চরিত্র: শিক্ষার শেষ লক্ষ্য

যে কোনও শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের আরও স্বাধীন, কৌতূহলী, খোলামনের, এবং মুক্তমনে ব্যাতিক্রমী চিন্তা করতে উত্সাহিত করা। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত শিক্ষণার্থীদের বুনিয়াদি এবং সময়োপষোগী শিক্ষায় তৈরি করার সার্বিক প্রয়াস, ষা প্রতিটি শিক্ষার্থিকে পেশাদারিত্ব, এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনে যোগ্য এবং অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ করবে। শিক্ষাব্রতী ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিশ্চিত করা উচিত যে, শিক্ষার পরিবেশটি স্বাধীন চিন্তার পক্ষে উপযুক্ত যেন হয় এবং এটি এমন একটি পরিবেশ যেখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে প্রশ্ন করা থেকে শুরু করে, সৃজনশীল ধারণা তৈরি এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকে প্রকাশ করতে উ্যসাহিত বোধ করে। আমার ছেলেবেলায় স্কুলে সৃজনশীলতার কোন চর্চা ছিল না। শিক্ষা হওয়া উচিত জীবন বিকাশের প্রক্রিয়া। শিক্ষা প্রসংগে রবীন্দ্রনাথ দৃঢ়তার সংগেই তাই বলেছিলেন ‘চিন্তাশক্তি এবং কল্পনাশক্তি জীবনযাত্রা-নির্বাহের পক্ষে দুইটি অত্যাবশ্যক শক্তি তাহাতে আর সন্দেহ নাই। অর্থাৎ যদি মানুষের মতো মানুষ হইতে হয় তবে ওই দুটো পদার্থ জীবন হইতে বাদ দিলে চলে না। অতএব বাল্যকাল হইতে চিন্তা ও কল্পনার চর্চা না করিলে কাজের সময় যে তাহাকে হাতের কাছে পাওয়া যাবে না এ কথা অতি পুরাতন।’ তাই আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নৈতিক চরিত্র।

আমরা সর্বদা শিক্ষার দক্ষতা, মানসম্মত শিক্ষা এবং শেখার অনুশীলন, শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থী, একাডেমিকভাবে সুদক্ষ শিখার বিষয়ে কথা বলি,  কিন্তু তাদের শিক্ষামূলক যাত্রার শেষে যে ব্যক্তির চরিত্রটি বিকশিত হয় সে সম্পর্কে কখনই কথা বলি না। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা বর্তমান শিক্ষানীতি বা নীতিমালার বিতর্কে প্রায় বিদ্যমান নয় বললেই চলে; যদিও কেউ কেউ এই নিয়ে কখনো সখনো সভা সেমিনারে কথা বলে থাকেন, তবে এটি অত্যন্ত উঁচু মার্গের যা সাধারন জনগনের বোধগম্য নয় বা তা অস্পষ্ট। প্রতিটি জাতি তার জাতীয় আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ শিক্ষা, বিশেষত একাডেমিক গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, পরিচালনার জবাবদিহিতায়, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন এবং অন্যান্য একাডেমিক-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপে ব্যয় করে। কিন্তু আমরা কি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করেছি? বিশেষ করে এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনে যথেষ্ট শক্তিশালী কিনা তা আমরা কখনো কি মূল্যায়ন করেছি বা করছি?

সমাজের যে সমালোচনামূলক প্রশ্নগুলির সমাধান করা উচিত তার মধো মুখ্য হ'লো: শিক্ষার শেষ লক্ষ্য কী? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এবং শিক্ষাব্রতীরা প্রশিক্ষণার্থীদের চরিত্র এবং সৃজনশীলতার বিকাশে বা সামগ্রিক সত্তার বিকাশে কী সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং নীতি নির্দেশনা দেওয়া উচিত? শিক্ষার শেষ লক্ষ্যগুলি যথা বুদ্বিবৃত্তিমূলক চরিত্র (intellectual character), নৈতিক চরিত্র (moral character), নাগরিক চরিত্র (civic character) এবং পারফরম্যান্স চরিত্রগুলির বিকাশের দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে কিনা। এই মানবিক গুনাবলীর সার্বিক সমন্বয়ে একজন ব্যক্তি হয়ে উঠবে যোগ্য, উচ্চ মনোবলসম্পন্ন এবং সুশিক্ষিত সত্যিকারের নাগরিক।

আমরা কী ভাবি না যে আমরা সকলেই এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার সন্ধান করছি যার প্রভাবে একজন নাগরিক স্বতন্ত্র আত্মবিশ্বাসের সাথে বাড়তে পারবে? যে শিক্ষা ব্যাবস্থা শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশসহ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, সঠিক ধর্মীয় মনোভাব এবং সামাজিক গুণের বিকাশ সাধনে সহায়ক হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নীতিনির্ধারক বা শিক্ষাবিদ হিসাবে আমরা সকলেই যেন শিক্ষাত্রীর চরিত্রের দিকে সঠিকভাবে মনোনিবেশ করি এবং ত্ৎ সাপেক্ষে শিখার বিষয়বস্তু ও পাঠ্যক্রম তৈরিতে আগ্রহি হই। বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী টেকসই শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। বাস্তবের জগতটি কখনও কখনও আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে যা শিখেছি তার থেকে সম্পুর্ন আলাদা। পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান থেকে যা শিখেছি তা প্রায়শই সহজেই ভুলে যাই বা আসল পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে অক্ষম। তবে ইতিবাচক মনোভাব, অভ্যাস, আমাদের অভিজ্ঞতা, অতীত মিথস্ক্রিয়া, সুশীল চিন্তাভাবনা এবং বিভিন্ন বাস্তবতার অভিজ্ঞতাগুলি অধিকাংশেই থেকে যায় এবং আমরা দ্রুত এইসব প্রায়োগিক গুনাবলীকে একটি নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে পারি। তাই মানবিক বিকাশে নৈতিক এবং প্রায়োগিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।

 শিক্ষার্থীদের আরও কৌতূহলী, স্ব-প্রতিবিম্বিত, সৃজনশীল, মুক্তমনা, সত্য-সন্ধানী, সংশয়ী (sceptical) ও সমালোচক চিন্তাবিদ হওয়ার জন্য বুদ্বিবৃত্তিমূলক চরিত্রের (intellectual character) বিকাশ অপরিহার্য। এই জাতীয় চরিত্র বিকাশরের শিক্ষা শিক্ষাত্রীদের মনের দৃঢ়তা, অভ্যাস, সৃজনশীল এবং মৌলিক চিন্তার নিদর্শন গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। আফসোস, পিতা-মাতা, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং নীতিনির্ধারক সহ আমরা সকলেই সর্বদা শিক্ষার্থীদের এবং প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পারফরম্যান্স, শিক্ষার্থীর দক্ষতা/মেধা এবং চূড়ান্ত পরীক্ষায় গ্রেডিংয়ের দিকে সবচেয়ে বেশি মনোনিবেশ করি। সুতরাং, আমাদের শিক্ষণ এবং শেখার পদ্ধতিগুলি মূলত একাডেমিক অগ্রগতি-ভিত্তিক; নির্দিষ্ট বিবরণ এবং পদ্ধতি মুখস্থ করার এক প্রবনতা। এই জাতীয় শিক্ষা অন্তত সার্বিক জীবন বিকাশের প্রক্রিয়ায় তেমন কাজে আসে না।

একাডেমিক অগ্রগতির সাথে আমার কোন মতবিরোধ নেই; বরং আমি অস্পষ্টতার সাথে পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান সংগ্রহের চেয়ে  বুদ্বিবৃত্তিমূলক চরিত্র  এবং মানবিক/নৈতিক চরিত্র বিকাশকে শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য হিসাবে গড়ে তোলার বিষয়ে আরও মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিচ্ছি। এই জাতীয় মনোভাব শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে (cross domain)সঠিক জ্ঞান এবং সামগ্রিক সত্তার বিকাশে সহায়তা করবে। সত্য-সন্ধানী, কৌতূহলী এবং উন্মুক্ত মনের শিক্ষার্থীরা  এই জাতীয় শিক্ষাকে বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারবে। পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান খুব সংকীর্ণ এবং নির্দিষ্ট। পাঠ্যপুস্তক জ্ঞান সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছিলেন, ‘মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়াছে’।

সুতরাং, বুদ্বিবৃত্তিমূলক চরিত্রের বিকাশের জন্য নিখুঁতভাবে আরও বেশি বৈজ্ঞানিক এবং অনুসন্ধান পদ্ধতিতে শেখানো উচিত। চরিত্রের আরেকটি বিষয় হ'ল সমস্ত শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা। মৌলিক এবং প্রায়োগিক শিক্ষার  দর্শনটি যেন তরুণদেরকে সক্ষম, নৈতিকতাবাদী, পুণ্যবান এবং যত্নবান হতে সহায়তা করে। একজন সৎ নাগরিক ভুলের চেয়ে সঠিক বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দেবেন। নৈতিক শিক্ষা একটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে থেকেই শুরু করা উচিত। শ্রদ্ধা, অখণ্ডতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, সততা এবং মর্যাদা সমাজের গুণী নাগরিক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য এবং আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় এই জাতীয় উপাদানগুলিকে স্বীকৃতি এবং সংপৃক্ত করা উচিত।

আমরা আজ সকলেই বিশ্বজুড়ে এমন একটি প্রবণতা প্রত্যক্ষ করছি যা হ'লো সম্পর্ক, পারিবারিক বন্ধন, সততা ও ভদ্রতা, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, নিঃস্বার্থতা, একাত্মতা প্রভৃতি মহৎ মূল্যবোধের অবক্ষয়। এই মানবীয় মূল্যবোধগুলোকে ফিরিয়ে আনতে কি কোনও উপায় নেই? হ্যাঁ, কেবলমাত্র একটি চরিত্র গঠনের শিক্ষাব্যবস্থা (Character education)যা সামগ্রিক মানষিক বিকাশের পরিপূরক হবে। জাতীর পুনর্জাগরণের জন্য এ জাতীয় শিক্ষা ব্যাবস্থা আবশ্যক। আড়াই হাজার (2500) এরও বেশি বছর আগে, কনফুসিয়াস বলেছিলেন যে “মানুষের মধ্যে সকল সম্ভাবনা রয়েছে পরিপূর্ন ভাবে বিকশিত হওয়ার। তবে যদি এ সম্ভাবনাকে চরিত্রগত শিক্ষার (character education) দ্বারা পরিচালিত না করা হয় তবে একই মানুষ অতি ভয়ানক নৃশংস পশুতেও পরিণত হতে পারে”। চরিত্র শিক্ষার ব্যবস্থা পদ্ধতিগতভাবে করা উচিত এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার থেকে শুরু করা উচিত। 

বর্তমান এবং বিগত শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দ্বারা বিশ্ব উন্নতি সাধন করেছে এবং অর্থনৈতিক বিকাশ সহ নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা অব্যহত রেখেছে। আমরা সকলেই এই অভূতপূর্ব বিকাশ প্রত্যক্ষ করেছি, আমরা দেখছি মঙ্গল গ্রহ এক্সপ্লোরেশন রোভার মিশন, জানতে পারছি মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিকবিশ্বের নানা অজানা তথ্য, মানব জিনোম সিস্টেমসহ বিপজ্জনক করোনা ভাইরাস। কিন্তু সাথে সাথে এও দেখছি দেশগুলি একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় জিডিপির যথেষ্ট অংশ বিনিয়োগ করছে এবংএকে অপরের সাথে লড়াই করে  বিশ্বকে বিশৃঙ্খলায় আনার দৌড়ে পমত্ত রয়েছে। বিগত কয়েক দশক ধরে, আমরা বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অবক্ষয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মীয় ও বর্ণ বিচ্ছিন্নতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, জাতিগত নির্মূলকরণ, ঘৃণা এবং জাতীয় বিদ্বেশের লাগামহীন উদ্ধগতি, মানুষের অপরাধ ও অন্যায় সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা লক্ষ করছি। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সম্পদ সৃষ্টি, ব্যক্তিত্ব ও জাতীয় অর্জন, স্বার্থ পূরণ করা এবং নৈতিকতা উপেক্ষা করে শীর্ষস্থান অর্জন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। এর জন্য বর্তমান বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থাই অনেকাংশে দায়ী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯২ সালে তাঁর "শিক্ষার হেরফের" প্রবন্ধে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন এবং তাঁর সময়ে স্কুলগুলিকে "কারাগার" বলে অভিহিত করেছিলেন। প্লেটোর মতে, সুশিক্ষা এবং নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সামাজিক উভয় ন্যায়বিচার অর্জন করা যায়। এই সামাজিক ন্যায়বিচারটি তখনই পাওয়া যায় যখন কোনও ব্যক্তি তার দক্ষতার পরিপূর্ণ উন্নতি করে। প্লেটোর পক্ষে এই জাতীয় ন্যায়বিচারকে শ্রেস্ঠ এবং পুণ্যবান  হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সক্রেটিসের মতে যখন শিক্ষাব্যবস্থা অর্থনৈতিক দিক থেকে সামাজিক অগ্রগতির ইঞ্জিনে পরিণত হয়, তখন এই জাতীয় সমাজগুলি সামাজিক ভাবে মারাত্মক অন্যায় এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। সামাজিক সম্প্রীতি ও জাতীয় সমৃদ্ধি আনার জন্য আধুনিক শিক্ষাকে প্লাটোনিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা (according to Plato)পরিচালিত করতে হবে।

আধুনিক শিক্ষার শিক্ষাগ্রহণে শিক্ষার্থীরা যে-চরিত্রের বিকাশ করে তার গুণগত মানের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। আমাদের সকলকে অবশ্যই বিশ্ব সামাজিক ব্যবস্থা এবং মানবিক মূল্যবোধগুলি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। সমসাময়িক বিশ্বটি অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের অনুমান, লোভ, মিথ্যাবাদ, অবিশ্বাস, দ্বন্দ্ব, ও লোভের ভিত্তিতে তৈরি। শ্রদ্ধা, মর্যাদা, ভালবাসা, নৈতিকতা এবং বিশ্বাস সমস্ত অবহেলিত। আমরা মানবিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের এক অভূতপূর্ব অবক্ষয়ের সাক্ষী। তা সত্ত্বেও, আমরা কি কখনও এই নৈতিক অবক্ষয় সম্পর্কে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছি? আমরা কি আমাদের শিশু শিক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্যটির বিষয়টি উত্থাপন করেছি? 

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র মন্তব্য করেছিলেন যে শিক্ষার উদ্দেশ্য হ'ল "বুদ্ধিমানের চরিত্র গঠন করা”। তার জন্য, সুশিক্ষা কেবলমাত্র একাগ্রতার শক্তিই দেয় না তবে সেই লক্ষ্যে যে মনোনিবেশ করা যায় তার উপযুক্ত উদ্দেশ্য প্রদান করে। শিক্ষার একটি অপরিহার্য লক্ষ্য হ'ল শিক্ষার্থীদের নৈতিক অভ্যাস, বৈজ্ঞানিক দক্ষতা এবং সার্বিক মানষিকতার বিকাশ করা। পিতা-মাতা থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারকগণ, শিক্ষক এবং সমাজের আমরা সবাই জাতি গঠনের জন্য দায়বদ্ধ। পিতামাতা হিসাবে, আমাদের একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং পরীক্ষার গ্রেডের চেয়ে আমাদের সন্তানের চরিত্র গঠনে মনোনিবেশ করা উচিত। একজন শিক্ষিক হিসাবে, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিক ও মান-ভিত্তিক তাত্বিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা প্রদানের আকাঙ্ক্ষা রাখতে হবে। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে আমাদের অবশ্যই একটি উন্নতমানের মানবিক বিকাশে সহায়ক পাঠ্যক্রম সরবরাহ করতে হবে যা চরিত্র শিক্ষার (character education) উপর ভিত্তি করে তৈরি। চরিত্র গঠনের শিক্ষাকে যেন জাতীয় শিক্ষানীতির অন্তরভুক্ত করা হয় তাতে সরকারের মনোনিবেশ করা উচিত। আমাদের যুবকরা যাতে শিক্ষাব্যবস্থার সত্যিকার লক্ষ্য অর্জনে সফল হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা সবাই চরিত্র গঠনের ক্রিয়াকলাপকে অগ্রাধিকার দিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করতে হবে দৃঢ়তার সাথে-এই।

Leave your review