জীবন এক বহতা নদী। সময়ের বিবর্তনে শুধু এগিয়ে চলা সামনের দিকে। নদী আর মানুষ যেন একই বৃন্তের দুটি কুড়ি। এগিয়ে চলাই একমাত্র কাজ। পেছনে তাকানোর কোন ফুরসৎ নেই। ভাববার সময় নেই। সময় যে সীমিত। অন্ততঃ মানুষ প্রজাতীর জন্য। প্রতিটি নদীই কালের জীবন্ত সাক্ষী। এর নিজস্ব অনন্য যাত্রা যা ইতিহাসের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে অনন্তকাল ধরে এবং চলতে থাকবে আরো বহুযুগ। প্রতিটি নদীরই রয়েছে নিজস্ব একটি গল্প যা প্রায়শই এই সুন্দর পৃথিবীর মৃত্তিকা মায়ের বুকে অপার মহিমায় হামাগুড়ি দিয়ে এঁকে বেঁকে সর্পিলাকারে চলার অভিজ্ঞতায় পূর্ন। সময়ের সাথে সাথে লক্ষ মানুষ আর প্রজাতীর হাসি-কান্না-আনন্দ বেদনা, সুখ-দুঃখ আর উন্মাদ উচ্ছ্বাসের সাথে মিথস্ক্রিয়ার ইতিহাসে নিহিত এক অনবদ্য স্মৃতিগাঁথা। আমাদের আশা-আকাংখা, প্রেম-ভালোবাসা, জ্ঞান-অভিজ্ঞতা, খাদ্য, বিনোদন, শক্তি কতো কিছু না অকৃপনতার সাথে দিয়ে যাচ্ছে এই নদীগুলো। এক প্রান্জল, ভুবনমোহিনী, সুরঙ্গনা, তরঙ্গীনি নদীরাই যেন আমাদের বেঁচে থাকার নির্ভরতা। কি চমৎকার সাদৃশ্য রয়েছে এই নদীদের সাথে মানুষের। শুধু উৎস পথটা একটু ভিন্ন কিন্তু চলার পথটা একই সমীকরনে বাঁধা। নদী বহতা অনন্তকাল মিশে যায় সাগরের মোহনায়। নদী-এবং মানুষের চলার পথ কখোনই মসৃন নয়। কখনো খরা মসুমের মতো তাপদাহের অস্থিরতা, কখনোবা আষাড়ের অঝর বৃষ্টিপাত, কিংবা হীমাংকের নিচে শীতের কনে কনে ঠান্ডা আর তুষারের ভয়ংকর হাঁড়কাঁপানো আছড়িয়ে পরা বাতাসের তান্ডবতা। তারপরেও সকল পরিস্থিতিতে গ্রহন করেই আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। নদী আর মানুষের যাত্রা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতি যতটাই শক্তিশালী হোক না কেন, চলার পথে যত বাধাই আসুক না কেন,মানুষ আর নদী সবকিছুকে অতিক্রম করার অদম্য সাহস আর শক্তি রাখে। দুমড়ে গেলেও মানুষ আবার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় এবং ভবিতব্যের দিকে হাত বাড়িয়ে ফের চলতে থাকে। আমাদের মনে রাখা উচিত যখনই জীবন আমাদের চলার পথে কোন বক্ররেখা ছুড়ে দেয় – হাল ছাড়তে নেই, এগিয়ে যেতে হবে, কারণ আমরা কখনই জানি না যে প্রতিটি বাঁকের চারপাশে কী আশ্চর্যজনক বিস্ময় অপেক্ষা করছে। জীবন যে এক বিস্ময়কর এবং নতুনত্বের ছোঁয়ায় আবর্তিত।
এ বিস্ময়কর জীবনকে নিয়েই আমার উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর বেদনার জলসিঁড়িতে থরে থরে সাঁজাতে চাই আমার ভাবনাগুলোকে এই নগর কাব্যে। জীবন তো সত্যিই এক কাব্য। উত্থান-পতনের, সুখ-দুঃখ আর হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। এই নগরকাব্যের ছোট ছোট অনুভূতির উচ্ছ্বাসগুলোর উৎস শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রবহমান ইংল্যান্ডের টেমস নদীর তীরে গড়ে উঠা রোমান সাম্রাজ্যের কাল থেকে নানা দর্শন, ইতিহাস, কৃষ্ঠি, সংস্কৃতি আর প্রাচ্যত্বের জল হাওয়ায় বিবর্তিত নগর বিলাতের লন্ডন। হাজারো বছরের সাক্ষী এ নগর, আর এর বুকের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ইতিহাসে ঠাসা এবং ইংল্যান্ডের অন্যতম আইকনিক ল্যান্ডমার্ক টেমস। এ দু`কে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের স্বপ্ন, আশা আর ঘর গেরস্থালী। পূঁজিবাদের মধ্য গগনে বেড়ে উঠা এই শহরের মানুষগুলোর স্রোতের মতো নিরন্তর এগিয়ে চলার সুখ-দুঃখের গল্পগুলি একটু অন্যরকম। এই নগরই যেন হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বের মানুষের ভাবনার এবং চিন্তার দর্শনিক ভুখন্ড। এই টেমসের পলি সিক্ত মাটির গাঁথুনিতে ইট পাথর আর কংক্রিটের ভাঁজে ভাঁজে গগনচুম্বী অট্টালিকা আর সুদৃশ্য নগরায়নের চোখ ধাঁধানো মনোরমায় শহরের অলি গলিতে পথ চলায় মানুষ খুঁজে পায় প্রশান্তির তীব্রতা। নতুন এক পুঁজিবাদী অনুভূতি, ভোগবাদীতার জঠরে বেড়ে উঠা প্রাপ্তির ঠিকানা। হ্যাম্পটন কোর্ট প্যালেস বা কীউ গার্ডেনের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলি থেকে, অথবা ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের দিকে বা আরও পূর্ব দিকে গ্রিনউইচের কোল গেঁষে কোন এক অলস বিকেলের অন্তে হিরন্ময় সন্ধ্যায় নৌকায় চড়ে ডাউনরিভারে চষে বেড়ানো এবং প্রানভরে শীতল হাওয়ায় নিজকে পরিপূর্ন করায় কী স্বর্গীয় সুখ পাওয়া যায়! তা বর্ননাতীত। শুধু উপলব্ধির ব্যাপার। জীবনকে মনে হয় অপূর্ব সুন্দর!
এই সৌন্দর্যের হিরন্ময় জ্যোতি যেন উদ্ভাসিত হয় টেমসের বুকে। ইতিহাস জুড়ে এর বিবর্তন এটিকে শুধুমাত্র ইংল্যান্ডের জন্যই নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশের জন্যও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছে। এর অবিশ্বাস্য যাত্রা আজও অব্যাহত রয়েছে। টেমসের মতো পৃথিবীর নানা ভূখন্ডের মানুষেরাও হেঁটে চলেছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আশায়। নতুনের খুঁজে, যা সম্ভাবনা আর উন্নতভাবে বেঁচে থাকার রুদ্রকোজ্জ্বল স্বপ্নে ঘেরা। এরই পথ ধরে বাংলাদেশীরা সহ নানা জাতীর মানুষেরা পাড়ি দিয়েছে এই বিলেতে, ঘর বেধেছে নতুন করে। এর মধ্যেই কেটে গেছে কয়েক প্রজন্মের পথচলা। এই প্রবাসে বাঙালী আর বাংলা ভূখন্ডের মানুষেরা। বেঁচে থাকার সংগ্রামের কাহিনীই নগর কাব্যের উপাদান, সুখ-দুঃখের ভাষা। চলার পথে এই নদীর পাশে বেড়ে উঠা প্রবাসী বাঙালীর জীবন, দর্শন, ইতিহাস, সমাজতত্ব, বিশ্বায়নের বায়ুজলে বাড়ন্ত চেতনার বৈশ্বিক ভাবনারাই জাগ্রত এই নগর কাব্যের প্রতিটি লাইনে। আজকের নগর কাব্যে তুলে ধরবো প্রবাসী বাঙালীদের বিলেতে পদচিহ্ন রাখার গল্প। এখান থেকেই শুরু হোক টেমসের তীরের নগর কাব্যের যাত্রা।
যখন লন্ডনে বাংলাদেশিদের আগমনের কথা আসে, তখন এর সূত্রপাত ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে একটু ফিরে যেতে হয়। সময়টা ছিল যখন ব্রিটেন প্রাক্তন উপনিবেশ যেমন ভারত ও পাকিস্তান থেকে শ্রমিক নিয়োগ শুরু করে। এই শ্রমিকদের বেশিরভাগই রেলওয়ে, বাস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলিতে কাজ করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। একই সময়ে বেশ কিছু বাংলাদেশিও চাকরির সুযোগ বা উচ্চশিক্ষার সন্ধানে ব্রিটেনে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশী অভিবাসনের প্রথম তরঙ্গ ১৯৫৮/৫৯ সালের দিকে শুরু হয়েছিল, যারা পূর্ববঙ্গ (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে লন্ডনে একটি উন্নত জীবন খোঁজার জন্য পাড়ি জমায়। এই প্রাথমিক তরঙ্গে বেশ কিছু শিক্ষার্থীও ছিল যারা ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে এসেছিল বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিসিনে পেশাদার ক্যারিয়ারের জন্য যোগ্যতা অর্জনের জন্য বিলেতে পাড়ি জমায়। এই প্রবাসী বাঙালী শিক্ষার্থীরা নতুন জায়গায় নতুন আয়োজনে বসতি স্থাপন করার সাথে সাথে, তারা দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন তৈরী করে ধীরে ধীরে চলার পথকে কিছুটা প্রানবন্ত করার নিমিত্তে। এই সংযোগের কারনেই ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে অভিবাসনের পরিধিটা আরো বিস্তৃত হয়। ব্রিটেনের রাজধানী শহরে নিজেদের এবং তাদের সন্তানদের জন্য একটি উন্নত জীবন খুঁজতে বাংলাদেশ থেকে আরও অনেক পরিবার আসতে থাকে সে সময়। ধীরে ধীরে পরিনত হয় লন্ডনের একটি অংশ বাঙালী কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর যোগাযোগের মিলন কেন্দ্র।
প্রথমদিকে, বেশিরভাগ বাংলাদেশী অভিবাসী হোয়াইটচ্যাপেল এবং স্টেপনি গ্রিনের আশেপাশে বাস করত। এই অঞ্চলগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রচুর বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয় এবং সেই সময়ে বসবাসের জন্য তুলনামূলকভাবে সস্তা জায়গা ছিল। পরবর্তীতে আরও বেশি লোকের আগমনের সাথে সাথে ধীরে ধীরে পূর্ব লন্ডনের অন্যান্য অংশে যেমন টাওয়ার হ্যামলেটস এবং নিউহ্যাম বারায় ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশীদের বসবাস। এ এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই এশিয়ান সম্প্রদায়ের লোকজন প্রতিষ্ঠিত ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশীরা বিলেতে আসছে এবং অধিকাংশই নতুন স্বপ্নে নতুন ভাবে গড়ে তুলছে নিজের বসবাসের জায়গা। সঠিক ভাবে বলা না গেলেও বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে বলা যায় আজ, আনুমানিক ৭ লক্ষাধিক বাংলাদেশী বিলেতে বসবাস করছে যাদের ৫০ শতাংশের বেশী বসবাস করছে লন্ডনে। ২০১১ এর পরসংখ্যান মতে ৫২ শতাংশেরও বেশী বৃটিশ বাংলাদেশীদর জন্ম গ্রেট বৃটেনে এবং বাকী জনসংখ্যার বেশীর ভাগের জন্ম বাংলাদেশে। বেশিরভাগ বাংলাদেশীরা টাওয়ার হ্যামলেটস থেকে হ্যাকনি হয়ে লেইটনস্টোনের দিকে প্রসারিত একটি এলাকার মধ্যে বাস করে, কিন্তু এখন ওয়েস্টমিনস্টার, সাউথওয়ার্ক এবং এমনকি কেনসিংটন এবং চেলসি সহ উত্তর লন্ডনের অনেক এলাকাতেই বাংলাদেশীদের বসবাস গড়ে উঠেছে। বর্তমানের অভিবাসনের বিস্তৃতির বিচ্ছুরণটি এটাই প্রতিফলিত করে যে হোয়াইটচ্যাপেল হাই স্ট্রিট থেকে যাত্রার সেই প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশী সম্প্রদায়গুলি হামাগুঁড়ি দিতে দিতে বিলেতের মাটিতে কতটা এগিয়ে এসেছে। এখন ব্রিটিশ সমাজের কার্যত প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশীদের তৎপরতা দৃশ্যতঃ।
ব্যাবসা-বানিজ্য আর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্ট সহ লন্ডনবাসীদের জন্য তৈরী করেছে একটি নতুন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা এবং ব্রিকলেন সেই বাঙালী সংস্কৃতির প্রানকেন্দ্র। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে আগত প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের দ্বারা অনেক ব্যবসা স্থাপন করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ থেকে উদ্ভাবনী স্টার্ট আপ পর্যন্ত, বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা আধুনিক লন্ডনের চেহারা তৈরি করতে সাহায্য করেছে। এটা স্পষ্ট যে গত ৭০ বছরে দক্ষ কর্মী, উদ্ভাবক এবং উদ্যোক্তাদের এই প্রবাহ না থাকলে, পূর্ব লন্ডন আজকের মতো হতো না - সংস্কৃতি এবং বৈচিত্র্যে পূর্ণ একটি প্রাণবন্ত এলাকা। অনেকের জন্য, লন্ডনে পাড়ি দেওয়া একটি সাফল্যের গল্প। ব্রিটেনের রাজধানীতে উচ্চশিক্ষা বা পেশাগত যোগ্যতার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী সম্প্রদায় আজ উন্নতি ও সমৃদ্ধির শিখরে অবস্থান করছেন এবং অনেকের জন্য সুযোগ এবং সম্ভাবনার দ্বাড় উন্মোচন করছেন। লন্ডনের বাংলাদেশী সম্প্রদায় কালের বিবর্তনে রাজধানীতে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রাণবন্ত জাতিগোষ্ঠীর একটিতে পরিণত হয়েছে। একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি যা দীপাবলি, ঈদ এবং দুর্গা পূজার মতো উৎসবের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই সমৃদ্ধ সম্প্রদায়টি গ্রেট বৃটেনের রন্ধনপ্রণালীতেও তার ঋদ্ধতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। কারি হাউস থেকে শুরু করে রাস্তার খাবারের স্টলগুলিতে সেরা দেশীয় খাবার সহ বিরিয়ানি,হালুম, ফুচকা, মিষ্টি সামগ্রী, পরোটা-ভাজি এবং সামোসা পরিবেশন করছে। ব্রিকলেনে হাঁটতে হাঁটে দুপাশের দোকানগুলির দিকে তাকালে হঠাৎ করেই মনে হবে যেন পুরাতন ঢাকার কোন এক পরিচিত রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। খাঁটি বাঙালী পরিবেশ, দোকান থেকে ভেসে আসা বাংলা গান আর বাংলা কথা-বার্তার এক অনবদ্য বাঙালী সংস্কৃতির চিহ্ন। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশী অভিবাসীরা গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাজ্যের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে বিশাল অবদান রেখেছে। পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেনের আশেপাশের এলাকাটি তার প্রাণবন্ত বাঙালি সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। আইনজীবী, ডাক্তার এবং হিসাবরক্ষকের মতো জনসেবামূলক ভূমিকা থেকে শুরু করে সব জায়গাই বাংলাদেশীদের বিচরন লক্ষনীয়।
যদিও বাংলাদেশীদের বিলেতে আগমনের যাত্রাটি প্রায় ষাট বছর আগে হোয়াইটচ্যাপেল হাই স্ট্রিটের এক ভাঙ্গাচূড়া নিম্ন পরিবেশ থেকে শুরু হয়েছিল, আজ তা সময়ের আবর্তে লন্ডনে বাংলাদেশি অভিবাসনের এই অসাধারণ যাত্রাটি একটি অবিশ্বাস্য সাফল্যের গল্পে পরিনত হয়। এই সম্প্রদায়ের অসীম শক্তি, দৃ্ঢ় আকাংখ্যা, স্ব্প্ন এবং অদম্য প্রচেষ্টা অতি অল্প সময়ের মধ্যে এতদূর নিয়ে এসেছে। যদিও পথ চলা ছিল কংটকময় এবং নানা প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রতি মুহর্তে কিন্তু, তাদের দৃঢ় সংকল্প এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদেরকে করেছে ঋদ্ধ এবং বিকশিত। তাদের অন্তরে ছিলো দ্রোহের ভালোবাসা। তাই তারা হয়ে উঠেছে ব্রিটেনের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক গলে যাওয়া পাত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশিরাও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, শুধু টাওয়ার হ্যামলেটস থেকে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন এবং মেয়রও একজন বাংলাদেশী। জাতীয় রাজনীতিতে রয়েছে বাংলাদেশীদের দ্বীপ্ত পদভার। চারজন বংলাদেশী মেম্বার অব পার্লামেন্টের পদে আসীন হয়েছেন। হাউস অব লর্ডসেও রয়েছে বাংলাদেশীদের সম্পৃক্ততা। লন্ডন হয়ে উঠেছে তৃতীয় বংলাদেশ। এযে আমাদেরই সাফল্য। একে চেতনায় লালন করে, বুকে ধারন করে বাংলাদেশীরা এগিয়ে যাবে অনেক দূরে, নগর কাব্যের সারথী হয়ে আলোকবর্তীকার মতো পথ দেখাবে নতুন প্রজন্মকে, শুনাবে পিতা, প্র-পিতামহের সাফল্যগাঁথা কাহিনী। নগর কাব্য হবে সমৃদ্ধ!