রাজনৈতিক মূল্যবোধে পশ্চিমা গণতন্ত্র ও বর্তমান বিশ্ব


রাজনৈতিক মূল্যবোধে

পশ্চিমা গণতন্ত্র ও বর্তমান বিশ্ব

 

প্রাশ্চাত্য সভ্যতা বহু দিনের। গত দুই হাজার বছর ধরে সমাজের নানা শাখায় বিশেষ উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে এই সমাজে। নানা বিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন আর রুপান্তরের পথ ধরে সমাজ ও রাষ্ট্র হয়েছে সমৃদ্ধ ও ঋজু।  প্রাচীন গ্রীস থেকে শুরু করে রোমান সাম্রাজ্যের পথ ধরে মধ্যযুগীয় পশ্চিমা খ্রিস্টধর্মের সাথে যুক্ত যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক  মূল্যবোধের আবির্ভাব হয়েছিলো তা আরো বেগবান হয়েছে পশ্চিমা মনীষিদের নিরলস কর্মযজ্ঞে। যার ফলে শুরু হয় রেনেসাঁ, সংস্কার, শিল্প, সাহিত্য-শিক্ষা-সংস্কৃতিতে নব জাগরন, বৈজ্ঞানিক বিপ্লব। পরবর্তীতে বিশ্বায়ন আর তথ্যপ্রযুক্তির আশির্বাদে দৃশ্যমান হয় এক নতুন আধুনিক একবিংশ শতাব্দীর প্রাশ্চাত্য। তবে প্রাশ্চাত্যে যে নবজাগরন শুরু হয়েছিলে ১৪০০ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে যা নিয়ে এসেছিলো এক নতুন জীবনধারা এবং সামাজিক দর্শন, মুক্ত চিন্তা-ভাবনা, চিন্তায় নান্দনিকতা তা শুধু প্রাশ্চাত্যই নয় সারা বিশ্বকেই চিরতরে বদলে দিয়েছে। রেনেসাঁর ফলে সমাজ শিক্ষার উপর বেশি মনোযোগ দেওয়া শুরু করে। যার ফলে ধর্মের গুরুত্ব কমে যায় এই প্রাশ্চাত্যের দেশগুলিতে। প্রাধান্য পেলো মানবতা। শুরু হলো বুদ্ধিবৃত্বিক আন্দোলন। শিক্ষা, শাস্ত্রীয় শিল্প, সাহিত্য এবং বিজ্ঞানে মানুষের মনোনিবেশ বাড়তে লাগলো। যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পেলাম প্রাশ্চাত্যের দেশগুলির জয় জয়কার। কি দর্শন, সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমরনীতি সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়লো অগ্রগতি ও উন্নয়নের অভূতপূর্ব  সাফল্য। মানবতাবাদী ধারনাগুলি পেলো সর্বোচ্চ সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা।

 

কিন্তু হঠাৎ করেই যেন একদিন সবকিছু বদলে গেলো কিংবা বদলে যাচ্ছে। সমাজের সব ক্ষেত্রেই শুরু হলো ক্ষয়রোগ। বিপর্যয় আর অস্থিতিশীলতা। যদিও এমন এক পরিস্থিতির জন্য অনেক চিন্তাশীল, দার্শনিক এবং প্রাজ্ঞ মনীষিগন বেশ আগ থেকেই চিন্তিত ছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে বিশ্বে একদিন দুর্দিন নেমে আসবে। যেমন আড়াই হাজারেরও বেশী আগে সক্রেটিস গণতন্ত্রকে অজ্ঞান, দুর্নীতিগ্রস্ত জনতার শাসন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে গণতান্ত্রিক পাল কেবল আনন্দের পেছনে ছুটছে, মিষ্টভাষী ও তোষামোদকারীদের রাজনৈতিক পদের ক্ষমতা দিয়ে পুরস্কৃত করে, যারা নিজেদের সন্তুষ্টির জন্য রাজনীতিকে শোষণ করে। গনতন্ত্র, ব্যাক্তি স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা আর বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্মাদনা সারা বিশ্বব্যাপী এই সময়ে পরিলক্ষীত হচ্ছে সে বিচারে এই জাতীয় গনতান্ত্রিক ধারনা সমাজের জন্য মঙ্গলজনক নয়। নানা সময়ে পশ্চিমা গনতন্ত্র সম্পর্কে পশ্চিমা দার্শনিকদের কথা-বার্তায় এবং লিখনিতে হতাশার কথাই ফুটে উঠেছে। যদিও গনতন্ত্রের তাত্বিক উদ্দেশ্য যেমন সামাজিক সমতা, প্রতিনিধিত্ব এবং স্বাধীনতার নীতিগুলিকেই মূর্ত করা হয়েছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন নানা কারনেই সম্ভব নয়। বরং উদ্দেশ্যগুলির সঠিক প্রয়োগ করতে গিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে এসেছে ঘোর সংকট। একবিংশ শতাব্দীর আলোকে গনতান্ত্রিক ধারনাগুলি কেন সমাজের জন্য ক্ষতিকর তার কিছু ধারনা আমরা প্রাচ্যাত্যের মহান পন্ডিত ব্যাক্তিদের কাছ থেকেই জানতে পারি। মহান দার্শনিকরা পশ্চিমা গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত ত্রুটিগুলির একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ সমালোচনা প্রদান করেছেন।

 

গনতন্ত্র সম্পর্কে সক্রেটিসের উক্তি আগেই উল্লেখ করেছি। সক্রেটিসের ছাত্র এবং অ্যারিস্টটলের শিক্ষক ছিলেন মহান চিন্তাবিদ ও দার্শনিক প্লেটো। প্রাচীন গ্রীসে তখন চলছিলো দার্শনিক ধ্যান ধারনার উৎকর্ষের মাহেন্দ্রক্ষন। দার্শনিকরা সেই সময়ে মানব প্রকৃতি, নীতিশাস্ত্র এবং নৈতিক দ্বিধাগুলির মতো বিভিন্ন ধারণা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা ও তাত্ত্বিকতা নিয়ে ভাবতেন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্লেটো নিরলসভাবে নানা বিষয়ে লিখেছিলেন। তাঁর চিন্তা ভাবনায় একটা বিশেষ প্রভাব ছিলো তাঁর শিক্ষক সক্রেটিসের। প্লেটোর অবিশ্বরনীয় মূলগ্রন্থটি যা বিশ্বব্যাপী এখনো সমাদৃত "দ্য রিপাবলিক"-এ গণতন্ত্রের একটি গঠনমূলক সমালোচনা উপস্থাপন করেছেন। তিনি গনতন্ত্রকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা হিসাবে চিত্রিত করেছেন। তাঁর মতে গনতন্ত্র হলো সরকারের একটি মোহনীয় রূপ, বৈচিত্র্যময় ও বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ। তিঁনি দাবি করেন যে, অতিরিক্ত স্বাধীনতার কারণে গণতন্ত্র বিপন্ন। তাঁর মতে, গনতন্ত্র এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা যেখানে প্রত্যেকেরই শাসন করার অধিকার রয়েছে। সব ধরণের স্বার্থপর মানুষ যারা জনগণের জন্য কস্মিন কালেও কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করে না কিন্তু শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব ইচ্ছা দ্বারা অনুপ্রাণিত তারাও ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। প্লেটো যুক্তি দেন যে ব্যক্তিস্বার্থের অনিয়ন্ত্রিত অনুসরণ এবং সমাজের মধ্যে পুণ্যের অবক্ষয় আর পূঁজিবাদের অসম বিকাশের কারনে গণতন্ত্র অনিবার্যভাবে হিংস্রতায় রুপ নেয়। তিনি দাবি করেন যে গণতন্ত্র অযোগ্য এবং নীতিহীনদের ক্ষমতায়ন করে, তাদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য জনমতকে চালিত করার অনুমতি দেয়। শুধু তাই নয়। "দার্শনিক-রাজা" সম্পর্কে প্লেটোর ধারণাটি ছিলো যে প্রকৃত ন্যায়বিচার শুধুমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তিদের শাসনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। আজ যদি প্লেটো বেঁচে থাকতেন তিনি কি করতেন আমাদের জানা নেই। তবে তার কথাই যে সত্যে পরিনত হয়েছে, সমাজ যে আজ দূর্বৃত্যায়নের অভয়ারন্য তা দেখে হয়তো খুব কষ্ট পেতেন। কারন সমাজ সত্যেকে গ্রহন করতে চায় না। মিথ্যার রাজত্ব আজ চারিদিকে।

 

গ্রীস থেকে যদি এখন আমরা পুঁজিবাদের রাজধানী ইংল্যান্ডের দিকে আসি তা হলে দেখতে পাবো উনিশ শতকের একজন স্বনামধন্য ব্রিটিশ দার্শনিক, রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ এবং বেসামরিক কর্মচারী ছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিল। তিঁনি উদারনীতি এবং সামাজিক অগ্রগতির তত্ত্বের পান্ডিত্যের কারনে হয়েছিলেন  জগৎবিখ্যাত। ১৮০৬ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহন করেন। মিলের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ, "অন লিবার্টি" যা প্রকাশ পায় ১৮৫৯ সালে। একটি বিকাশমান সমাজের অপরিহার্য উপাদান হিসাবে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে তিনি জোড়ালো সমর্থন দিয়েছেন। সাথে সাথে তিঁনি  গণতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের অত্যাচার সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ব্যক্তি-স্বাধীনতা রক্ষায় গণতন্ত্রিক মূল্যবোধকে স্বীকার করার সময়, মিল সংখ্যালঘুদের কণ্ঠকে দমন করা এবং প্রচলিত সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা সামঞ্জস্য আরোপের বিরুদ্ধেও সতর্ক করেছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে গণতন্ত্রকে নিছক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে সমতুল্য করা উচিত নয় বরং ব্যক্তি অধিকার এবং স্বাধীনতার সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। মিলের ধারণাগুলি সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক সমাজে বহুত্ববাদের প্রয়োজনীয়তাকে ঘিরে সমসাময়িক আলোচনায় অনুরণিত হয়। মিলের মতো আরেক চিন্তাবিদ হান্না আরেন্ড্টও রাজনৈতিক উদাসীনতার সমালোচনা করেছিলেন। তিঁনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক দার্শনিক। জন্মগ্রহন ১৯০৬ সালে জার্মানীর এক ইহুদী পরিবারে হলেও সাতাশ বছর বয়সে তিঁনি জার্মান ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। বসবাস শুরু করেন প্যারিসে। আট বছর পর পাড়ি দেন আমেরিকায়। হান্না আরেন্ড্ট, "দ্য হিউম্যান কন্ডিশন" এবং "অন রেভোলিউশন" এর মতো কাজগুলিতে রাজনৈতিক উদাসীনতা এবং বিচ্ছিন্নতা দ্বারা চিহ্নিত আধুনিক গণতন্ত্রের একটি স্বতন্ত্র সমালোচনা করেন। তিনি সক্রিয় নাগরিকত্ব এবং জনসাধারণের সম্পৃক্ততার পতনের জন্য পুঁজিবাদ ও ভোগবাদের উত্থানকেই সরাসরি দায়ী করেন। সাথে সাথে আমলাতন্ত্রীকরণ এবং সরকারী ক্ষেত্রের বেসরকারীকরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র এবং তৃণমূল আন্দোলনের মাধ্যমে জনজীবনে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে উদাসীনতা এবং বিচ্ছিন্নতার যুগে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অধঃপতন হওয়াটাই স্বাভাবিক।

 

প্রাশ্চাত্যের এই মনীষিদের উদ্বিগ্নতাই আজ সত্যি হয়েছে। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় বিশ্বে একটা ভারসাম্যতা ছিলো। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী পশ্চিমা দেশগুলির নানা ষড়যন্ত্রের কারনে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তখন গনতন্ত্রের আস্ফালন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সারা বিশ্বকে গনতন্ত্রের মোড়কে আচ্ছাদনের জন্য চলে পশ্চিমাদের প্রচার অভিযান ও যত্র তত্র লেকচার। তবে এবার পশ্চিমাদের মতে গনতন্ত্রের মূল শত্রু রাশিয়াকে প্রতিহত করার জন্য চলছে নতুন ধরনের চক্রান্ত। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির দিকে একটু চোখ দিলেই বুঝা যাবে পশ্চিমারা বিশ্বকে তার নিজস্ব চিত্রে রূপ দেওয়ার শক্তি হারিয়েছে। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্থান, সিরিয়া থেকে শুরু করে ইউক্রেইন, আর গাজায় যা ঘটছে তা থেকে স্পষ্ট যে পশ্চিমা গনতন্ত্রের গভীর সংকটাপন্ন অবস্থা। তারপরেও পশ্চিমা পন্ডিতসহ, রাজনীতিবিদ, মিডিয়া, সাংবাদিক ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা অনবরত পৌরাণিক কাহিনী প্রচারের মতো নির্লজ্জেভাবে প্রচার করে যাচ্ছে যে পশ্চিমা গনতন্ত্রই সামাজিক অগ্রগতির চাবিকাঠি।  কিন্তু সম্প্রতি `দ্য ফোর্থ রেভোলিউশন` এর লেখক ইংলিশ লিবারেলিজমের পতাকাবাহী ইকোনমিস্ট জন মিকলথওয়েট এবং অ্যাড্রিয়ান উলড্রিজের মতে পশ্চিমা গনতন্ত্রে পচন ধরেছে। অথচ এই সকল ব্যাক্তিবর্গই  দীর্ঘদিন ধরে জোর দিয়ে বলে আসছিলেন যে প্রাচ্যের দেশগুলি কেবল পশ্চিমা প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমেই সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারে। এই শতাব্দীর বুকে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে চলতে একটি উপলদ্ধিই জাগ্রত হয় আর তা হলো- মানব ইতিহাসের সবচেয়ে হিংসাত্মক শতাব্দীর মুখোমুখি আমরা আজ সকলে। প্রতিটি সমাজ ও রাষ্ট্রের নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতেই সংপৃক্ত হয়ে আছে মানুষের অস্তিত্বের চূড়ান্ত রূপ এবং আদর্শ। এই সংস্কৃতির আদর্শকে ধারন, লালন ও পালনের মধ্যে আসবে সমাজের আসল মুক্তি।

 

প্লেটো, জন স্টুয়ার্ট মিল এবং হান্না আরেন্ড্টের মতো মহান দার্শনিকদের দেওয়া পশ্চিমা গণতন্ত্রের সমালোচনা সমসাময়িক রাজনৈতিক ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। যদিও গণতন্ত্র পশ্চিমা শাসনব্যবস্থার একটি ভিত্তিপ্রস্তর। প্রাশ্চ্যাত্যের আদলে গড়ে উঠা গনতান্ত্রিক সংস্কৃতির নানা ত্রুটিগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়া এখনই উচিৎ। পশ্চিমা সমাজের উচিৎ রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচার থেকে বেড়িয়ে এসে গনতন্ত্রের বুলি না ছেড়ে অন্যের উপর গনতন্ত্রের বাতাস জোড় করে চাপিয়ে না দিয়ে অসম পুঁজিবাদ আর লাগামহীন ভোগবাদের উপর নজড় দেওয়া। ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং সক্রিয় নাগরিকত্বের নীতিগুলিকে সমর্থন করে এমন ধারনাগুলিকে আরও শক্তিশালী করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক প্রক্রিয়ার জন্য প্রচেষ্টা করা অপরিহার্য। পুঁজিবাদ আর মুক্তবাজার অর্থনীতির আদলে গড়া পশ্চিমা গনতন্ত্রের সামাজিক মূল্যবোধ যেখানে পুঁজি, ভোগবাদীতা, আমিত্ববাদ, পণ্য, চাকরি, ব্যাক্তি ও বাক স্বাধীনতা এবং মানুষ সঞ্চালিত হয় অবাধে, সে গনতন্ত্র আজ ক্ষয়রোগে আক্রান্ত। গত শতাব্দী থেকেই পশ্চিমা শীতল যোদ্ধের অতি উৎসাহী পন্ডিতেরা উত্তর-ঔপনিবেশিক বিশ্বকে কমিউনিস্ট-শৈলীর বিপ্লব থেকে দূরে সরিয়ে ধীরে ধীরে এক অসম ভোক্তা পুঁজিবাদ ও তথাকথিত গণতন্ত্রের দিকে ধাবিত করছে। ইউরোপীয়ান আধিপত্য ও প্রগতির পুরো অংশটাই ছিলো ভ্রাতৃঘাতী সহিংসতা, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতারণা এবং আত্ম-প্রতারণার দ্বারা প্রভাবিত। তাই আমাদের উচিত সমাজ কিংবা রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের নিজস্ব উপায়েই বিকাশলাভ করা। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও আদর্শকে সামনে রেখে ভৌগলিক পরিবেশকে বিবেচনায় এনে মানুষের চিন্তা-চেতনা ও শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েই সামাজিক দর্শন গড়ে উঠার মধ্যে নিহীত সমাজের উন্নয়ন ও প্রগতি। যেমনটি হয়েছিলো রুশ বিপ্লবের পর রাশিয়াতে।

 

Leave your review