নৈতিক শিক্ষার উন্নয়নে বিদ্যালয়ের ভূমিকা

শিক্ষার চিরস্থায়ী লক্ষ্য হলো নৈতিক এবং প্রায়োগিক শিক্ষা প্রদান করা যা মানুষকে সক্ষম, আত্নবিশ্বাসি,   মানবীয় করে তোলে। সম্প্রতি, আমি কোন এক লেখায় লিখেছিলাম যে চরিত্র গঠনই শিক্ষার শেষ লক্ষ্য। চরিত্র শিক্ষার প্রত্যাবর্তন বিশ্বজুড়ে বর্তমান সামাজিক সঙ্কটের কারনেই বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এর কোন বিকল্প নেই। আমরা মাদকাসক্তি, অপরাধ, অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভাবস্থা, সামাজিক সহিংসতা, আত্মহত্যা, ভংগুর পারিবারিক কাঠামো, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, জাতিগত কোন্দল সহ আরও অনেক সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দ্রুত শিল্পায়ন বিশ্বায়নের যুগে এটি একটি  ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সাংঘাতিক উদ্বেগজনক প্রবণতা সমাজে লক্ষ্য করছি সারা বিশ্বজুরে গত কয়েক দশক ধরে, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরবর্তী সময়ে। যদিও এর মধ্যে কয়েকটি সামাজিক সমস্যা নৈতিক চরিত্র বিকাশের সাথে সংপৃক্ত নয়, তবে বিশ্বজুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে এই জাতীয় সামাজিক সমস্যাগুলোকে নৈতিক শিক্ষার সাথে যুক্ত করার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে দিন দিন। আমরা সকলেই কিছুটা হলেও বিশ্বাস করি যে সামাজিক অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি এমন একটি ভাল শিক্ষাব্যাবস্থার মধ্য দিয়ে সম্ভব যা নৈতিকতা এবং সার্বজনীন সামাজিক মূল্যবোধগুলিতে সুস্পষ্ট, তবুও, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান রূপটি শিশু এবং কৈশোরের নৈতিক বিকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে বা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তাই দিন দিন দৃশ্যমান।

আমরা সকলেই কোন না কোন ভাবে বুঝি বা উপলব্ধি করি যে, বৃহত্তর পরিসরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিই সাধারনত শিক্ষার্থীর চরিত্র বিকাশের জন্য সর্বাংশে দায়বদ্ব। অথচ, এই গুরু দায়িত্ব এবং এইরকম প্রতিশ্রুতি বাস্তবে কীভাবে প্রয়োগ করা যায় সে সম্পর্কে একটি অস্পষ্টতা আছে বলেই মনে হয় নিতিনির্ধারক সহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিই সাধারনত সামাজিক পট পরিবর্তনের প্রাথমিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। সামাজিক পরিবর্তনের সুবিধার্থে এবং চরিত্র গঠনের মাধ্যমে একটি জাতি গঠনে সর্বাধিক সম্মিলিত বাহন হিসাবে মুক্ষ্য ভুমিকা পালন করে আসছে এই শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলিই। সুতরাং, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির রয়েছে নৈতিক দায়িত্ব, শিক্ষার্থীর জীবনে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় বুদ্বিবৃত্তিমূলক, মেধাবী, সৎ, যোগ্য, সামাজিক, সংবেদনশীল, যুক্তিবাদী এবং সময়োপযোগী নাগরিক তৈরি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার।

আমরা ন্যায়পরায়ন এবং নৈতিক শিক্ষা, চরিত্র শিক্ষা বা শিক্ষার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের কথা বলছি। আমরা কি আধুনিক যুগে নৈতিক শিক্ষা বলতে কি বুঝায়, সেই বিষয়টিকেই সম্বোধন করছি সঠিকভাবে? আমরা কীভাবে চরিত্র শিক্ষাকে সময়োপযোগী এবং সার্বিক মানবিক বিকাশে মূল্যবোধের উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি সে নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করছি কি? একটি শিশুকে ভারসাম্যপূর্ণ, স্বাধীন চিন্তাবিদ, স্বপ্রতিফলিত করতে সক্ষম করে তোলে যে শিক্ষা পদ্বতি এবং প্রচলিত  সমসাময়িক মূল্যবোধের ভাল দিকগুলির মধ্যে একটি সাদৃশ্য তৈরি করতে সক্ষম, সে বিষয়গুলোকে আমরা আমলে আনছি কি? নৈতিক শিক্ষা কীভাবে একটি শিশুকে কেবল পরিমানগত  ভাবেই নয়, গুণগত ক্ষেত্রেও সফল করতে পারে-সেই হোক আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে কারোরই যেন এই নিয়ে ভাবনা নেইা  গড্ডালিকা প্রবাহে আমরা সকলেই যেন গা ভাসিয়ে চলেছি। 

নৈতিক শিক্ষা এমন একটি পদ্বতি বা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে প্রাসঙ্গিক জ্ঞান, দক্ষতা, মান, অভ্যাস, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কোমল চরিত্রগুলি বিকাশ লাভ করে। নৈতিক শিক্ষার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হলো শিশুদের মধ্যে মেধাবী, কৌতুহলী, সামাজিক এবং সংবেদনশীল আচরণ বিকাশে সহায়তা করা, যা সৎ এবং নৈতিক চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়। একটি ভাল নৈতিক শিক্ষা একদিকে যেমন সমালোচক, কৌতূহলী, মুক্তমনা, স্ব-প্রতিফলিত, স্বতন্ত্র, সংশয়ী এবং সত্যের সন্ধানে শিক্ষার্থীদের সক্ষম করে তোলে, অন্যদিকে নৈতিকতা, সম্মান, দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা, সম্পর্কের মধ্যে নৈতিক সংযুক্তি এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে নৈতিক শিক্ষার গুনগত এবং পরিমাণগত দিকের সমন্বয় রেখেই শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে সহায়তা করা উচিত। শিশুদের নৈতিক যুক্তি উন্নত করতে এবং সঠিক দক্ষ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ সর্বাগ্রে প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান পন্থাগুলি কেবল অতিহ্যগত এবং প্রচলিত মান-ভিত্তিক শিক্ষা পুনরুদ্ধারেই মনোনিবেশ করা  উচিত নয়, বরং স্বাধীনভাবে চিন্তা, ন্যায়বিচার, নৈতিকতা, প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা, সুস্থ বন্ধনের মতো সামাজিক মূল্যবোধগুলির সার্বজনীন নীতিগুলি গ্রহন ধারন এবং লালন করতে প্রচষ্টা রাখতে হবে।

একটি শিশুর আত্ম-নিয়ন্ত্রণ  মেধা বিকাশের বিষয়গুলি নৈতিক আচরণ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, শিশুর নৈতিক আচরণ এবং সৎ মনোভাব প্রাথমিকভাবে তাদের পিতামাতাদের কাছ থেকেই অনুশীলনের মাধ্যমে পেয়ে থাকে বা পিতামাতার দ্বারা পরিচালিত হয় তবে অনেক ক্ষেত্রেই পিতামাতা  সন্তানের সম্পর্কের হেরফের বা সম্পর্কের দুরত্বের কারণে সন্তানের মধ্যে এই জাতীয় মানষিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সুতরাং, সন্তানের নৈতিক সার্বিক মানষিক বিকাশে বিদ্যালয়ের গঠনমূলক ভূমিকা এইক্ষেত্রে মুক্ষ্য হয়ে ওঠে। সেই জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্টানগুলি শিশুদের মধ্যে এই জাতীয় নৈতিক এবং মানবিক বিকাশ সাধনের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ এবং নীতিমালা তৈরির জন্য সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে  যেখানে শিশুরা বেড়ে উঠবে সত্যিকারের নাগরিক হিসাবে।
শিক্ষাকে সমাজের মেরুদন্ড এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারক এবং বাহক হিসাবে দেখতে হবে। মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে, নৈতিক শিক্ষা শিক্ষাত্রীদের নিজস্ব ক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে এবং এই ক্রিয়াগুলির উপর সমালোচিতভাবে প্রতিফলিত হতে সক্ষম করে তুলে। সুতরাং, শিক্ষা মানুষের মুক্তির মাধ্যম। স্কুলগুলি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমিক এজেন্ট। তাই, শিক্ষার্থীদের নৈতিক বিচারের বিকাশের একটি গুরু দায়িত্ব বর্তায় শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলির উপর। স্কুলগুলি একটি মুক্ত পরিবেশে শিক্ষাত্রীদের বেড়ে উঠার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা সাধ্যমতো করা উচিত। সমালোচনামূলক শিক্ষা (critical pedagogy) প্রয়োগের মাধ্যমে, বিদ্যালয়গুলি সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার তৈরি করা উচিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে। স্কুলে শিক্ষাত্রীদের আচরণ এবং অন্যের সাথে তাদের সম্পর্কের দিকনির্দেশনার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ের নির্ধারিত নিয়ম শৃংখলাসহ আচরন বিধীর নিয়ম বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্কুল সংস্কৃতি এবং স্বকীয় আচরনবিধী শিক্ষাত্রীর স্বতন্ত্র মূল্যবোধ, রীতিনীতি এবং সংষ্কৃতিক অতিহ্যকে ধারন এবং লালন করতে সহায়ক হবে 
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি শিশুদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান, কারণ তারা স্কুলে অনেক সময় ব্যায় করে। অতএব, বিদ্যালয়ের শিশুদের আচরণকে প্রভাবিত করার এবং একটি নৈতিক মানসিকতা তৈরি করার বিস্ময়কর শক্তি রয়েছে। বাচ্চাদের মন বিশুদ্ধ, পরিষ্কার এবং স্পঞ্জের মতো। তাদের মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে আলাদাভাবে কাজ করে। শিশুরা তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা প্রভাবিত হয় বেশী। সুতরাং, শিশুদের মধ্যে এই জাতীয় নৈতিক গুণাবলী বিকাশে স্কুলশিক্ষকরা আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন। শিক্ষকের একটি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি হলো জ্ঞানের বিশোধক: যে জ্ঞানের রসদ বিতরণ করে, বুজতে শেখায়, প্রচার করে এবং বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানদানে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে এবং সঠিক শিক্ষা দান করেন। তবে, আধুনিক শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকতা কেবল তথ্য বা জ্ঞান বিতরন করাই নয়, মূল্যবোধকে জাগ্রত করা এবং  নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষীত করাও প্রধান দায়িত্ব। শিক্ষকের ভূমিকা তাই বহুমুখী এবং বৈচিত্র্যময়। তবে আর্থসংস্কৃতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে শিক্ষকদের  জাতীয় ভূমিকা পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন। আমরা সকলেই এক অন্যরকম সামাজিক দ্বিধায় এবং দ্বন্দের মধ্য দিনাতিপাত করছি নানারকম সমস্যার কারনে। সমস্যাগুলি কখনো কখনো বিপরীতমূখী এবং অনেক ক্ষেত্রেই জটিল। তাই বর্তমান পরিস্থিতিকে উপলদ্বি করেই শিক্ষকের ভূমিকা বিবেচনা করা দরকার। শিক্ষকের ভূমিকাটির পুনর্বিবেচনা করা সহ বর্তমান ফোকাসটি বিশেষত শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে মোকাবেলা করতে শিক্ষকের ভূমিকাটিকে আরও প্রশস্ত করতে হবে এবং সাথে সাথ শিক্ষকদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভংগি সহ শ্রদ্বা, গুরুত্ব এবং সন্মানজনক আর্থিক কাঠামোর ব্যাবস্থা রাখতে হবে।
শিক্ষকরা অনেক বেশি অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষা এবং জ্ঞান সরবরাহ করতে পারেন যা থেকে শিক্ষার্থীরা আরও উৎসাহ এবং অনুপ্রেরনা পেতে পারে যা ভবিৎষত কর্মজীবনের বিকাশকে প্রবাহিত করতে পারে। অন্যের প্রতি এবং সামাজিক এবং পেশাগত জীবনের সমস্ত দিক সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব গঠনের গুরুত্বকে শক্তিশালী করতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আচরণকে আরও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারেন। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক এবং বন্ধুপ্রতীম সম্পর্ক শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক, সামাজিক, মানষিক এবং নৈতিক দক্ষতাগুলি সহজেই বাড়িয়ে তুলতে পারে
একটি জাতীর সার্বিক বিকাশ এবং অগ্রগতিতে অবদান রাখার জন্য একটি বুদ্ধিমান, মেধাবী, নৈতিক এবং সুস্থ প্রজন্মের গুরুত্ব অপরিসিম। শিক্ষাপ্রতিষ্টানগুলি শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের এক উত্তম স্থান যেখানে তরুণ মনকে লালন, বিকাশ, এবং তাদের  আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রুপ দিতে সমর্থন যোগাতে পারে। শিশুদের শিক্ষাগত কৃতিত্বের উপর স্কুলগুলির প্রত্যক্ষ  অপ্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে বিষেশ করে শিশুদের সামাজিক এবং নৈতিক বিকাশে। আধুনিক যুগে যুবকদের নৈতিক শিক্ষার ধারণা একা বিদ্যালয়ের জন্য একটি জটিল কাজ, যদি না তারা নৈতিক শিক্ষা এবং পিতামাতাদের সহ একটি শক্তিশালী জাতীয় নীতির দ্বারা সম্পূর্ণরূপে সমর্থন  পরিচালিত না হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সৎ শিক্ষাব্যবস্থার পরিবেশ তৈরি করতে স্কুলগুলিকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া অত্যাবশ্যক:
) শিক্ষাপ্রতিষ্টানের মুল্যবোধ সংশ্লিষ্ট নিয়মগুলি কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করতে একটি টেকসই স্কুল-কমিউনিটি ভিত্তিক ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে। এই ঐক্যমত ছাড়া স্কুলগুলির পক্ষে কোনও শিক্ষামূলক কর্মসূচি কার্যকর করা খুব কঠিন। স্কুলগুলির উন্নত মান সংক্রান্ত গুনাবলী অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ার পিছনে আমরা অনেকগুলি কারন প্রত্যক্ষ করেছি। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া থেকে শুরু করে; পরীক্ষায প্রতারণা করা,  Final পরীক্ষায় চৌর্যবৃত্তিমূলক (plagiarised) উপকরণ জমা দেওয়া সবকিছুই হরহামেষাই আমরা লক্ষ্য করছি। যখন তারা ধরা পড়ে এবং স্কুলগুলি তাদের শাস্তি দেয়, তখন পিতামাতারা তাদের সন্তানদের রক্ষা করতে আসেন, কোন কোন ক্ষেত্রে নিজস্ব ক্ষমতার অপব্যাবহারেও লিপ্ত হন, ধমক দেন বা অনৈতিক প্রন্থা অবলম্বন করেন। এইরকম পরিস্থিতিতে, কি করে আমরা আশা করতে পারি যে শিক্ষার্থীরা স্কুলগুলির সততার মানকে গুরুত্ব সহকারে নেবে। অতএব, পিতামাতা এবং কমিউনিটি নেতাদের জড়িত করে একটি শক্তিশালী এবং বাস্তববাদী স্কুল-কমিউনিটি ভিত্তীক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। স্কুলগুলির সামাজিক মূল্যবোধের একটি তালিকা চিহ্নিত করে তাদের নৈতিক বিকাশের পুনর্গঠন করা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্টান, কমিউনিটি এবং পিতামাতার মধ্যে এই ধরনের ঐক্যমত শিক্ষাত্রীদের প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে এবং মূল্যবোধ বজায় রাখতে স্কুলের মনোবলকে বাড়িয়ে তুলবে।
() প্যারেন্টাইল সাপোর্ট গ্রুপ এর মাধ্যমে পিতামাতার আরও অংশগ্রহণ বিশেষ করে বিভীন্ন শিক্ষামূলক কর্মশালা এবং ক্রিয়াকলাপে সংপৃক্ত করা অত্যন্ত জরুরী  আজকের মোবাইল সামাজিক কাঠামোতে যেখানে পরিবারগুলি একে অপরের থেকে বেশি বিচ্ছিন্ন থাকে সেক্ষত্রে অনেক শহুরে অঞ্চলে, এমনকি আমাদের প্রতিবেশীদেরকেও আমরা খুব ভালভাবে  জানি না। অতএব, স্কুলগুলি আমাদের সবাইকে একটা শেয়ার্ড প্লাটফর্মে যুক্ত করতে পারে যেখানে পিতামাতা বা অভিবাবকরা আমাদের আগ্রহ, চিন্তা-চেতনা এবং মূল্যবোধগুলি বিনিময় করতে পারে। বাচ্চাদের মানসিকতা বিকাশে তাদের এই ধরনের মুল্যবোধের অভিজ্ঞতা পিতামাতারা প্রয়োগ করতে পারবেন এবং নিজেরাও আরও উৎসাহ বোধ করবেন। পিতামাতাদের বা অভিবাবকদের বিভীন্ন  প্যারেন্টিং কোর্সে অংশ নিতে বা বিভিন্ন নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কিত ওয়ার্কশপে  অংশগ্রহন করাতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। 
শিক্ষার্থীদের সার্বিক মানবিক বিকাশে একটি নিয়মতান্ত্রিক, অংশগ্রহনকারী, ইতিবাচক এবং ঐক্যমত প্রক্রিয়ার অত্যাবশ্যক যার মাধ্যেমে স্কুল এবং পিতামাতার প্রত্যাশাগুলি পূরনের জন্য একটি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহন করা যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্টানগুলিই পারে একটি নৈতিকতাপূর্ন শিক্ষার পরিবেশ তৈরী করতে যা নীতিশাসন, শৃঙ্খলা, সম্মান, প্রতিশ্রুতি এবং সবার জন্য বৈজ্ঞানিক শিক্ষায় মনোনিবেশ করার উপযুক্ত স্থান। আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে শিশুরাই জাতীয় অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির মেরুদণ্ড।

Leave your review