বিশেষত্ব ছিলো যে সে দিনেই স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বৃটিশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট বাংলা অধ্যুষিত বারা টাওয়ার হ্যামলেটস প্রায় ১০ শতাংশ ভোট লাভ করেছিল। এই বর্নবাদীদরাই ত্রিশের দশকে ইহুদিদের আতঙ্কিত করেছিলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই আলতাব আলীর হত্যার সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশীদের মধ্যে। শোক আর আতংকের ছায়া নেমে আসে সকলের চোখে মুখে। তার সপ্তাহ খানেক পরে হাজারো বাঙালী ডাউনিং স্ট্রিট এবং হাইড পার্কে জমায়েত হয়েছিল। বর্নবাদ আর এই জঘ্ন্য হত্যার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল। সেইদিন টাওয়ার হ্যামলেট জুড়ে স্থানীয় রেস্তোরাঁ , দোকানপাট সহ সব কারখানা এবং ওয়ার্কশপগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সারা দিন ছিলো বৃষ্টি। এর মধ্যেই আলতাব আলীর কফিন বহনকারী গাড়ির পিছনে পিছনে হাজারো মানুষ চলে মিছিল করে।
চার দশকেরও বেশী সময় অতিবাহিত হলো বিলেতে পাড়ি দেওয়া প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশী আলতাব আলীর নিশংস হত্যাকান্ডের পর। কালের গর্ভে বিলিন হলো কতো দুঃখ বেদনার স্মৃতি। টেমসের জলে ধীর গতিতে নিত্য প্রবাহমান অসংখ্য ফ্যাসীবাদী এবং বর্নবাদের ঘৃন্য সহিংসতার খান্ডব দহনের ছোপ ছোপ রক্ত। নগর কাব্যের বিষাদের বেলাভূমিতে যুক্ত হলো অসংখ্য ঘটনার ট্র্যাজিডি কিন্তু তার মাঝেও বিবর্তিত সময়ের গন্ডোলায় বাড়তে থাকে মানুষেরা ভীড়। স্বপ্নের পরিধী। ১৯৭১ সালের আদমশুমারিতে টাওয়ার হ্যামলেটসে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা ছিলো ১ লক্ষ ৬১ হাজার। দশ বছর পরে এটি কমে ১ লক্ষ ৩৯ হাজরে এসে দাঁড়ায়। সেই সময় প্রায় ১৫ হাজার বংলাদেশী টাওয়ার হ্যামলেটসে ছিলো যারা মূলত পোশাকের কারখানা এবং ক্যাটারিংয়ের কাজে নিয়োজিত ছিল। ধীরে ধীরে এই এলাকাটি হয়ে উঠে বাংলাদেশীদের প্রধান জায়গা। ২০২১ এর পরিসংখ্যান মতে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের প্রতি ছয়জন বাংলাদেশীর মধ্যে একজন টাওয়ার হ্যামলেটসে বসবাস করেন। স্থানীয়ভাবে, বাংলাদেশি জনসংখ্যা আনুপাতিক ৩৫ শতাংশ এবং সংখ্যানুসারে এক লক্ষ সাত হাজারের উপরে। উভয় ক্ষেত্রেই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। টাওয়ার হেমলেটস আজ অন্যরকম । বাংলাদেশীদের মিলন মেলা। বিশেষ করে বাংলা টাউনের ব্রিক লেইন দিয়ে পথ চলতে চলতে কখনো মনে হবে না যে এই জায়গাটি বিলেতের লন্ডনে অবস্থিত। প্রবাসী বংলাদেশীদের বৃদ্ধির কারনে বদলেছে সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। বদলেছে জাতীগত বর্নবাদ আর সহিংসতার ধরন। বাংলাদেশীদের প্রভাব আজ সমাজের নানা ক্ষেত্রে প্রতীয়মান। বিলেতে এখন বসবাস করছে তিন প্রজন্মের বাংলাদেশীরা। তাই বেড়েছে সামাজিক ভাবনার দার্শনিক ঋজুতা।
আলতাব আলীর জাতিগতভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ডটি ছিল একটি ভয়ানক মুহূর্ত যা লন্ডন সহ পুরো বৃটেনে বাংলাদেশী সম্প্রদায় সহ সকল অভিবাসীকে তুমুল ভাবে নাড়া দিয়ে যায় এবং পুরো জাতীকে এক নতুন মোড়কে চিহ্নিত করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে স্থানীয় বাংলাদেশীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংপৃক্ততা বৃদ্ধি সহ সারা দেশ জুড়ে অন্যান্য অনেক জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমতার প্রতিষ্ঠার পথকেও উন্মুক্ত করে। তার হত্যাকাণ্ড ঘৃণা, বৈষম্য এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে টাওয়ার হ্যামলেটস-এর সম্প্রদায়কে একত্রিত করেছিল। অনেক অদৃশ্য, প্রান্তিক এবং বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশি "স্বীকৃতির" রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলো - সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, ক্ষমতা এবং প্রতিনিধিত্বের দাবিতে। এই হত্যাকান্ড যেন খুলে দিয়েছিলো এক নতুন প্রগতী আর সামাজিক উন্নয়নের দ্বার এবং অভিবাসীদের জন্য ক্ষমতায়নের চাবিকাঠি। আলতাব আলীর মৃত্যুকে অমর করে রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে পার্কটির নাম সেন্ট মেরি'স থেকে পরিবর্তন করে আলতাব আলী পার্ক করা হয়। পার্কের প্রবেশপথে একটি সুদৃশ্য খিলান রয়েছে, যা আলতাব আলী এবং বর্ণবাদী হামলার শিকার অন্যান্যদের স্মরণার্থে তৈরি করা হয়েছে। আলতাব আলী পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দাঁড়িয়ে আছে বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণকারী শহীদ মিনার। স্মৃতিস্তম্ভটি বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত শহীদমিনারর একটি ছোট প্রতিরূপ।
বিলেতের মাটিতে পথ চলায় যারা আমাদের জন্য তৈরী করেছিলেন একটি সুশোভন সুস্থ এবং ভয়হীন ভাবে ঘর-গেরস্থালী নিয়ে বসবাসের পরিবেশ তারা আমাদেরই পূর্বসূরী প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশীরা। যদিও তারা নানা সাংস্কৃতিক পার্থক্য থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ পর্যন্ত অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন পদে পদে, এটা অনস্বীকার্য যে প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশীরা সমসাময়িক ব্রিটিশ জীবনকে অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের দুঃখ বেদনার গল্পটি কেবল তাদের নিজস্ব স্থিতিস্থাপকতারই প্রমাণ নয় বরং এটি একটি অনন্য অনুস্মারক হিসাবে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে চলার সাহস যোগায়, অনুপ্রেরনা দেয় এবং সফলতার পথে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকে। নগরকাব্যের আলতাব আলী বেঁচে থাকবেন সকল বিলেত প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভাবনায়-চেতনায়-মননে।